আমলাতান্ত্রিক জটিলতা
আটকে আছে ভেড়ামারায় ইপিজেড গড়ার উদ্যোগ
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এএইচএম আরিফ, কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইপিজেড) গড়ে তোলার কার্যক্রম আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে রয়েছে। ২০১৫ সালের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এজন্য ভেড়ামারা উপজেলার চরমোকারিমপুর, আরাজিসারা এবং চর প্রাগপুর মৌজায় প্রায় ৫০৬ একর জমি অধিগ্রহণও করা হয়। কিন্তু এরপর বেশ কয়েক বছর অতিবাহিত হলেও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।
কুষ্টিয়ার সূধীজনরা ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কুষ্টিয়ায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে এখানকার অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার পাশাপাশি মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানে সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ভাগ্য বদলের নিয়ামক হয়ে উঠবে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেলওয়ে এবং সরকারের অব্যবহৃত জমি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় ভেড়ামারা উপজেলার চরমোকারিমপুর, আরাজিসারা এবং চর প্রাগপুর মৌজাকে বেছে নেওয়া হয় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য। ২০১৭ সালের ১০ জুন স্থানীয় জেলা প্রশাসন ৩১২ একর খাস জমির দলিল প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। তবে এরপর থেকে এ প্রকল্পের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এখনো দফায় দফায় স্থান পরিদর্শনের মধ্যেই রয়ে গেছে কার্যক্রম।
জানা যায়, সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কর্মকর্তারা মোকারিমপুর ইউনিয়নের গোলাপনগর বন্দোবস্তকৃত জমি পরিদর্শন ও মতবিনিময় করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও বেজার নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী আহসান, যুগ্ম সচিব ও বেজার বিনিয়োগ উন্নয়নের মহাব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান, উপসচিব ও বিনিয়োগ উনয়ন-১ এর ব্যবস্থাপক আবু হেনা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল এবং সোশ্যাল কনসালটেন্ট আব্দুল কাদের খান প্রমুখ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, গ্যাস সহজলভ্যতার জন্য দেশের ২২টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে উপযোগী স্থান হিসেবে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলাকে বিবেচনা করে ভারত সরকার এবং সে দেশের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা মনে করেন, ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে এ এলাকায় তথা কুষ্টিয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন হবে। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
সূত্র জানায়, ভারতের টাটাসহ চীন ও জাপানের একাধিক খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে এখানে বড় ধরনের বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনের এমপি, সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ভেড়ামারা এলাকায় একটি অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করা। সে লক্ষ্যে ভেড়ামারা লালন শাহ সেতুর উত্তর পাড়ে রেলওয়ের জায়াগাও নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এর বেশি কোনো কার্যক্রম নজরে আসছে না। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকা শক্তিকে আরও গতিশীল করতে অতি শিগগিরই সরকার ভেড়ামারায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেকসোনা খাতুন বলেন, ভেড়ামারায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বন্দোবস্তকৃত জমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিদর্শন করে গেছে অনেক আগেই। সেখানে বসবাসরত অধিবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়। অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে অনেক আগেই প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করে বেজার নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এর বেশি কোনো অগ্রগতির খবর জানা নেই। স্থানীয় বাসিন্দা মোকারিমপুর ইউনিয়ন জাসদের সভাপতি অ্যাডভোকেট তানজিলুর রহমান এনাম বলেন, রেলওয়ে বিভাগের থেকে জমি কেনা হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন বেজার অধিগ্রহণকৃত এই জমি। কিন্তু দুঃখের বিষয় দীর্ঘদিন ধরে এ জায়গায় কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকাশ কুমার কুণ্ডু জানান, ভেড়ামারায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে অনেক আগেই জমি বেজার নামে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
ভেড়ামারা রেলবাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু দাউদ বলেন, জমি অধিগ্রহণের পর কিছুদিন ভেড়ামারায় অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের তোড়জোড় ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও জাসদের রাজনৈতিক টানাপড়েনের কারণে এটি বাস্তবায়ন মুখ থুবড়ে পেড়েছে। ৪-৫ বছরের মধ্যে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতো। ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র শামিমুল ইসলাম ছানা বলেন, ভেড়ামারায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার যে উদ্যোগ এটা সম্পূর্ণ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। আজ ৫-৬ বছর হলো জমি বেজার নামে রেজিস্ট্রি হয়েছে। আমি এ সময় সাক্ষী ছিলাম। তবে এর বেশি আমার কোনো কিছু জানা নেই। স্থানীয়দের দাবি সরকারের প্রস্তাবিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক।