প্রথম বর্ষের শুরু থেকেই আইডি কার্ড সরবরাহ নিশ্চিতকরণ ও ভর্তি বিলম্বের কারণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া জরিমানা মওকুফের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের হাতে ‘টাকা দিয়েছিলাম প্রথম বর্ষে আইডি কার্ড দিবি কোন বর্ষে’, ‘রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে দৌরাত্ম্য বন্ধ করো’, ‘প্রথম বর্ষেই আইডি কার্ড নিশ্চিত করো’- প্রভৃতি প্লাকার্ড দেখা যায়। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা জানান, প্রথমবর্ষে ভর্তির সময় আইডি কার্ড বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু এই আইডি কার্ড স্নাতক শেষ হওয়ার পরও হাতে পান না তারা। এর কারণে নিজেকে শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দেয়ার কোনো উপায় থাকে না বলে উল্লেখ করেন তারা। শিক্ষার্থীরা আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোনো নোটিশ না দিয়ে উল্টো জরিমানা হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১ হাজার করে টাকা নেয় বিভিন্ন বিভাগ, যা অতি দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে মওকুফ করতে হবে। মানববন্ধনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রেদোয়ান ইসলাম রানা বলেন, প্রথম বর্ষের শুরুতে যেখানে আইডি কার্ড দেওয়ার কথা, সেখানে চতুর্থ বর্ষে এসেও কার্ড পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। ফলে ক্যাম্পাসে বাইরে পরিচয় প্রদানে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলে তারা আমাদের নানা সীমাবদ্ধতার কথা শোনান।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীরা কোনো সমস্যা নিয়ে এলে তারা (প্রশাসন) লাঞ্চের পরে আসতে বলে। কিন্তু তাদের লাঞ্চের সময় শেষ হয় না। রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার তিন মাসের মধ্যে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড দিতে পারলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন পারে না? আজকে সমস্যা দূরীকরণের জন্য আমাদের ক্লাস ছেড়ে আন্দোলনে যেতে হয়; তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন আছে?
দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী অদিতি ইসলাম বলেন, প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার সময় আইডি কার্ড বাবদ ৬০০ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু দেখা যায় বিভিন্ন বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরাও সেটা পান না। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু করে ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের অনেক শিক্ষার্থীর আইডি কার্ডের দেখা মেলেনি।
অদিতি বলেন, আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের টনক নড়ে না। আজ শিক্ষার্থীরা হলে সিটের সমস্যা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ সমস্যা সমাধানে বাজেটের সীমাবদ্ধতা দেখায়। কিন্তু বিশেষ সমাবর্তন, মল চত্বরে পার্ক করার সময় তাদের বাজেটে সীমাবদ্ধতা থাকে না। বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, বিনা নোটিশে বাংলা বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগে যে জরিমানা করা হয়েছে অনতিবিলম্বে ফেরত দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। ২০১৭ সালের সিন্ডিকেট কর্তৃক গৃহীত ভর্তিতে বিলম্বিত ফি জরিমানা পদ্ধতি প্রণয়ন করা হয়েছিল, সেটা বাতিল করতে হবে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে আমাদের এই দাবি মেনে নেওয়া না হলে আমরা কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচিতে যাব।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন উল্লেখ করে সহকারী প্রক্টর ড. মুহাম্মদ বদরুল হাসান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, উপাচার্য মহোদয় শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রথমবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা যাতে কার্ড পেয়ে যায়, সেজন্য এরই মধ্যে উপাচার্য একটি অভ্যন্তরীণ সভাও করেছেন। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটা সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের জরিমানা মওকুফের যে দাবি উঠেছে তা সমাধানে উপাচার্য বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে শিক্ষার্থীদের জানান। ভর্তি ফি গ্রহণে যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, তা উপাচার্য দেখবেন বলে জানান ড. বদরুল হাসান।