নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৩তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৮ সালের এই দিনে তিনি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের দৌলতপুর গ্রামের নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ একাধারে ছিলেন নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, কবি ও গীতিকার। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্য লেখক। হুমায়ূন আহমেদ ‘নন্দিত নরকে’ এবং ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘বাদশা নামদার’সহ দুই শতাধিক উপন্যাস লিখেছেন। তার রচিত ‘হিমু’, ‘শুভ্র’, ‘মিসির আলি’র মতো অনবদ্য চরিত্র। আশির দশক থেকে শুরু করে তার নির্মিত ‘বহুব্রীহি’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’র মতো নাটকগুলো বর্তমান প্রজন্মের কাছেও এখনো একইভাবে জনপ্রিয়।
‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, সর্বশেষ ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মতো বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন বাংলাদেশের সাহিত্যের এই রাজা। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর সেখানেই মারা যান হুমায়ূন আহমেদ। মাত্র ৬৪ বছর বয়সেই তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। ২৪ জুলাই নুহাশপল্লীতে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় তাকে। হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
কেন্দুয়ায় নানা আয়োজন
আমাদের কেন্দুয়া (নেত্রকোনা)প্রতিনিধি জানান, বাংলা সাহিত্যের জননন্দিত কথাসাহিত্যিক, চলচ্চিত্র ও নাট্য নির্মাতা প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের ৭৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও নানারকম কর্মসূচির আয়োজন করেছে হুমায়ূন আহমেদের পিতৃভূমি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ। শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে হুমায়ূন স্যারের ৭৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের আয়োজন করেছি। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকালে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন, আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তিনি আরো বলেন, কুতুবপুর একটি প্রত্যন্ত পল্লী এলাকা। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় সুদীর্ঘকাল থেকে শিক্ষা বঞ্চিত ছিল এই এলাকার মানুষ। তাই হুমায়ূন স্যার তার মা আয়েশা ফয়েজের অনুরোধে এখানে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন এবং অবশেষে ২০০৬ সালে মাত্র ৪৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে হুমায়ূন স্যারের স্বপ্নের স্কুল শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ। বর্তমানে স্কুলটিতে ৩৪৮ জন ছাত্রছাত্রী এবং ১৮ জন শিক্ষক কর্মচারী রয়েছেন। প্রতিষ্ঠার একযুগ পর ২০১৯ সালে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করে সরকার।