মিয়ানমারের সন্ত্রাসীগাষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এর শীর্ষ তিন কমান্ডারকে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আটক করেছে র্যাব ১৫। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্র, বিস্ফোরক ও অ্যামুনিশন।
গতকাল ভোরে উখিয়ার ১৭ নম্বর ও ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক এ অভিযান চালানো হয়। গতকাল দুপুরে কক্সবাজারের র্যাব-১৫ এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাব ১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন। র্যাব জানিয়েছে আটক আরসার শীর্ষ কমান্ডারের মধ্যে মৌলভী হামিদ হোসেন ওরফে ডাক্তার হামিদ আরসার স্লিপার সেল ও ওলামা বড়ির প্রধান, আবু তৈয়ব প্রকাশ সোনা মিয়া সোনালী আরসার অর্থ সমন্বয়ক এবং ওসমান গনি আরসার ইন্টেলিজেন্স সেলের প্রধান। সংবাদ সম্মেলনে র্যাব অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, রাষ্ট্রিয় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ১৭ নম্বর ক্যাম্প থেকে মৌলভী হামিদ হোসেন প্রকাশ ডাক্তার হামিদ ও আবু তৈয়ব প্রকাশ সোনা মিয়া সোনালী এবং ৪ নম্বর এক্সটেশন ক্যাম্প থেকে ওসমান গনিকে আটক করা হয়। এর মধ্যে মৌলভী হামিদ হোসেন ২০১৭ সালে পরিবারসহ মিয়ানমারের বুচিডং থেকে এসে বালুখালী ক্যাম্পে বসবাস করে। মিয়ানমারে থাকাকালীন মৌলভী হামিদ হোসেন আরসা’র ওলামা কাউন্সিলের কমান্ডার মৌলভী তোহার মাধ্যমে আরসায় যোগদান করে। হামিদ গ্রাম্য ডাক্তারি পেশায় নিয়োজিত ছিলেন এবং তার বাবাও একজন গ্রাম্য ডাক্তার ছিলেন। ফলে স্থানীয় রোহিঙ্গাদের মধ্যে তার পরিবারের ব্যাপক প্রভাব ছিল। এই সুবাদে সে দ্রুত আরসার নেতৃত্ব পর্যায়ে পৌঁছে যায়। প্রথমে সে ৮ নম্বর ক্যাম্পের প্রধান জিম্মাদর হন পরে, ওলামা বডির কার্যকরী সদস্য হন। হামিদ নতুন সদস্য সংগ্রহ করে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠান এবং আরসার বরাদ্দকৃত টাকা পরিবারের সদস্যদের নিকট প্রেরণ করে থাকে।
তিনি বলেন, প্রধান অর্থ সমন্বয়ক আবু তৈয়ব ২০১৬ সালে আরসায় যোগদান করে এবং ২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রবেশ করে কুতুপালং ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করে আসছিল। গত ২ অক্টোবর আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও আরসা প্রধান আতাউল্লাহ’র একান্ত সহকারী এবং অর্থ সমন্বয়ক মোহাম্মদ এরশাদকে র্যাব আটক করলে তৈয়বকে অর্থ সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। আর ওসমান গনি আরসার একজন সক্রিয় সদস্য। তথ্য-প্রযুক্তি এবং ইংরেজি ভাষায় তার বেশ দক্ষতা থাকায় সে আরসা’র তথ্য-প্রযুক্তির বিষয় দেখভাল করত। এই সুযোগে সে ক্যাম্পে পরিচালিত এনজিও ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তথ্য আরসার শীর্ষ নেতাদের সরবরাহ করত। পার্শ্ববর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতির খবরাখবর পৌঁছাত। এছাড়া বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধি লক্ষ রাখত। কোনো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করলে, গ্রুপের সদস্যরা গ্রুপে মেসেজ দিয়ে সবাইকে সতর্ক করে দিত।
র্যাব এ পর্যন্ত আরসার ৭৩ জন সক্রিয় সদস্য ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটক করেছে উল্লেখ্য করে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে মামলা করে তিনজনকে উখিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।