ঢাকা ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আলোচনা সভায় বক্তারা

মানবতার কল্যাণে আত্মনিবেদিত ছিলেন খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা

মানবতার কল্যাণে আত্মনিবেদিত ছিলেন খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা

স্রষ্টার সৃষ্টির কল্যাণে আত্মনিবেদিত একজন আদর্শ মহান ব্যক্তি ছিলেন হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) জীবন, কর্ম আধ্যাত্মিক পরিচর্যা এক ঐসর্গিক অপরূপ আলোকে উদ্ভাসিত। ভারতবর্ষের সুদীর্ঘ ইতিহাসে অধ্যাত্মবাদী এবং সমাজসেবায় ভিন্ন ভিন্ন মানুষের দেখা পেলেও অধ্যাত্মবাদী ও সমাজ সংগঠক এই দুইয়ের সমন্বয় এক ব্যক্তির মধ্যে দৃশ্যমান বিরল। আধ্যাত্মিক উন্নয়নের পাশাপাশি অবিভক্ত বাংলায় শিক্ষা সংস্কার ও সামাজিক উন্নয়নে তাঁর অবদান আজও অবিস্মরণীয়। সৃষ্টিকর্তার আরাধনা, জগতের কল্যাণ এবং একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানিক নিয়মের শৃঙ্খলা এই তিনটি বিপরীতধর্মী শক্তির সমন্বয় যে অসম্ভব নয়, তা সংগঠক হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) দেখিয়ে গেছেন। তাঁর ১৫০তম জন্মবর্ষ উদযাপনের জন্য ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টর মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)-এঁর মানবতার সেবার জীবনাদর্শন বর্তমান প্রজন্মসহ বিভিন্ন মহলের কাছে তুলে ধারার এবং যুব সমাজের মধ্যে তাঁর নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের বিস্তার ঘটানো, যাতে আগামী প্রজন্ম তাদের জীবন নৈতিক মূল্যবোধের আলোকে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়। গতকাল বেলা ১১টায় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘মানবতার সেবায় খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)’ শীর্ষক মাসব্যাপী কার্যক্রমের উদ্বোধনী ও আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

উল্লেখ্য, মাসব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে আছে বিভিন্ন জেলায় ফ্রি চিকিৎসাসেবা, সারভাইক্যাল ক্যান্সার নির্ণয়, তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে সভা-সেমিনার, রক্তদান কর্মসূচি, ইসলামি ফাউন্ডেশনে সেমিনার, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, স্কুল কর্মসূচি, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভিডিও বার্তা প্রচার, বিশেষ প্রকাশনা ইত্যাদি। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)-এঁর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান। এ সময় তিনি বলেন, খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) মানবজাতির কল্যাণে তিনি বিভিন্নমুখী কর্মসম্পাদন করেছেন সক্রিয়ভাবে, তেমনি তার কৃত ও আরাধ্য কাজের কর্মী হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন, মানুষে মানুষে পার্থক্য নিশ্চিহ্ন করতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তার লাখ লাখ ভক্ত-অনুসারীসহ সব মানুষকে। তার সে অনুপম আদর্শ ও শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ ও উজ্জীবিত হয়ে নিরলস আত্ম-নিবেদনে কাজ করে যাচ্ছে ‘ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন’। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য, বিশিষ্ট গবেষক অধ্যাপক ড. এম শমসের আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও কবি জাফর ওয়াজেদ। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য পেশ করেন সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ। এ সময় আলোচক হিসেবে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এএফএম গোলাম শরফুদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মিশনের সহকারী পরিচালক ডা. নায়লা পারভিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি কাজী রফিকুল আলমসহ অনেকে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাফর ওয়াজেদ বলেন, খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) মিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশ ও মানুষের সেবায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেন এবং প্রত্যেককে স্রষ্টা ও সৃষ্টির সম্পর্ক স্বীকার ও উলব্ধি করার পরামর্শ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৩৫ সালে নিজ গ্রাম নলতায় আহ্ছানিয়া মিশন এবং ১৯৫৮ সালে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মূলত একটি বৈষম্যহীন সমাজেরই স্বপ্ন দেখতেন। তিনি সবর্দা দরিদ্র-নিপীড়িত মানুষকে ভালোবাসার মধ্যদিয়ে স্রষ্টার নৈকট্য লাভের সাধনা করেছেন। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্যে ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) ছিলেন নিপীড়িত মানবসমাজ-সংলগ্ন অধ্যাত্ম সাধক। একই সঙ্গে তার মধ্যে ছিল অপরিসীম সাংগঠনিক ক্ষমতা। তিনি সমাজমনস্ক ছিলেন এবং নানামুখী সমাজ উন্নয়নের মধ্যদিয়ে মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মঙ্গলের পথ নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। মিশনের মাধ্যমে তিনি সমাজ ও জীবনমুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন এবং মিশন কর্মীদের দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তাই মাসব্যাপী এই কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য হলো- খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)-এঁর মানবসেবা ও জীবনাদর্শ বর্তমান প্রজন্মসহ বিভিন্ন মহলে তুলে ধরা এবং তার নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ প্রচার করা।

অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক ড. এম শমসের আলী তার বক্তব্যে বলেন, খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) ছিলেন একজন লেখক ও সাহিত্যিক। তিনি অনগ্রসর মুসলমানদের শিক্ষিত করতে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের হোস্টেল, লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি সব সময় উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে শিক্ষা প্রসার করেছিলেন। তাঁর লেখার মধ্যেও সমাজ চিন্তা ও শিক্ষার উন্নয়নের কথা ফুটে উঠেছে। ইঞ্জিনিয়ার এ.এফ.এম গোলাম শরফুদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, মিশনের ‘মুখ্য উদ্দেশ্য’ নির্ধারণের মধ্যে হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)-এঁর মানবসেবার দায়বদ্ধতার উদাহরণ মেলে। তিনি যে একটি ভালোবাসাময় সমাজ জীবনের স্বপ্ন দেখতেন, মানুষে মানুষে সুসম্পর্ক সৃষ্টির কামনা করতেন; তা মিশনের অন্যতম উদ্দেশ্য। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)-এঁর মন ও ভাবনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মানুষের প্রতি তাঁর ছিল অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং মানুষের সেবা করার মধ্যেই তিনি বিমল আনন্দ অনুভব করেছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত