বাড়ছে নানা জটিলতা
অভিভাবকশূন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
জবি প্রতিনিধি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক মারা গেছেন গত ১১ নভেম্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোভিসি বিধি না থাকায় উপাচার্যের অবর্তমানে রুটিন দ্বায়িত্ব পালন করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ। এরই মধ্যে গত রোববার (২৬ নভেম্বর) কোষাধ্যক্ষের চার বছর কার্যকাল শেষ হয়েছে। তবে উপাচার্যের মৃত্যুর আঠারো দিন ও কোষাধ্যক্ষের কার্যকাল শেষ হলেও গুরুত্বপূর্ণ এই দুই পদে নতুন কোনো প্রজ্ঞাপন আসেনি। ফলে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রয়াত উপাচার্যের দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকা এবং ইন্তেকালের দীর্ঘদিন পার হলেও নতুন দ্বায়িত্ব না আসায় স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম। গুরুত্বপূর্ণ এ দুই পদ খালি থাকায় বাড়ছে জটিলতাও।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫ এর ১৮(২) ধারা অনুযায়ী, ‘প্রতি দুই মাসে সিন্ডিকেটের কমপক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বলা আছে। কিন্তু নানাবিধ কারণে দীর্ঘ নয় মাস ধরে হচ্ছে না জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) পূর্ণাঙ্গ সিন্ডিকেট সভা। ফলে শিক্ষক পদোন্নতি, প্রভাষক পদে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি স্থায়ীকরণ, একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন, বিভিন্ন ফলাফল প্রকাশ, এমফিল পিএইচডিতে অনুমোদন, ছুটি সংক্রান্ত নির্দেশনা আর পদন্নোতির আবেদনের কাজ সিন্ডিকেটের অভাবে আটকে আছে নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে।
এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি অতিদ্রুত উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে সব কিছু সচল করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। সব কাজ থমকে গেছে। সব কিছু গতিশীল করতে খুব দ্রুতই সৎ যোগ্য এবং বঙ্গবন্ধু আদর্শে বিশ্বাসী এমন একজন শিক্ষককে দ্বায়িত্ব দেয়া হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও নীল দলের অপর অংশের সভাপতি অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কিছুই স্থবির হয়ে আছে। সরকারের কাছে দাবি থাকবে, দ্রুতই উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া। কোষাধ্যক্ষ পদে দুয়েকদিন পরে দিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে উপাচার্য নিয়োগ দেয়া জরুরি। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-কোষাধক্ষ্যের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্র। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইউসুফ আরেফিন বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে ফাইল গেছে।’
তবে এই গোপন তালিকায় কে কে আছে জানা না গেলেও উপাচার্য পদে চেষ্টা করছেন একাধিক শিক্ষক। জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়াসন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ডা. তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস ছামাদ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, কলা অনুষদের ডিন বিজয় একাত্তর হল প্রাধ্যক্ষ এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল বাছির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি নিজামুল হক ভুইয়া, সাধারণ সম্পাদক ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা। উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও জগন্নাথ হলের পত্র অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া, অধ্যাপক ড. আশরাফুল আলম, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম এবং অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম। এবং উপাচার্য হতে নানা রকম তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী কোষাধ্যক্ষ ও চবির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিতর্কিত কামালউদ্দীন আহমদ।
এছাড়া কোষাধ্যক্ষ পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নীল দলের সভাপতি অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ, নীল দলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান, সাবেক ডিন ও জয় বাংলা শিক্ষক সমাজের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ, অ্যাকাউন্টিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আলী নূর ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির এবং অধ্যাপক ড. জাকির।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. একেএম লুৎফর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স আঠারো পেরিয়ে গেলেও নিজস্ব উপাচার্য কোষাধ্যক্ষ পায়নি বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বশেষ উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষও ছিলো বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৬ জন প্রথম সারির অধ্যাপক রয়েছে। আমাদের দাবি দ্রুত জগন্নথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকে এই দ্বায়িত্ব দেয়া হোক।