নারিকেল, সুপারি ও চিংড়ি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত জেলা বাগেরহাট। জেলায় এবার সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই সব থেকে বেশি সুপারির ফলন হয়েছে। তবে এবছর জেলায় গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে সুপারির দাম। এতে পান-সুপারি খাওয়া মানুষগুলো খুশি হলেও সুপারি চাষিরা অখুশি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাট জেলায় ৩ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে সুপারির চাষ হয়েছে। এতে প্রায় ২৬ হাজার ১২৩ টন সুপারি উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ১ হাজার কোটি টাকার উপরে। দিন দিন সুপারির চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দাবি সরকারি এই দপ্তরটির। গোপালপুর গ্রামের মোহাম্মাদ আলী বলেন, প্রতিটি গাছের সুপারি পাড়াতে ১০ টাকা দিতে হয়। এর পরে ভ্যানভাড়া ও বাজারের খাজনা রয়েছে। সুপারি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর মোল্লা বলেন, গেল বছরে যে সুপারির কুড়ি ৮০০/- টাকা কিনেছি, এবার তার দাম ৪০০/- টাকা। আর সর্বনিম্ন কিনছি ১৫০/- টাকা। সুপারির দাম কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ী সাগর মজুমদার বলেন, সুপারির ফলন যেমন বেশি, তেমনি বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ শুকনো সুপারি আমদানি করেছে কিছু ব্যবসায়ী। যার কারণে রংপুর, বগুড়াসহ বিভিন্ন বড় মোকামে সুপারির কোনো ঘাটতি নেই। বাধাল ছাড়াও, কচুয়া, বৈলপুর, মাজারমোড়, কালিকাবাড়ি, দৈবজ্ঞহাটি, পোলেরহাট, সিএন্ডবি বাজারসহ বেশকিছু হাটে সুপারি বিক্রি হয়। সুপারির ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে বাগেরহাটের ৫ শতাধিক ব্যবসায়ীসহ ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক জড়িত রয়েছে। সুপারির নতুন বাজার সৃষ্টি হলে, সুপারি চাষি ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। জেলায় উৎপাদিত এসব সুপারি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় বড় বাজারে বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা এই সুপারি ক্রয় করে পাঠান দেশের বিভিন্ন বড় শহরে। রপ্তানিও হয়ে থাকে সামান্য কিছু। অবশিষ্ট সুপারি পানিতে ভিজিয়ে এবং শুকিয়ে অফসিজনে চরা দামে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। যেসব বাজারে সব থেকে বেশি সুপারি বিক্রি হয়, তার মধ্যে কুচয়া উপজেলার বাধাল বাজার অন্যতম। বাধাল বাজারে হাটের দিনে কয়েক কোটি টাকার সুপারি বিক্রি হয়। সপ্তাহে রবি ও বৃহস্পতিবার দুই দিন বসে এই হাট। ভোর ৬টা থেকে শুরু করে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে ক্রয় বিক্রয়। এই হাটে সুপারি বিক্রি হয় কুড়িতে। এক কুড়ি সমান ২৩১টি সুপারি। গত বৃহস্পতিবার সকালে বাধালবাজারের সুপারির হাটে দেখা যায়, বড় সুপারি প্রতি কুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, যা গেল বছর ছিল ৭৫০ থেকে সাড়ে ৮০০ টাকা। মাঝারি সুপারি কুড়ি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, ছোট ও কাঁচা সুপারি আকার ভেদে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যা গেল বছরের থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কম। পুটিয়া থেকে সুপারি বিক্রি করতে আসা মোজাহের শেখ বলেন, এবার সুপারির দাম অনেক কম। তিন কুড়ি সুপারি নিয়ে আসছিলাম ১২‘শ টাকা বিক্রি করেছি। আগের বছর হলে অন্তত ১৬‘শ টাকা বিক্রি করতে পারতাম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, বাগেরহাট সুপারি প্রধান জেলা। এবার সুপারির ফলন অনেক ভালো হয়েছে। সুপারির ফল বৃদ্ধির জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ফলনের সঙ্গে-সঙ্গে যাতে কৃষকরা ভালো দাম পেতে পারে এজন্য নতুন বাজার সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। জরুরি না হলে এবং মৌসুমের সময় সুপারির আমদানি বন্ধ রাখলে কৃষকরা ভালো দাম পাবে বলে মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।