সুসংবাদ প্রতিদিন

বাড়ির ছাদে মুক্তা চাষে সফলতা

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

স্বাদু পানিতে মুক্তা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন যশোরের অভয়নগর উপজেলার এক্তারপুর গ্রামের মো. আব্দুর রহমান নামে এক কলেজছাত্র। পরীক্ষামূলক প্রকল্প হলেও এরইমধ্যে মুক্তা আহরণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন তিনি। তার সাফল্যে অন্য বেকার যুবকরাও ঝুঁকছেন এ পেশায়। জানা গেছে, করোনাকালে ইউটিউবে ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের পদ্ধতি দেখে তিনি উৎসাহিত হন। এ আর এগ্রো ফার্মিং মুক্তা চাষ ট্রেনিং সেন্টার খুলে অনেক বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থান তৈরি করে দিয়েছেন ওই যুবক। আব্দুর রহমান এক্তারপুর গ্রামের কবির হেসেনের ছেলে। তিনি নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। আব্দুর রহমান বলেন, ২০২০ সালে করোনার সময়ে বাড়িতে পড়াশোনার পাশাপাশি আমি ইউটিউবে ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের পদ্ধতি দেখে উদ্বুদ্ধ হই। এরপর এটা নিয়ে কিছুদিন গবেষণা করি। প্রথম দিকে দুটি ঝিনুক সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে সাফল্য পেয়ে আমি পরবর্তীতে ৫০০ ঝিনুক নিয়ে কাজ শুরু করি। ৫০০ ঝিনুক থেকে এখন তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ হাজারে। ৩ মাস আগে ঝিনুকের পাশাপাশি একই হাউস কাজে লাগিয়ে আরো কিছু করার চিন্তা থেকে ছাদের জলাশয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ছাড়েন রঙিন মাছ। এক্ষেত্রেও দেখা দেয় বড় ধরনের আর্থিক আয়ের সম্ভাবনা। এখন প্রতি মাসে কয়েক হাজার টাকার মুক্তা বিক্রি করেন তরুণ এই উদ্যোক্তা। সরেজমিনে দেখা যায়, তার বাড়ির ছাদে ২০ ফুট ও ১০ ফুট একটি পানির হাউস আছে। পানিতে ঝিনুকের পাশাপাশি ছোট ছোট রঙিন মাছ খেলা করতে দেখা যায়। ঝিনুক থেকে কীভাবে মুক্তাচাষ করা হয় জানতে চাইলে আব্দুর রহমান জানান, মুক্তা এমন একটি রত্ন, যা পেতে ঝিনুককে যত্ন করতে হয়। মুক্তা চাষের জন্য প্রয়োজন কিছু সরঞ্জাম। যেমন- ঝিনুক অপারেশনের কিটবক্স, দুই ধরনের নেট বক্স ও ইমেজ তৈরির জন্য কিছু যন্ত্রপাতি। সাধারণত ১০ থেকে ১২ মাস বয়সে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ইমেজটি স্থাপন করা হয় ঝিনুকের পেটে। এরপর দুই থেকে আড়াই ফুট পানির নিচে ডুবিয়ে রাখা হয় ঝিনুকগুলোকে। এভাবে ২১ থেকে ২৮ দিন রাখার পর সেগুলোকে উন্মুক্ত করা হয় ছাদ পুকুরে। এরপর ১০ মাসের মধ্যে স্থাপিত ইমেজটি মুক্তায় পরিণত হয়। সবশেষে পুকুর থেকে ঝিনুক তুলে আহরণ করা হয় মুক্তা। ঝিনুক সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রতিটি মুক্তা আহরণ পর্যন্ত খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ টাকা। ঝিনুক অস্ত্রোপচার ঘরে বসেই করা যায়। খুব অল্প খরচে সরঞ্জাম কেনা যায়। ধৈর্য ধরলে ভালো মুক্তা মেলে, লাভ পাওয়া যায়। মুক্তা চাষের বিশেষ দিক- ঝিনুককে বাড়তি খাবার দিতে হয় না। ঝিনুক নিজে থেকেই খাবার নিয়ে নেয়। উল্টো পুকুরের পানি মাছ চাষের জন্য উপযোগী করে তোলে ঝিনুক। মাঝেমধ্যে পানির পিএইচ ও ঝিনুকের আবরণ পড়ছে কি না তা পরীক্ষা করা হয়। পরে ওই ঝিনুক থেকেই মুক্তা তৈরি হয়।

আব্দুর রহমান জানান, প্রতি পিস মুক্তা বাংলাদেশের আড়ং নামে একটি প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করে এরইমধ্যে তিনি ২ লাখ টাকা আয় করেছেন। এ ছাড়া তৈরি করা নিউক্লিয়াস ১০ টাকা ও সংগ্রহ করা ঝিনুক ৫ টাকা করে বিক্রি করেন। বিক্রি করা মুক্তা তৈরি করতে তার সর্বসাকুল্যে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তার এ মুক্তা চাষ প্রকল্পের গ্রামের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানও হয়েছে। বর্তমানে তার প্রকল্পে ঝিনুক সংগ্রহের কাজে ৭ থেকে ৮ জন বেকার যুবক কর্মরত রয়েছেন। এ ছাড়া মুক্তা তৈরির কাজে তার মা-বাবাসহ ৭ থেকে ৮ জন লোক সহযোগিতা করে থাকেন। এ ব্যাপারে আব্দুর রহমানের বাবা কবির হোসেন জানান, ছেলের ব্যতিক্রমী কর্মকাণ্ডে প্রথম থেকে সহযোগিতা করেছি, এখন আলহামদুলিল্লাহ তার সুফল ভোগ করছি। বাড়ির ছাদে রঙিন মাছের সঙ্গে কীভাবে মুক্তাচাষ হয়, সে বিষয়টি দেখার জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থী ছুটে আসেন।

খুলনা দৌলতপুর থেকে প্রজেক্ট দেখতে আসা আমিনুর রহমান বলেন, বেকার যুবকরা এ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, একজন ছাত্র পড়াশোনার পাশাপাশি ঝিনুক চাষ করে মুক্তা তৈরি করছে। সেই সঙ্গে রঙিন বাহারি মাছের চাষ করেও সফলতা পেয়েছে। পুকুরে মুক্তা চাষে ঝুঁকি কম ও লাভজনক।

মানসম্মত মুক্তা চাষ করতে পারলে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। বেকার যুবকরা এ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে স্বাবলম্বী হতে পারে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উদ্যোক্তাদের এমন নতুন নতুন উদ্ভাবনী আমরা প্রত্যাশা করি। উপজেলা মৎস্য অফিসের মাধ্যমে আমরা তার পাশে থেকে তাকে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করে যাব। এ ধরনের কার্যক্রমে আমরা পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করব।