সুসংবাদ প্রতিদিন
হিলিতে বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
কামরুল হুদা হেলাল, দিনাজপুর
হিলিতে প্রথমবারের মতো বস্তায় আদা চাষ করে লাভের আশা করছেন কৃষক রোকনুজ্জামান হোসেন। তার এই পদ্ধতিতে আদা চাষে খরচ কম ও লাভজনক হওয়ায় অন্য কৃষকেরও আগ্রহ বাড়ছে। এদিকে বস্তায় আদা চাষ সম্প্রসারণে আগ্রহী কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ। দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় ৭ হেক্টর জমিতে আদা চাষ করা হয়। কিন্তু এবারই প্রথম উপজেলার খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রামের কৃষক রোকনুজ্জামান সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতি বস্তায় করে আদা চাষ শুরু করেছেন। এদিকে তার এই বস্তায় করে চাষের পদ্ধতি দেখে স্থানীয় অনেক কৃষক আদা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কৃষক রোকনুজ্জামান হোসেন বলেন, ‘বাড়ির আশপাশে এক ইঞ্চি জমিও যেন পড়ে না থাকে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণায় আমি উদ্বুদ্ধ হই। এরপর আমি চিন্তা করি আমার যে লিচুর বাগান রয়েছে সেখানে একটি গাছ থেকে আরেকটি গাছের মাঝে ফাঁকা জায়গা রয়েছে। আগে শুনেছিলাম বস্তায় আদা চাষ হয়, যার কারণে সেই জায়গাতে আদা চাষ করি। স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে প্রাথমিক অবস্থায় ২৭০টি বস্তা ক্রয় করে গোবর, সার ও মাটি দিয়ে সেই বস্তায় আদা চাষ শুরু করি। প্রতিটি বস্তায় আদা চাষে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৫৫ টাকা। আর বস্তায় যে আদা গাছ হয়েছে তাতে করে প্রতি বস্তায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মতো আদা পাব বলে আশা করছি। এতে করে খরচ বাবদ ৫০ টাকা বাদ দিলেও বস্তা প্রতি আমার ২০০ টাকার মতো লাভ থাকছে। সেই সাথে আমার পরিবারের যে আদার চাহিদা, তাও মেটানো যাচ্ছে। এই পদ্ধতিতে আদা চাষে বাড়তি কোনো পরিচর্যা নেই। বস্তায় কোনো ঘাস গজায় না, এতে কোনো সার প্রয়োগ করতে হয় না। বস্তায় মাটি ও গোবর সার দিয়ে প্রথমে যে আদা চাষ করা হয়, এরপর আর কোনো সার দিতে হয় না। পতিত জমিতে এমনকি ছায়ার মধ্যেই বস্তায় আদা চাষ করা যাচ্ছে। এই আদা চাষ বেশ লাভজনক। আগামীতে দুই থেকে আড়াই হাজার বস্তায় আদা চাষ করাব। এরই মধ্যে সেই লক্ষ্যে গোবর সার ও মাটি প্রস্তুত করে ফেলেছি। আমার এই বস্তায় আদা চাষ দেখতে এলাকার অনেক কৃষক আসছেন পরামর্শ নিচ্ছেন। কীভাবে চাষ করা যায়, সে সম্পর্কেও শুনছেন। তারা এই পদ্ধতিতে আদা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এভাবে যদি সবাই বস্তায় আদা চাষ করেন, তাহলে নিজের পরিবারের চাহিদা যেমন মিটবে; তেমনি বাহির দেশ থেকে আদার আমদানি করতে হবে না। স্থানীয় কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বস্তায় আদা চাষ হয় এটি আমার জানা ছিল না। এমনকি আমি আগে কখনো দেখিনি। আমার জীবনে প্রথম দেখা রোকনুজ্জামান তার লিচুবাগানের ভেতরে বস্তায় করে আদা চাষ করেছেন। খুবই সুন্দর পদ্ধতি। বাড়ির উঠানে বা ছাদেও কিন্তু এই পদ্ধতিতে আদা চাষ করা সম্ভব। যার কারণে আমিও আগামীতে এই পদ্ধতিতে আদা চাষ করব। অপর চাষি সিদ্দিক হোসেন বলেন, রোকনুজ্জামানের বস্তায় আদা চাষ বেশ সুন্দর হয়েছে। এজন্য আমারও আগ্রহ এই পদ্ধতিটা দেখার জন্য। সে কারণেই তার বস্তায় আদা চাষের পদ্ধতি দেখতে এসেছি। এসে দেখি তিনি তার লিচুর বাগানের ভেতরে গাছের নিচে বস্তায় করে আদা চাষ করেছেন। বস্তায় করে আদা চাষে খরচ অনেক কম। কিন্তু সেই তুলনায় আদা চাষ খুব লাভজনক। এই দেখে আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই পদ্ধতিতে আদা চাষাবাদ করব। স্থানীয় চাষী একরামুল হক বলেন, আদার ব্যাপক দাম। এছাড়া সব পরিবারেই কম-বেশি আদা লাগে। আদা চাষ এমনিতেই বেশ লাভজনক। রোকনুজ্জামানের বস্তায় আদা চাষ বেশ ভালো হয়েছে। হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম বলেন, বস্তায় আদা চাষের এই পদ্ধতি আমাদের উপজেলায় একেবারে নতুন। তবে উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে কিন্তু এই পদ্ধতিতে আদা চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমাদের উপজেলায় মূল জমিতে আদা চাষ আগে থেকেই হয়ে আসছে। সেখানে বস্তায় আদা চাষ একেবারে নতুন ও লাভজনক একটি প্রযুক্তি। এই পদ্ধতিতে আদা চাষে বিনিয়োগ কিন্তু খুবই কম করতে হচ্ছে। প্রতি বস্তা আদা চাষে মাত্র ৫০ থেকে ৫৫ টাকা খরচ করে সেখানে ২০০ থেকে ২৫০ টাকার আদা পাওয়া সম্ভব। এতে নিজের পরিবারে আদার চাহিদা মেটানোর সাথে সাথে বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করতে পারবেন। বর্তমানে রোকনুজ্জামান নামের ওই কৃষক ২৭০টি বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন। আগামীতে আড়াই হাজার বস্তায় আদা চাষ করবেন তিনি। তার দেখাদেখি অন্য কৃষকরাও এই পদ্ধতিতে আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। পতিত জমিতে আদা চাষ বেশ লাভজনক হওয়ায় এই পদ্ধতি ছড়িয়ে দিতে কৃষককে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।