কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের আবাসন সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে। এখানে পরিত্যক্ত ঘোষিত একটি চার তলা ভবনের ৮টি ওয়ার্ড থেকে সম্প্রতি বন্দি সরিয়ে অন্য ওয়ার্ডে নেওয়ায় এ কারাগারের নির্ধারিত ধারণক্ষমতা সংকুচিত হয়ে বন্দির চাপ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। এতে শতাধিক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও জঙ্গি-নাশকতার মামলার দুর্ধর্ষ আসামিদের নিয়েও দেখা দিয়েছে বিপত্তি। একটি কনডেম সেলে রাখা হচ্ছে গড়ে তিনজনেরও অধিক মৃত্যুদণ্ডের আসামি। এসব কারণে বন্দিদের থাকা ও রাতে ঘুমানোর ক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এদিকে কারা অভ্যন্তরে চলতি বছরের জুন মাসে কয়েকটি নতুন ভবনের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এগুলোর সময় বাড়ানো হয়েছে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। তাই শিগগির বন্দিদের আবাসন সংকট থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই। কারাগার ও জেলা গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। কারাগার সূত্রে জানা যায়, নগরীর ছোটরা এলাকার ১৭৯২ সালে ৬৭ দশমিক শূন্য ৮ একর জায়গা নিয়ে কুমিল্লা জেলা কারাগারের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে তা কেন্দ্রীয় কারাগারে উন্নীত করা হয়। এটা এ কারাগারে বন্দির ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৭৪২ জন। তবে প্রাচীন এ কারাগারের অধিকাংশ ভবন জরাজীর্ণ।অতিরিক্ত বন্দির স্থান সংকুলানে কারা প্রকোষ্টে গাঁদাগাদি করে তাদের রাখা হচ্ছে।
বন্দিদের কারা অভ্যন্তরে নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্পে চার তলার ৮টি ওয়ার্ড পরিত্যক্ত ঘোষণা করে অন্যান্য ওয়ার্ডে বন্দি সরিয়ে নেওয়ায় দেখা দিয়েছে আবাসন সংকট এবং এখানে ধারণক্ষমতার হিসাবও পালটে গেছে। বর্তমানে এখানে পুরুষ ও নারী বন্দিদের জন্য ২০টি ও হাসপাতালের জন্য দুইটি ওয়ার্ড রয়েছে। আবাসনের ওয়ার্ড কমে যাওয়ায় গড়ে এ কারাগারে এখন বন্দি ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। সর্বশেষ এ কারাগারে মোট বন্দি ছিল ২ হাজার ২১৬ জন। এর মধ্যে নারী ১০৭ জন। কারা সূত্র জানায়, ৩৬টি কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০৬ জন পুরুষ আসামিসহ ১৮ জন জঙ্গি সম্পৃক্ততার আসামি এবং ২টি কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ জন নারী আসামি রাখা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারাগার থেকে সদ্য বের হওয়া চারজন বন্দি জানান, কয়েকটি ওয়ার্ড দীর্ঘ বছর ধরে জরাজীর্ণ ও স্যাঁতসে্যঁতে। হাসপাতাল চলছে টিনসেড ভবনে।
এছাড়া ৮টি ওয়ার্ড থেকে বন্দিদের অন্য ওয়ার্ডে স্থানান্তর করায় রাতে ঘুমানো, গোসল, টয়লেটসহ নানা সমস্যায় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কুমিল্লা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর রাসেদুল করীম বলেন, কারাগারের সংরক্ষিত এলাকার বাইরে বেশ কিছু আবাসিক ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে ইচ্ছে করলেই দ্রুত কাজ করা সম্ভব নয়। কিছু জরাজীর্ণ ভবন থেকে আসামি অন্য ওয়ার্ডে সরিয়ে নেয়ার পর পুরাতন ভবন নিলামে বিক্রির পর কাজ শুরু করতে হয়।