এবার নিলামে উঠছে ২৮ টন মহিষের মাংস ও ১০ টন মাছ
বন্দর থেকে সময়মতো ছাড় না করার জের
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
তামীম রহমান, চট্টগ্রাম
এবার চট্টগ্রাম কাস্টমস আজ নিলামে তুলছে ২৮ হাজার ৪০ কেজি (২৮ টন) মহিষের মাংস। আমদানি করা এসব মাংসের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার মাত্র ১০ দিন আগে তোলা হচ্ছে নিলামে। এতে নিলামে কেনা মাংসের স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা করা হচ্ছে। মহিষের মাংসের সঙ্গে একই দিন নিলামে উঠছে আমদানি করা হিমায়িত মাছ ও বিপুল আদা।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, বিশেষায়িত রিফার কনটেইনারে দিনের পর দিন পণ্য রাখা যায়না। এতে এসব কনটেইনার খাতে ভাড়াসহ নানা ধরনের ব্যয় হয় বেশি। আবার অল্পসংখ্যক রিফার কনটেইনার সময়মতো সরবরাহও পাওয়া যায় না। তাই নিলাম আয়োজন করেই কনটেইনারগুলো খালি করতে হয়। জানা গেছে, সর্বশেষ আমদানি পণ্য নিলামে তোলার প্রক্রিয়া আগেই সম্পন্ন করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আমদানিকারক নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য খালাস না নেওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৭ মার্চ কাস্টমসকে আরএল (নিলামে তালিকাভুক্ত) পাঠায়। পরে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ২৯ মার্চ এসব পণ্যের ইনভেন্ট্রি (সরেজমিন পণ্যের তথ্যাদি সংগ্রহ) সম্পন্ন করে। নারায়ণগঞ্জের উত্তর মাসদাইর গাবতলী এলাকার এমবি ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে এসব মহিষের মাংসের আমদানিকারক। এর আগেও মহিষের মাংসের বড় একটি চালানের নিলাম সম্পন্ন করে কাস্টমস। ওই সময় নিলামে উপযুক্ত ক্রেতা না পাওয়ায় মহিষের মাংস কিনতে মাইকিং করে কেনার জন্য অনুরোধ করে কাস্টমস।
কাস্টমস সূত্র জানায়, আজ মহিষের মাংসসহ আরো কয়েক ধরনের পণ্য প্রকাশ্য নিলামের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিলামে চট্টগ্রাম কাস্টমস মহিষের মাংসের মূল্য নির্ধারণ করে ১ কোটি ৬০ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৫ টাকা। এসব মাংসের উৎপাদনের তারিখ লেখা আছে ৪ ডিসেম্বর ২০২২ এবং মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লেখা আছে ২ ডিসেম্বর ২০২৩। সেই হিসেবে মহিষের মাংস মেয়াদ আছে মাত্র ১১ দিন। আর নিলামের দিন বাদ দিলে মেয়াদ থাকবে ১০ দিন। এর আগে গেল ৯ অক্টোবর একই আমদানিকারকের ২৭ হাজার ৯৮০ কেজি (প্রায় ২৮ টন) মহিষের মাংস নিলামে তুলে কাস্টমস। নিলামে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৩ টাকা দাম নির্ধারণ করলেও সর্বোচ্চ দাম উঠেছে মাত্র ৪ লাখ টাকা। কেজি হিসেবে মাত্র ১৪ টাকা ২৯ পয়সা। রাজশাহীর শাহ মখদুম ট্রেডার্স সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয়।
এদিকে আজকে মহিষের মাংসের পাশাপাশি ১০ হাজার ৬৭০ কেজি (সাড়ে ১০ টন) হিমায়িত সামুদ্রিক মাছ নিলামে তোলা হচ্ছে। ঢাকার রামপুরা বনশ্রীর এমএন করপোরেশন হিমায়িত মাছের চালানটি আমদানি করে। নিলামে কাস্টমস সংরক্ষিত মূল্য ধরা হয় ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৩৪২ টাকা। একইসাথে ৫২ হাজার ২৬০ কেজি (৫২ টন) রূপচাঁদা মাছও নিলামে তুলছে কাস্টমস। এসব মাছের মূল্য ধরা হয় ১ কোটি ৮৪ লাখ ৫০ হাজার ১৬ টাকা। মিয়ানমার থেকে পাথরঘাটা ইকবাল রোডের ফিশারিঘাটের মেসার্স রফিক অ্যান্ড ব্রাদার্স এসব মাছ আমদানি করে। অন্যদিকে ১৮ হাজার ৫৯০ কেজি (সাড়ে ১৮ টন) আদা নিলামে তোলা হচ্ছে একই দিন। আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডের আল হোছাইন ট্রেডিং চালানটি আমদানি করে। নিলামে কাস্টমস মূল্য নির্ধারণ করেছে ১৮ লাখ ৪২ হাজার ৩৫৭ টাকা। জানা গেছে, পচনশীল পণ্যের দ্রুত নিলাম আয়োজনের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) স্থায়ী আদেশ জারি করে। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমসের কর্মকর্তাদের অনীহার কারণে সেই আদেশ বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে বিগত সময়ে অনেক খাদ্যপণ্য কনটেইনারে পচে যাওয়ায় তা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব আহরণ ব্যাহত হয়। ধ্বংস করতে হয় শত কোটি টাকার আমদানি পণ্য।
নিলামে অংশ নিতে আগ্রহী অনেকের অভিযোগ- নিলাম আয়োজনে অহেতুক বিলম্ব করা হয়। এতে মেয়াদ শেষের দিকে নিলাম আয়োজন করা ছাড়া উপায় থাকে না। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তারা বলেন, নিলাম আয়োজনের শুরুতে পণ্যের ইনভেন্ট্রি শেষে ভ্যালুয়েশনের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়। ভ্যালুয়েশন নেওয়ার পর মূল্য নির্ধারণ কমিটি নিলামের সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করে। পরে পণ্যের ক্যাটালগ প্রকাশ করে নিলাম আয়োজন করে সরকারি নিলামকারী প্রতিষ্ঠান। এসব প্রক্রিয়া শেষ হতে এক মাস লাগতে পারে। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মহিষের মাংস ইনভেন্ট্রি শেষ করার প্রায় ৮ মাস পর নিলামে তুলছে। অথচ এসব মাংসের মেয়াদ আছে আর মাত্র ১০ দিন।
প্রসঙ্গত আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারককে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস।
নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এই পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় জব্দ পণ্যও নিলামে তোলা যায়। ৪৫ দিনের মধ্যে নিলামে তোলার এই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর করতে পারেনি বন্দর ও কাস্টমস। আমদানি পণ্য যথাসময়ে খালাস না নেওয়ায় বন্দরগুলোতে প্রায় কনটেইনার জট লাগে। দিনের পর দিন কনটেইনার পড়ে থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ চার্জ পায় না।