আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে জাতীয় পার্টি। গতকাল সোমবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে ফরম বিক্রি শুরু হয়। মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরুর ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না, সে বিষয়ে জাতীয় পার্টি অবস্থান স্পষ্ট করেনি। দলের মহাসচিব মুজিবুল হক উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখছি। সময়ের বাধ্যবাধকতা আছে, তাই নির্বাচনি কার্যক্রম এগিয়ে রাখছি। দলের চেয়ারম্যান ৩০ নভেম্বরের আগে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রমে উপস্থিত থাকলেও মুজিবুল হক ফরম সংগ্রহ করেননি। নির্বাচনের পরিবেশ এখনো হয়নি মন্তব্য করে মুজিবুল হক আরো বলেন, ‘তবে আশা করছি, পরিবেশ হবে। নির্বাচন কমিশন ও সরকারের কার্যক্রম মিলিয়ে একটা আস্থার জায়গা তৈরি হবে। তবে দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। মানুষের স্বার্থে ও দেশের স্বার্থে নির্বাচনে যাচ্ছি। দেশে যেভাবে উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষায় সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। সবকিছুর ঊর্ধ্বে দেশের অগ্রগতি, দেশের স্বার্থ। বিদেশিরা এসে প্রেসক্রিপশন কেন দেবেন? আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।’
এর আগে গত রোববার জাতীয় পার্টির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সোমবার (২০ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও গ্রহণ করা হবে। আগামী বুধবার (২২ নভেম্বর) পর্যন্ত এই মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হবে।
সকাল ১০টায় বনানীতে দলের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের বাইরে জড়ো হচ্ছে না। কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় মনোনয়ন ফরম বিক্রির বুথ করা হয়েছে। তবে ১০টায় ফরম বিক্রি শুরুর কথা থাকলেও তা শুরু হয়নি।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দলের শীর্ষ নেতারা কার্যালয়ে আসেন। এরপর দলের শীর্ষ নেতারা সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন। দুপুর ১২টায় নেতারা একসঙ্গে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে যান।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদের পর দলের কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন ফরম সংগ্রহ করেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত শনিবার জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আলাদা দুটি চিঠি যায়। একটি পাঠান দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। অন্যটি পাঠান দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক।
রওশন এরশাদের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পার্টি বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আর জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চিঠিতে বলেন, সংসদ সদস্য পদে তাদের দলের মনোনীত প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে প্রার্থী মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ করবেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
এ বিষয়ে মুজিবুল হক গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, দলে কোনো বিভেদ নেই। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ইসিতে যে চিঠি দিয়েছেন, সেটা তার ব্যক্তিগত। দলের প্রতীক বরাদ্দের ক্ষমতা চেয়ারম্যানের এটি আইপিওতে উল্লেখ আছে। ফরম বিক্রি শুরু করলেও রওশন এরশাদ এখন পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। জাতীয় পার্টির নেতারা জানান, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের জন্য বিভাগ অনুযায়ী আটটি বুথ করা হয়েছে। প্রতিটি ফরমের মূল্য ৩০ হাজার টাকা। ২৪ নভেম্বর থেকে প্রতিদিন দুটি বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। ২৪ নভেম্বর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ, ২৫ নভেম্বর খুলনা ও বরিশাল বিভাগ, ২৬ নভেম্বর ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে।