ঢাকা ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কক্সবাজারে বৈদ্যুতিক তারে আটকে বন্যহাতির মৃত্যু!

কক্সবাজারে বৈদ্যুতিক তারে আটকে বন্যহাতির মৃত্যু!

কক্সবাজারের উত্তর বনবিভাগের ভোমরিয়াঘোনা রেঞ্জে ঈদগাঁওতে বনের করা বাউকুল (বরই) বাগানে বন্যপ্রাণীর উৎপাত ও চুরি ঠেকাতে বসানো চোরাই বৈদ্যুতিক তারে আটকে এক বন্যহাতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার ঈদগাঁও উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের শিয়াপাড়ার ভোমরিয়াঘোনা রেঞ্জাধীন ঝিরিপথ একাকায় এ বন্যহাতির মৃত্যু হয়। গতকাল বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে হাতির দেহটি ওখানেই পুতে ফেলা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় অনেকে জানান, ভোমরিয়াঘোনা ঝিরিপথ এলাকার বনভূমি সামাজিক বনায়নের আওতায় বরাদ্দ পেয়েছেন এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদের ভাই ফিরোজ আহমেদ। তিনি বনায়নের জায়গাটি বর্গা হিসেবে রোহিঙ্গা আবদুল জলিলকে দিয়ে দিয়েছেন। সেখানে বেশ কয়েক বছর ধরে বর্গাচাষি জলিল বাউকুল চাষ করছেন। চলতি বছরও বাগান করা হয়েছে। এর মধ্যে বরই খাবার উপযোগী হওয়ায় বাউকুল বিভিন্ন পশুপাখি, বন্যপ্রাণী ও মনুষ্য চুরির হাত থেকে বাঁচাতে বাগানের চারপাশে জিআই তার দিয়ে চোরাই অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছিল। লাগানো তারের পাশের ঝিরিপথ দিয়ে বনে ফিরে যাওয়ার পথে বিদ্যুৎপৃষ্টে হয়ে পড়ে যায় হাতিটি। ফজরের আজানের আগে থেকে ঘণ্টা দুয়েক সময় বন্যহাতিটি বাঁচার আকুতিতে তার ভাষায় চিৎকার করছিল। সকালে বনবিভাগের লোকজন জলিলের বাড়ি হতে জিআই তারসহ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম জব্দ করে নিয়ে গেছে।

তারা আরো জানায়, হাতির চিৎকার শুনলেও কেউ ভয়ে বের হয়নি। ধান পাকার মৌসুমে হাতিরপাল রাতে এসে খেতের ধান খেয়ে যায়। মৃত হাতিটিও চেয়ারম্যানের খামারের পাশের খেত থেকে ধান খেয়ে বনে ফিরে যাবারকালে তারে জড়িয়ে মর্মান্তিক মৃত্যুর শিকার হয়েছে। হাতির চিৎকার শোনার পর সেই তারের পেলাগটি খুলে ফেললে হয়তো হাতিটি অকালে মারা যেত না। এদিকে, ময়নাতদন্তকারি প্রাণিসম্পদ চিকিৎসকের বরাতে আনুমানিক ৪০-৪২ বছর বয়সি হাতিটি হার্টঅ্যাটাকে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আনোয়ার হোসেন সরকার। তবে, হাতিটির মৃত্যুর আসল রহস্য জানতে ভিসেরা রিপোর্ট করতে দেহের প্রয়োজনীয় সকল অঙ্গ ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ভোমরিয়াঘোনা রেঞ্জ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন খাঁন বলেন, খবর পেয়ে বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে যায়। পরে ডিএফওসহ বনবিভাগের কর্মকর্তাগণ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের ভেটেনারি চিকিৎসকসহ একটি টিম এসে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির পর ময়নাতদন্ত করেছে। ঘটনার পর হতে বাউকুল বাগান করা জলিল পলাতক। স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হাকিম জানান, হাতির মৃত্যুর খবর পেয়ে উৎসুক জনতা ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়। বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নাকি অন্য কারণে মারা গেছে কি না সঠিক জানি না। ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের ভেটেনারি চিকিৎসক জুলকার নাঈন বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে হাতিটি হার্টঅ্যাটাকে মারা গেছে। বৈদ্যুতিক শর্ট বা অন্য কারণেও হার্টঅ্যাটাক হতে পারে। তবে, সরাসরি বৈদ্যুতিক শর্টে মারা গেছে কি না এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ডিএফও আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, ভেটেনারি চিকিৎসক প্রাথমিক রিপোর্টে যা-ই পাক, আসল বিষয় জানার জন্য মৃত হাতির বিভিন্ন অঙ্গ সংগ্রহ করে ঢাকা পাঠানো হচ্ছে। ভিসেরা ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মূলবিষয় নিশ্চিত হওয়া যাবে। আবদুল জলিলের বাসা থেকে বেশকিছু বৈদ্যুতিক তার জব্দ করা হয়েছে। সামাজিক বনায়নের গাছ কাটা ও বৈদ্যুতিক তারের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা করা হবে। ডিএফও আরো বলেন, হাতি রক্ষায় সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশের ফসল ও খেত নষ্ট বা হাতির আক্রমণে কেউ মারা গেলে একটা নির্দিষ্ট অংকের টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে। মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব নিরসনে এ কার্যক্রম বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরপরও হাতি হত্যা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, তার কর্মখালী সময়ে ৫ থেকে ৬টি হাতির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন। হাতি মৃত্যুর ঘটনায় এই পর্যন্ত তিনটি মামলা করা হয়েছে। একজন আটকও হয়েছে বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।

এইদিকে গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কয়েকদফা বাউকুল বাগান করা আবদুল জলিলের বক্তব্য নেয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেও তাকে না পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত