ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কারণে ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই ফের কক্সবাজারের কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া সৃষ্ট ঝড়ো হাওয়ায় পৃথক ঘটনায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত শুক্রবার গাছচাপায় মহেশখালীর কালারমারছড়ায় মোহাম্মদ সাঈদ নামে এক যুবক আহত হয়। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।
অপরদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় মহেশখালী চ্যানেলে ইঞ্জিনচালিত একটি মাছ ধরার নৌকা ডুবে সদর উপজেলার চৌফলদন্ডি এলাকার আমির হোসেন কামাল নামে এক জেলে নিখোঁজ হয়। গতকাল শনিবার সকালে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় মহেশখালী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী গাছচাপায় একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে তিনি মাছ ধরার নৌকাডুবিতে অপরজনের মৃত্যুর বিষয়ে অবগত নন বলে জানান।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কবির হোসেন কৃষিতে ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কারণে ঝড়ের আঘাতে জেলায় ৩৫৬ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। চলতি বছর এর পূর্বে আরো দুটি ঘূর্ণিঝড়ে জেলার লাখো কৃষক ১৫০ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কারণে ঝড়ের আঘাতে কক্সবাজার জেলায় ২০ হেক্টর পানের বরজ, ১৪৫ হেক্টর আমন ধান, ১৮০ হেক্টর শীতকালীন আগাম শাকসবজি ও ১১ হেক্টর সরিষা খেতের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আজ রোববার পাঠানো হবে। তারাও প্রণোদনা পাবেন।
উপ-পরিচালক মো. কবির হোসেন আরো বলেন, মিধিলি উপকূলীয় কুতুবদিয়া উপজেলায় ১৫ হেক্টর আমন ধান ও ৪০ হেক্টর শীতকালীন শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। মহেশখালী উপজেলায় ০৫ হেক্টর পানের বরজ, ১০ হেক্টর আমন ধান, ১৫ হেক্টর শীতকালীন শাকসবজি ও ২ হেক্টর সরিষা খেতের ক্ষতি হয়েছে। টেকনাফ উপজেলায় ০৩ হেক্টর পানের বরজ, ১৫ হেক্টর আমন ধান, ০৫ হেক্টর শীতকালীন শাকসবজি ও ১ হেক্টর সরিষা খেতের ক্ষতি হয়েছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাস জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকালে ঝড়ের সময় মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ায় এক বসতবাড়িতে বড় গাছ উপড়ে পড়লে বাড়ির একটি অংশ ধ্বসে পড়ে। এতে মোহাম্মদ সাঈদ নামে এক যুবক গুরুতর আহত হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাঈদের মৃত্যু হয়। অপরদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় সাগর থেকে ফেরার সময় ইঞ্জিনচালিত একটি মাছ ধরার নৌকা মহেশখালী চ্যানেলে ডুবে যায়। এতে অপরাপর জেলেরা কূলে ফিরতে পারলেও আমির হোসেন কামাল নামে এক জেলে নিখোঁজ হয়। পরে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ভারি বৃষ্টিতে শুক্রবার ভোর রাতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার মরিচ্যাঘোনায় পাহাড়ের মাটিচাপায় দেওয়াল ভেঙে ফকির আহমদের ঘুমন্ত স্ত্রী, ছেলে ও দুই মেয়েসহ চারজনের মৃত্যু হয়।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মধ্যে দুটি ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজারে লাখো কৃষক ১৫০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখায়’ ৬৬ হাজার কৃষকের ১১১ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছিল। পরে ঘূর্ণিঝড় হামুনে ১১ হাজার কৃষকের ৫০ কোটি টাকার ফসলি জমি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায় বলে কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কবির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।