ঢাকা ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ব্যয় হবে সাড়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা

কক্সবাজারে কাল ১৩ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

তিন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর
কক্সবাজারে কাল ১৩ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

কক্সবাজারবাসীর স্বপ্ন পূরণের দিন আগামীকাল। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করতে যাচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কক্সবাজার রেললাইনের।

আর সেই স্বপ্নের রেললাইনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করছেন আরো ১৩টি প্রকল্প। যে উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা। একই দিন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রায় ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ প্রকল্পের কাজ। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্য বলছেন, রেললাইন ছাড়া প্রধানমন্ত্রী যে ১৩টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন তাতে রয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধিনে নির্মিত মাতারবাড়ী ১২ শত মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সংযুক্ত। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটে ৫৯৫ মিটার পিসি বক্স গর্ডার ব্রিজ নির্মাণ, কক্সবাজার সদরের খাল লাইনিং এপ্রোচ রোড ও ব্রিজ। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ৪টি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৪টি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ১ প্রকল্প।

মাতারবাড়ী ১২ শত মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর অন্যতম মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি জাপানের আর্থিক সহায়তার ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম।

১২ শত মেগা ওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু হয় ২৯ জুলাই দুপুরে। ৬ মেগা ওয়াটের পরীক্ষামূলক উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এটি ১২ মেগা ওয়ার্টের উৎপাদন শুরু করে অক্টোবরের শুরুতে।

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনওয়ার হোসেন মজুমদার। তিনি জানান, উৎপাদিত এই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। মহেশখালী উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নের মাঝামাঝি ১ হাজার ৬০৮ একর জমির ওপর স্থাপিত হচ্ছে দুটি ইউনিটে বিভক্ত ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটি কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিএল) বাস্তবায়ন করে।

প্রকল্পের নথিপত্রে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে অনুমোদন পাওয়া মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিকিটক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার’ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। সংশোধন করে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৫১,৮৫৪.৮৮ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে আগে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা) দেওয়ার কথা ছিল ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। এবার সেই ঋণ বাড়িয়ে জাইকা মোট ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা দেয়। আর প্রকল্পটিতে সরকারি তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হয় ৬ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা।

সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সংযুক্ত :

স্বাধীনতার ৫২ বছরে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় প্রথমবারের মতো বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয় গত ১৩ এপ্রিল। আগের দিন ১২ এপ্রিল রাত থেকে দ্বীপটির দেড় হাজার গ্রাহক পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ সুবিধা পেতে শুরু করে।

প্রকল্পটির পরিচালক ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ জানান, দ্বীপতে ১৯৮০ সালে জেনারেটরের মাধ্যমে সান্ধ্যকালীন কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। ওই দেড় হাজার গ্রাহককে প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ চালু করা হয়। আবেদন করা ২০ হাজার গ্রাহককে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০২০ সালে দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন’ প্রকল্পটির মেয়াদকাল ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগেই দ্বীপটিতে পৌঁছে গেল জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ।

প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ জানান, প্রকল্পের অধীনে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে কুতুবদিয়া। বিদ্যুৎ নিতে সাগরতলে দুই লেনে গেছে দীর্ঘ ৬ কিলোমিটার ক্যাবল। ওখানে ১২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন উপকেন্দ্র, ৭২০ কিলোমিটার সঞ্চালন বিতরণ স্থাপন হয়েছে।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মৃদুময় চাকমা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের ৪টি বিদ্যালয়ের ভবন উদ্বোধন করবেন। এই গুলো হল, কক্সবাজার সদরের (ঈদগাঁ) জাহারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, মহেশখালীর ইউনুসখালি নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, উখিয়ার রত্নাপালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন। নির্বাহী প্রকৌশলী মৃদুময় চাকমা আরো বলেন, এই উপলক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটে ৫৯৫ মিটার পিসি বক্স গর্ডার ব্রিজ :

এলজিইডি কর্মকর্তারা জানিয়েছে, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কস্তুরাঘাট সংলগ্ন বাঁকখালী নদীর উপর নির্মিত হচ্ছে ‘কক্সবাজার-খুরুশকুল’ সংযোগ সেতু। দীর্ঘ ‘প্রিস্টেইট বক্স গার্বার সেতু’। ৫৯৬ মিটারের এই সেতুর ব্যয় হচ্ছে ২৫৯ কোটি টাকা। সেতুটির আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের গত ১ সেপ্টেম্বর। সেতুটি ২০২১ সালের ২১ আগস্টের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারি ও নানা জটিলতায় শেষ হতে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত লেগেছে।

প্রকল্প বাস্তয়ানকারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি’র কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান বলেন, কক্সবাজার জেলাটা পর্যটন নগরী। সারা বিশ্বের কাছে পর্যটন নগরী হিসেবে পরিচিত কক্সবাজার জেলাটা। কক্সবাজার শহরের উত্তর পাশে বাঁকখালী নদী প্রবাহমান। এই বাঁকখালী নদীর পাড়েই যেই জায়গাটার মধ্যে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে সেটা ময়লার ভাগাড় পরিণত ছিল। সেই জায়গায় এখন একটি দৃষ্টিনন্দন সেতু এলজিইডির মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়েছে এবং গুণগত মানের বিষয়ে জিরো টলারেন্স রেখে আমরা এই সেতুটি নির্মাণ করেছি। এই সেতুটি নির্মাণের ফলে যে বিষয়টা আমাদের নতুন মাত্রা যোগ করেছে সেটি হলো পর্যটনশিল্প এবং আরেকটা দিক থেকে কক্সবাজার শহরকে সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রে এই সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান আরো বলেন, কক্সবাজার শহরের উত্তর দিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে এখানে রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ চলছে। সেখানে যারা উদ্বাস্তু হিসেবে ছিলেন তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিচ্ছে বর্তমান সরকার। সেক্ষেত্রে ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবারকে খুরুশকুল প্রান্তে তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারাও এই সেতুটি ব্যবহার করে খুব সহজেই কক্সবাজারে তাদের নিত্যদিনের কার্যক্রম করতে পারবে। মূলত এই উদ্দেশ্যেই এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এই সেতুটি নির্মাণের ফলে নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার সঙ্গে দূরত্ব কমে যাবে। চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের দূরত্ব অনেক কমে যাবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রায় সাড়ে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রামু কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার সদরের খাল লাইনিং এপ্রোচ রোড ও ব্রিজ। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ৪টি প্রকল্প। যেখানে রয়েছে ৪ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিল ঠান্ডা চৌকিদার পাড়ার ৬০ মিটার সিসি গর্ডার ব্রিজ, ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চকরিয়া বাস টার্মিনাল সম্প্রসারণ প্রকল্প, উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প, সাড়ে ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে গোরকঘাটা সড়ক প্রশস্তকরণ। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন ৬৭ কোটি টাকার টেকনাফ মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার রিসিলেন্ট শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার, রামুর নন্দাখালী ১৮৪ মিটার আর্চ আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ প্রকল্প।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত