ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের এক সাবেক নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে ওই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অমিয় সৃজন সাম্যের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান, অনুষদের ডিন ও উপাচার্যের কাছে অভিযোগপত্র দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
গত ৮ অক্টোবর এই অভিযোগ দেন তিনি। সামাজিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান অভিযোগপত্রের বিষয়টি আলোকিত বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এর যথাযথ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী শিক্ষার্থী অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ‘অমিয় সৃজন সাম্য আমার বিভাগের শিক্ষক হওয়ায় তিনি আমাকে ক্যারিয়ার ও উচ্চশিক্ষা বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করতেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে তার ব্যক্তিগত জীবন, একাকিত্ব, উচ্চশিক্ষা ইত্যাদি নানা বিষয়ে কথা বলতেন। ধীরে ধীরে তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক আগের চেয়ে ভালো হয়। এরপর গত বছরের ২৫ এপ্রিল তিনি আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু আমি আমাদের ধর্মীয় ভিন্নতার বিষয়টি সামনে এনে প্রস্তাব নাকচ করে দেই। আমি তাকে স্বাভাবিক আচরণ করতে বলা সত্ত্বেও তিনি বিভিন্ন সময় ফোন করে, ম্যাসেজ দিয়ে আমার প্রতি তার দুর্বলতার কথা শেয়ার করতেন।’
তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘এক পর্যায়ে আমিও তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে যাই। পরবর্তীতে বিয়ের প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে গত বছরের ৩ অক্টোবর আমাদের সম্পর্ক শুরু হয়। সম্পর্কের কিছুদিন পর সে আমাকে তার বাসায় আসার প্রস্তাব দেয়। আমি আসতে রাজি না হলে সে আমাকে নিশ্চিত করে যে তার বাসা সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং প্রতিশ্রুতি দেয় যে তার দ্বারা আমার কোনো ক্ষতি হবে না। আমি তারপরও রাজি হইনি। পরবর্তীতে তার শরীর খারাপের কথা বলে আমাকে বাসায় আসতে প্রভাবিত করে। নভেম্বরের ৫ তারিখে তার বাসায় (ঢাবির স্যার পি জে হার্টজ ইন্টারন্যাশনাল হল, রুম-৫০৫) গেলে সে প্রথমদিকে স্বাভাবিক আচরণ করলেও পরবর্তীতে সে আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এই ঘটনায় আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি।’
ওই নারী শিক্ষার্থী আরো বলেন, ‘তখন সে আমাকে বিয়ে করবে বলে আবারো আশ্বস্ত করে এবং প্রয়োজনে দেশের বাইরে বসবাস করবে, এমন কথাও বলে। পরবর্তীতে তাকে বিয়ের কথা বললে সে বিভিন্নভাবে কালক্ষেপণ শুরু করে এবং এই কমিটমেন্ট থেকে সরে আসতে চায়। আবার শারীরিক সম্পর্কে রাজি না হলে সে নানাভাবে ইমোশনালি ম্যানিপুলেট করে তা করতে বাধ্য করে। এভাবে সর্বশেষ, গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখেও তার বাসায় আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে এবং ১৭ তারিখে আবারো প্রস্তাব দেয় যা আমি প্রত্যাখ্যান করি। পরবর্তীতে ২২ সেপ্টেম্বর সে আমার কাছে গোপন করে অন্য একজন মেয়েকে বিয়ে করে যা আমি জানতে পারি ২৪ সেপ্টেম্বর। এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা হলে সে আমাক কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।’
ভুক্তভোগী ওই নারী শিক্ষার্থী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘তিনি আমার সঙ্গে পুরোপুরি প্রতারণা করেছেন। আমাকে বিয়ের কমিটমেন্ট দিয়ে আমাদের সম্পর্ক শুরু হয়; পরবর্তীতে আমাকে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করেন এবং আমাদের সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে গোপনে অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছেন। আমি এই প্রতারণার বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী অধ্যাপক অমিয় সৃজন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার কাছে কেউ অভিযোগ পাঠায়নি। যেহেতু অভিযোগটা করা হয়েছে বিভাগে, ডিনের কাছে সেহেতু ওনারাই এ ব্যাপারে ভালো মন্তব্য দিতে পারবে। আপনি ওনাদের সঙ্গে যদি কথা বলেন তাহলে ভালো হয়।’
এ বিষয়ে পদক্ষেপ জানতে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. উম্মে বুশরা ফাতেমা সুলতানার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল এ বিষয়ে জানেন না উল্লেখ করে আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখনো আমার কাছে আসেনি।’