সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত সদস্য ইয়াসিন আরাফাত শাওনকে নিয়ে এবার আব্দুর রাজ্জাক রাকিব (২৪) খুনের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তবে ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো অধরা এই শাওন। এ নিয়ে নিহতের পরিবার ও সচেতন মহলে ক্ষোভ অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে প্রায় ৩ বছর র্যাবের হাতে মাদক ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র নিয়ে আটকের মধ্যদিয়ে নগরজুড়ে আলোচনায় আসে শাওন। এ সময় শাওন বাহিনীর কাছ থেকে দুটি পিস্তল, একটি রিভলভার, তিনটি ম্যাগাজিন, দুটি শর্টগানসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় জেলখেটে কারামুক্তির পর ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় আরো বেপোয়ারা উঠতে একাধিক হত্যা, অস্ত্রসহ ১০ মামলার আসামি এই সন্ত্রাসী শাওন। জানা যায়, গত বছর দুইয়েক যাবত শাওন ক্ষমতাসীন দলে ভিড়ে এক প্রতিমন্ত্রীর ছত্রছায়ায় তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নতুনমাত্র যোগ করে। এরই ধারাবাহিকতায় জেলার তারাকান্দা উপজেলায় প্রতিমন্ত্রীর দলীয় কর্মসূচি থেকে ফেরার পথে গত শনিবার (১১ নভেম্বর) রাতে নগরীর চায়না মোড় এলাকায় এক তুচ্ছ ঘটনায় এক ট্রাক চালকের সাথে বিরোধে জড়ায় শাওন ও তার অনুসারিরা। এ সময় স্থানীয়রা সৃষ্ট বিরোধ নিরসনে এগিয়ে এলে শাওন ও তার অনুসারিদের ছুরিকাঘাতে খুন হয় মহানগর আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক সাগরের ভাতিজা আব্দুর রাজ্জাক রাকিব। এতে মারাত্মক আহত হন আরো কয়েকজন পরিবহণ শ্রমিক।
এ ঘটনায় নিহতের মা হাসি আক্তার শাওন ও তার ভাই পারভেজসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো ১২ জনকে অজ্ঞাত রেখে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা দকরেন। এ ঘটনার পর তিন দিন পেরিয়ে গেলেও এখন গ্রেপ্তার হয়নি শাওন ও তার বাহিনী। ফলে পুত্র হারানোর বেদনায় নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি পরিবারটি এখন নির্বাক ও অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছে। ভুক্তভোগী সূত্র জানায়, শাওন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানাসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, ছিনতাই, ডাকাতি ও মাদকসহ প্রায় ১০টি মামলা রয়েছে। তবুও সে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বেপরোয়া আচরণ করে চলছে। কিন্তু শাওনের এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সাধারণ মানুষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবাই সবকিছু জানলেও রহস্যজনক কারণে তারাও যেন নীরব। এতে রাকিব হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কা রয়েছে সচেতন মহলে।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ বলেন, ইয়াসিন আরাফাত শাওনের বিরুদ্ধে থানায় ১০টির বেশি মামলা রয়েছে। র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর গত বছরের দিকে তিনি পুলিশের হাতেও আটক হয়েছে। ওই মামলায় সে ৬ মাস কারাগারে ছিল। বর্তমানে রাকিব হত্যা মামলায় শাওন ও তার অনুসারিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
একাধিক সূত্র জানায়, শাওন বিভিন্ন অপরাধীদের সংঘঠিত করে নগরজুড়ে একটি গ্যাং কালচার তৈরী করেছে। ফলে প্রশাসন চাইলেও ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কারণে তাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে থামানো যাচ্ছে না। আর এ কারণেই তুচ্ছ ঘটনায় নিরীহ রাকিব হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে নগরবাসী আবারও সন্ত্রাসী শাওনের ভয়াবহতা দেখল আবারও।
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার মুঠোফোনে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) মাসুম আহম্মেদ ভুঞার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে এসব ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. নুরুল আমীন কালাম বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যেসব গডফাদার ও অপরাধী চক্র রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে।