ঢাকা ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

টেকনাফে ইসলামী ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা কারাগারে

টেকনাফে ইসলামী ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা কারাগারে

ইসলামী ব্যাংক কক্সবাজারের টেকনাফ শাখায় বিভিন্ন গ্রাহকের ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। গতকাল বেলা ১২টার দিকে টেকনাফ মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গণি বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখার অফিসার ঈমান হোসেন, জুনিয়র অফিসার আজিজ আহমেদ জাবেদ ও মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম। এর মধ্যে ঈমান হোসেন টেকনাফের হৃীলার দমদমিয়া এলাকার ঠান্ডা মিয়ার পুত্র, আজিজ আহমেদ জাবেদ চট্টগ্রামের পটিয়া জঙ্গলখাইন ইউপির উজিরপুর এলাকার মীর আহমদের পুত্র ও মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম চট্টগ্রামের পটিয়া জাবিলাছ দ্বীপ ইউপির চরকানাই এলাকার শেখ মো. আমিনুল হকের পুত্র।

ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখার ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ অলতাফ হোসেন বাদী হয়ে ব্যাংকের বিভিন্ন গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে অভিযুক্ত ওই ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে টেকনাফ থানা পুলিশ অভিযুক্ত ৩ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজেস্ট্রেট টেকনাফ আদালতে পাঠায়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে।

ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখার ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ অলতাফ হোসেন ও টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ব্যাংক ও পুলিশ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ৬ নভেম্বর ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখায় একজন গ্রাহক তার হিসাবের স্থিতিতে গরমিল পাওয়ায় ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ অলতাফ হোসেনের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। উক্ত মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে তার হিসাবের স্থিতির গরমিলের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পায় ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ অলতাফ হোসেন। একইভাবে ১২ নভেম্বর অন্য এক গ্রাহক তার হিসাবের স্থিতির ব্যাপারেও একই অভিযোগ করেন ব্যবস্থাপকের কাছে। সেটিও ব্যবস্থাপক নিজ উদ্যোগে যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পান।

অভিযোগ দুটির সত্যতা যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে ব্যবস্থাপক দেখতে পান যে ওই ব্যাংকের কর্মকর্তা ঈমান হোসেন ও আজিজ আহমেদ জাবেদ তাদের ব্যাংক প্রদত্ত আইডি ব্যবহার করে পরস্পরে গ্রাহকের চেকবই জালিয়াতির মাধ্যমে ইস্যু করে এবং ওই চেকগুলো ব্যবহার করে নগদ ও ট্রান্সফারের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রাহকদের হিসাব থেকে অবৈধভাবে টাকা উত্তোলন করেন। তাদের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাবে উক্ত টাকা স্থানান্তর করে। ওই জমাকৃত টাকা পরে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। এ বিষয়টি ব্যবস্থাপক নিশ্চিত হওয়ার পর দ্রুত আঞ্চলিক প্রধানকে অবহিত করে নিরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। ওই তদন্তে এ পর্যন্ত ব্যবস্থাপক সর্বমোট ৫৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাব থেকে অননুমোদিত উত্তোলনের প্রমাণ পান।

এরই ভিত্তিতে ব্যাংকের কর্মকর্তা অভিযুক্ত ঈমান হোসেনকে ব্যবস্থাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন। অভিযোগকারী দুইজন গ্রাহকের হিসাবের গরমিলের ১৩ লাখ টাকা ব্যবস্থা করে তাদের অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে নিষ্পত্তি করা হয়।

অভিযুক্ত ঈমান হোসেন তার লিখিত বক্তব্যে সর্বমোট ৬৫ লাখ টাকা একই পদ্ধতিতে আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন। অভিযুক্ত ঈমান হোসেন তার লিখিত বক্তব্য অনুযায়ী সে নিজে ৩০ লাখ টাকা, আজিজ আহমেদ জাবেদ ৩০ লাখ টাকা এবং মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম ৫ লাখ টাকা পারস্পরিক যোগসাজশে মাধ্যমে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। যদিও আজিজ আহমেদ জাবেদ ও মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন।

অডিট টিম সমন্বয়ে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে, অভিযুক্ত ঈমান হোসেন ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করলেও ব্যবস্থাপক এপর্যন্ত ৫৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা অননুমোদিত উত্তোলনের প্রমাণ পেয়েছেন। এই অবৈধ উত্তোলনের ক্ষেত্রে ঈমান হোসেন ও আজিজ আহমেদ জাবেদ যৌথভাবে তাদের ব্যাংক কর্তৃক প্রদেয় আইডি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ওই লেনদেনগুলো সংঘটিত করেছেন। আরো কোনো অবৈধ লেনদেন আছে কিনা, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এমতাবস্থায়, তাদের সঙ্গে এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে ব্যবস্থাপকের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা ঈমান হোসেনের স্বীকারোক্তি মতে আরো ৫২ লাখ টাকা ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এর মধ্যেই ব্যাংকের হেড অফিস থেকে সিদ্ধান্তমতে ব্যবস্থাপক অভিক্ত ৩ কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।

টেকনাফ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনজুরুল ইসলাম মঞ্জু জানান, এ বিষয়টি দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপ-পরিচালক দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় কক্সবাজার বরাবর ব্যাংক ব্যবস্থাপক কর্তৃক দায়েরকৃত এজাহারটি ফরোয়াডিংসহ প্রেরণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করলেও বিষয়টি প্রকাশ পায় গত শুক্রবার রাতে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত