ঢাকা ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

ফিলিপাইনের ব্ল্যাক সুগার কেইন চাষে বাজিমাত

ফিলিপাইনের ব্ল্যাক সুগার কেইন চাষে বাজিমাত

ফিলিপাইনের ব্ল্যাক সুগার কেইন চাষ করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বোয়ালি গ্রামের বোয়ালী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক এসএম শফিকুল ইসলাম। কলেজের অধ্যাপক হলেও কৃষিকাজ তার নেশা। শিক্ষকতার পাশাপাশি অবসর সময়টুকু কৃষি কাজের সঙ্গেই নিয়োজিত রাখেন নিজেকে। কৃষিকাজ যেন তার ধ্যান-জ্ঞান। প্রতি বছর বিভিন্ন ফসল আবাদ করলেও গত বছর তিনি তার নিজ জমিতে আবাদ করেন ফিলিপাইন জাতের আখ ‘ব্ল্যাক সুগার কেইন’। শফিকুল ইসলাম ৮৭ শতাংশ জমিতে আবাদ করেছেন ফিলিপাইন জাতের কালো আখ। তিনি সখীপুর উপজেলার বোয়ালি পূর্বপাড়া এলাকার মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা সরাফত আলী মাস্টারের ছেলে। ইউটিউব দেখে ফিলিপাইন জাতের এই কালো আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। ২০২২ সালে ডিসেম্বরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চারা সংগ্রহ করে আখ চাষ শুরু করেন। সরেজমিন দেখা যায়, সখীপুর উপজেলার বোয়ালি মধ্যপাড়া এলাকায় প্রায় ৮৭ শতাংশ জমিতে ফিলিপাইনের জাতে আখ ব্যাক সুগার কেইন আবাদ করেছেন। অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের আবাদ করা ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ এখন তার বাগানে শোভা পাচ্ছে। আখ লম্বায় বড় হওয়ায় যেন ভেঙে না যায় সে জন্য বাঁশ-রশি দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। আখগুলো সাধারণভাবে দেখতে দেশীয় আখের মতো হলেও ভিন্নতা রয়েছে। আখের গোড়া থেকে পুরো কান্ড মোটা ও নরম। আঙুলে একটু চাপ দিলে রস পাওয়া যায়। রস যেমন রয়েছে, তেমনি মিষ্টিও বেশি। আখের গায়ের রং কালো হলেও ভেতরের রং সাদা। লালচে বা কালো খয়েরি বা কালো রঙের আখটি চাষের পর আশপাশের গ্রামের লোকজন দেখতে ভিড় করছেন। অধ্যাপক এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি শিক্ষকতা করি। শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষিকাজ করা আমার নেশা। ইউটিউবের মাধ্যমে ফিলিপাইন জাতের আখ ব্ল্যাক সুগার কেইন সম্পর্কে জানতে পারি। শখের বসে প্রথমে ফিলিপাইন জাতের আখ চাষ করতে আগ্রহী হই। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রায় ৭ হাজার ২০০টি চারা ক্রয় করি। গত বছর নিজের ৮৭ শতাংশ জমিতে ফিলিপাইন জাতের আখ চাষ শুরু করি। ফিলিপাইন জাতের ব্ল্যাক সুগার কেইনের চারা ক্রয় ও রোপণ করতে আমার খরচ হয় প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো। প্রতিটি আখ ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। এ বছর দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আমি আশা করছি ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব। তিনি আরো বলেন, ফিলিপাইন জাতের ব্ল্যাক সুগার কেইন অল্প সময়ের ভেতরে কাটা যায়। আখগুলো যথেষ্ট লম্বা মোটা হয়। আখের রসের পরিমাণ বেশি। অন্য কিছুর সাথে বেঁধে রাখতে হয়। সাধারণ আখের চেয়ে এই আখের রস প্রায় দ্বিগুণ ও যথেষ্ট পরিমাণ মিষ্টি রয়েছে রসে। যেকোনো জায়গায় ও যেকোনো জমিতে ব্ল্যাক সুগার কেইন আবাদ করা যায়। পাহাড়ি অঞ্চল বলি আর নিম্নাঞ্চল বলি, যেখানে ১৫ দিন পর্যন্ত পানি না থাকে, সে ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি জায়গায় এই আখ চাষ করা যাবে। অল্প জমিতে অধিক পরিমাণ লাভ এই আখ আবাদে করা যায়। তিনি বলেন, আমাদের দেশের যত কৃষক আছেন। যারা অল্প বয়সি ও যুবকরা চাকরির পেছনে ঘুরেন, তারা চাকরির পেছনে না ঘুরে এই আখের পেছনে ঘুরেন। কৃষিকাজে অল্প সময় ব্যয় করেন, আমার মনে হয় তারা লাভবান হবেন। আমি আহ্বান জানাচ্ছি এই ফিলিপাইন জাতের আখ যদি সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায় এবং সঠিকভাবে আবাদ করা যায়, অবশ্যই দ্বিগুণ পরিমাণ লাভ করা সম্ভব। দেশের বিভিন্ন জেলাসহ নিজ এলাকার মানুষরা অর্ডার করে ফিলিপাইন জাতের আখের চারা কিনে নিচ্ছেন। স্থানীয় কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি জানতাম না ফিলিপাইন জাতের আখ ব্ল্যাক সুগার কেইন এত লাভজনক। আমি পরিকল্পনা করেছি এই আখ আমার জমিতে আবাদ করব। আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে এই আখ খুবই লাভজনক। স্থানীয় আরেকজন কৃষক সদর আলী বলেন, এই পাহাড়ি এলাকায় আখ এত ভালো হয়, আমি কোনো সময় ভাবিনি। আমি ১ বিঘা জমিতে ফিলিপাইন জাতের ব্ল্যাক সুগার কেইন আবাদ করব। এই আখের দামও বেশি। খেতেও সুস্বাদু, লম্বাও হয় অনেক। প্রতিটি আখ ৮০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মোহাম্মদ দুলাল উদ্দিন জানান, সখীপুরে ফিলিপাইন জাতের আখ আবাদ হচ্ছে। অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম এই আখ আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। তাকে দেখে উদ¦ুদ্ধ হয়ে অনেক কৃষক এই আখ আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন। আশা করছি, এই আখ আবাদ করলে অন্য কৃষকরাও লাভবান হবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত