হরতাল-অবরোধে মাঠে নেই প্রভাবশালী নেতারা

ময়মনসিংহে ঝটিকা মিছিলেই সীমাবদ্ধ বিএনপির রাজনীতি

প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ময়মনসিংহ ব্যুরো

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালের, অবরোধ কর্মসূচিতে মাঠে নেই ময়মনসিংহে বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা। শুধু ঝটিকা মিছিলে সীমাবদ্ধ নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে দলীয় পরিমণ্ডলের ভেতরে-বাইরে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করলেও দলের দুঃসময়ে হরতাল অবরোধের মাঠে থাকছে না জেলার প্রভাবশালী নেতারা। অথচ কোনো কমিটি হওয়ার সময় তারা তাদের পছন্দের লোকদের পদ পাইয়ে দিতে দলের ভেতরে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে থাকে। আর এসব কারণেই হরতাল-অবরোধের মাঠে প্রভাব ফেলতে পারছে না বিএনপি।

দলীয় সূত্র জানায়, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটন। তিনি দলের নির্বাহী কমিটিরও সদস্য। ফলে দলের ভেতরে তার প্রতাপ অনেক। দলের বিভিন্ন কর্মসূচির সভা-সমাবেশে বড় বড় বক্তৃতা বিবৃতি দিলেও গত ২৮ সেপ্টেম্বরের পর থেকে বিএনপির ডাকা হরতাল বা অবরোধের মাঠে তাকে কোথাও দেখা যায়নি। একই অবস্থা দক্ষিণ জেলা বিএনপির প্রভাবশালী অপর যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. মোফাখারুল ইসলাম রানাসহ আরো অনেকের। উত্তর জেলা বিএনপির আরেক প্রভাবশালী নেতা ঈশ্বরগঞ্জ আসনের মনোনয়ন প্রত্যশী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবুর সমর্থকরা মাঠে সক্রিয়। তবে সাম্প্রতিক বিএনপির হরতাল অবরোধের মাঠে ঝটিকা মিছিল নিয়ে কিছুটা সক্রিয় রয়েছেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু এবং উত্তর জেলা বিএনপির একমাত্র যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার। তারা নিয়মিত বিক্ষোভ মিছিল ও মশাল মিছিল করে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। সেই সঙ্গে সাবেক এমপি শাহ নূরুল কবীর শাহীন, গৌরীপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আহাম্মেদ তায়েবুর রহমান হিরুন ও জেলা আেইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরুল হক হরতাল-অবরোধে সক্রিয় থেকে মামলার আসামি হয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে তাদের দাবি। এতে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতৃত্বের শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, যা হরতাল অবরোধের মাঠে প্রভাব ফেলছে বলেও মনে করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সূত্র মতে, হরতাল বা অবরোধের মাঠে নিয়মিত ঝটিকা মিছিলে সক্রিয় রয়েছে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। তবে এসব মিছিলেও র্শীষ সারির নেতাদের উপস্থিতি অতি নগণ্য।

এই অবস্থায় ময়মনসিংহ বিএনপির রাজনীতি ফেইসবুক নির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে সরকার পতনের কঠোর কর্মসূচিতেও বিএনপির র্শীষ নেতাদের লাপাত্তা অবস্থান নানা সমালোচনার সৃষ্টি করেছে রাজনৈতিক ও সচেতন মহলে।

অন্যদিকে বিএনপির হরতাল-অবরোধের মাঠে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে নিয়মিত অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৩১টি ওয়ার্ডে মোটরসাইকেল শোডাউনে রাজপথে কম্পন সৃষ্টি করে চলছে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেই সঙ্গে অবরোধে জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র‌্যাব, বিবিজি, আনসার ও পুলিশের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ময়মনসিংহে বিএনপির রাজনীতির বড় একটি প্লাটফর্ম থাকার পরও কেন মাঠের কর্মসূচিতে নিরুদ্দেশ নেতারা- এমন প্রশ্ন এখন দলের ভেতরে-বাইরে। এমন পরিস্থিতিতে অনৈক্যের আগুনে পুড়েছে কি বিএনপি- এই প্রশ্নও উঠে এসেছে তৃণমূল হতে।

অভিযোগ উঠেছে, দলীয় স্বার্থের বিপরীতে নিজ স্বার্থ সংরক্ষণের কারণে ভারসাম্য রক্ষার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়াও ঘটনা রয়েছে, যা চলমান আন্দোলনের মাঠে প্রভাব ফেলছে।

জানা যায়, মহানগর, দক্ষিণ ও উত্তর জেলা- এই তিন ভাগে বিভক্ত ময়মনসিংহ বিএনপি। প্রায় ৪ বছর আগে এসব ইউনিটগুলোতে বিএনপির পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু হলেও এখনো অনেক উপজেলার কমিটি নেই। সেই সঙ্গে যোগ্য ও নিবেদিত নেতারা দলের শীর্ষ ও প্রভাবশালী নেতাদের আনুকূল্যের বাইরে রয়েছে। ফলে দলের ভেতরে অনৈক্য দেখা দিয়েছে তৃণমূল থেকে জেলা সদরেও। এছাড়াও প্রভঅবশালী নেতারা দলের ভেতরে নিজেদের অবস্থান শক্ত করে ধরে রাখতে দুর্বল ও অনুগত নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করাই রাজপথে তারা ভূমিকা রাখতে পারছে না। এতে মাশুল গুনতে হচ্ছে আন্দোলনের মাঠে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ উওর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার বলেন, ময়মনসিংহ উওর জেলা বিএনপির সাতটি উপজেলায় নেতাকর্মীরা মাঠে রয়েছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় প্রতিদিনই উত্তর জেলা বিএনপির বিপুলসংখ্যা নেতাকর্মী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হচ্ছে

বিগত ৩১ অক্টোবর হতে এ পর্যন্ত উত্তর জেলা বিএনপির ২০৯ জন নেতাকর্মী কারাগারে আটক রয়েছে। এরপরও প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের মধ্যেও নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ডভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। যে কারণে ময়মনসিংহ হতে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চালচাল করছে না-বলেও তিনি দাবি করেন।

আর বিএনপির চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক শাহিনুর রহমান বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের কঠোর অবস্থানের কারনে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে বিএনপি। আগামী দিনেও রাজপথে বিএনপিকে এভাবেই মোকাবিলা করা হবে বলেও হুশিযারি উচ্চারণ করেন এই যুবলীগ নেতা।

তিনি আরও বলেন, ময়মনসিংহের মাটি আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার ঘাটি। এই জেলায় আওয়ামী লীগ শক্তিশালী অবস্থানে আছে। ফলে বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগ সব সময় প্রস্তুত আছে।

অবরোধের মাঠে পরিবহন খাতের অবস্থা বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ময়মনসিংহে বাস চলাচল স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম। কোথাও কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। তবে যাত্রীদের চাপ কম। এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ গোয়েন্দা বিভাগের ইনচার্জ ফারুক আহমেদ বলেন, বিএনপির দেওয়া অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সামনের দিনগুলোতেও পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।