সুসংবাদ প্রতিদিন
বেড়ায় পরচুলা তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নারীরা
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
মানুষের সৌন্দর্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ চুল। চুলের প্রকার যেমনই হোক না কেন, চুল ছাড়া মানুষ এককথায় শ্রীহীন। সুন্দর কেশরাশি একজন মানুষের সৌন্দর্য ও রূপকে পরিপূর্ণতা দেয়। চুল ছেলেদের ব্যক্তিত্বকে বৃদ্ধি করে। একই ক্ষেত্রে চুলকে মেয়েদের অলংকার হিসেবে ধরা হয়। তবে যান্ত্রিক এ যুগে পুরুষ অথবা নারীদের চুল নিয়ে পড়তে হয় নানান বিড়ম্বনায়। নিজেদের আকর্ষণীয় করে তুলতে মাথাভর্তি চুলের বিকল্প নেই। তাই সৌন্দর্যবর্ধনে পুরুষ কিংবা নারী নিয়মিত চুল পরিচর্যার পাশাপাশি যাদের মাথায় চুল কম বা মাথা ফাঁকা হয়ে গেছে, তারা ঝুঁকে পড়ছে পরচুলা বা নকল চুলের দিকে। ফলে বর্তমানে দেশ-বিদেশে পরচুলার চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাবনা বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গার রাকসা ও কাশিনাথপুর টাংবাড়ি পরচুলার টুপি তৈরির বেশ কয়েকটি কারখানা গড়ে উঠেছে। বর্তমানে প্রায় আড়াই শতাধিক নারী পরচুলা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছেন। সম্ভাবনাময় এই শিল্প গ্রামের মেয়েদের স্বাবলম্বীর পাশাপাশি কর্মদক্ষ করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্রীরা এ কাজ করে নিজেদের পড়াশোনার খরচ জোগান দিচ্ছেন। নিজ সংসারের কাজ সেরে গৃহিণীরা এই উপার্জনের অর্থ দিয়ে তাদের সংসারে অতিরিক্ত চাহিদাগুলো পূরণ করছেন। এ পরচুলা ইউরোপে রপ্তানি হলেও ভারত, চীন, জাপান, কোরিয়াতে চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। গ্রামীণ মেয়েরা পরচুলা তৈরি করে অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন করছে। উপজেলার রাকসা গ্রামের সোহেল রানার কারখানায় সরেজমিন কথা হয় কারিগর নবম শ্রেণির ছাত্রী সুলতানা ইয়াসমিনের সঙ্গে। সে বলে, আমি পড়াশোনার পাশাপাশি এ কাজ করে প্রতি মাসে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা উপার্জন করি, যা দিয়ে আমার পড়াশোনার খরচ চালিয়ে সংসারে দিই। একটি টুপি তৈরি করতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে, তবে স্কুল ছুটি থাকলে একদিনেও করা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন ভারেঙ্গার ইউনিয়নের রাকসা, চকপাড়া, পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়নের বকচর ও কাশিনাথপুর টাংবাড়ি গ্রামে পাঁচটি পরচুলা তৈরির কারখানা রয়েছে। এতে প্রায় দুই শতাধিক নারী কাজ করে থাকেন। কারখানার মালিক সোহেল রানার সাথে কথা হলে তিনি জানান, পরচুলা তৈরির এসব উপকরণ আমরা ঢাকা থেকে নিয়ে আসি। পরচুলা তৈরি করে আবার ঢাকায় পাঠানো হয়। আমার এ কারখানায় প্রায় শতাধিক নারীকর্মী কাজ করেন। এই কাজ করে মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করি। নিজেদের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে তারা সংসারের জোগান দিচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, আমাদের এলাকার মেয়েরা অবসর সময়ে বসে না থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি পরচুলা তৈরি করে নিজেদের আর্থিক চাহিদা মিটিয়ে সংসারের হাল ধরে। সরকার যদি এই শিল্প খাতে আর্থিক সহযোগিতা করে, তাহলে দেশে বেকারত্বের হার অনেকটাই কমে যাবে বলে আশা করেন তারা। আমরা এ উদ্যোক্তাকে সাধুবাদ জানাই। বেড়া উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মোছা. রেবেকা সুলতানা জানান, নতুন ভারেঙ্গা, পুরান ভারেঙ্গা, জাতসাখিনী ও আমিনপুরে মোট পাঁচটি পরচুলা তৈরি কারখানা হয়েছে। এখানে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রী, গৃহিণীসহ প্রায় দুই শতাধিক নারী এ কাজের সাথে জরিত। তাদের হাতের তৈরি এই পরচুলা আমাদের দেশ ছাড়াও দেশের বাইরে প্রায় ২৮টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।