ঢাকা ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিপ্লব উদ্যান ভেঙে ফেলার উদ্যোগ রুদ্ধ হবে খোলা পার্কে বিচরণের পথ

বিপ্লব উদ্যান ভেঙে ফেলার উদ্যোগ রুদ্ধ হবে খোলা পার্কে বিচরণের পথ

চট্টগ্রাম নগরীতে চলছে মুক্ত পরিবেশের পার্কের আকাল। আর এ সময় পার্কগুলো নানা কারণে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নগরীতে আর এক চিলতে খোলা চত্বরে সামান্য সবুজ ঘাস ছিল ষোলশহর ২নং গেটের কাছে বিপ্লব উদ্যানে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এই উদ্যান ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে ভাঙার প্রাথমিক কাজও সম্পন্ন করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এই উদ্যান ভেঙ্গে ফেললে নগরীতে খোলা পার্কে বিচণের পথ আরো রুদ্ধ হবে। দাবি উঠেছে পার্ক না ভেঙ্গে আগের অবয়বে রক্ষা করার। তাতে পার্কের মর্যাদা সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ থাকবে।

জানা গেছে, নগরীতে বিভিন্ন সময় পার্ক কিংবা উন্মুক্ত স্থান সংকুচিত করে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ষোলশহর এলাকার বিপ্লব উদ্যানের সবুজ ধ্বংসের উদ্যোগ আগেই নেয়া হয়েছিল। নানা প্রতিষ্ঠানের আপত্তির মুখে তা কখনো বাস্তব রুপ লাভ করতে পরেনি। এটি ভাঙার প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৮ সালে। ওই বছর স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্টস লিমিটেড ও রিফর্ম লিমিটেড নামে বেসরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে চসিক। সৌন্দর্যবর্ধনের নামে ২০ বছরের জন্য সেখানে ২০টি খাবারের দোকান করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ওই সময় আপত্তি তোলে নগরবাসী। তাতে কোনো কাজ হয়নি। গেল ২২ আগস্ট নতুন করে আরেকটি চুক্তি করে চসিক। চুক্তি অনুযায়ী রিফর্ম কনসোর্টিয়াম কয়েক দিন আগে কাজও শুরু করেছে। বর্তমানে সেখানে কংক্রিটের অবকাঠামো আছে ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ। দোকানসহ তার পরিমাণ ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ। সবুজ আছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। সবুজ অংশের ভেতর রয়েছে কিছু বড় গাছ এবং কিছু আর্টিফিসিয়াল গাছ ও ঘাস। এখন নতুন চুক্তি অনুযায়ী, উদ্যানের পূর্ব পাশে দোতলায় ২০০ ফুট দীর্ঘ স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। সেখানে হবে কফি শপ। তার একটি অংশে দোতলায় চট্টগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-সংবলিত জাদুঘরসহ প্রদর্শনী কেন্দ্র থাকবে। ওইটুকু জায়গায় কেন মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর করা হবে, সেটিও বোধগম্য নয় অনেকের কাছে। প্রশ্ন উঠেছে পার্ক ভেঙ্গে জাদুঘর না করে অন্য কোথাও করা যায় না?

জানা গেছে, পার্কের পূর্ব পাশে জাতীয় পতাকার আদলে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম দ্বারা তৈরি একটি কাঠামো হবে। ওই কাঠামোর নিচে কিডস বা গেমিং জোন করা হবে। কাঠামোটা হেলানো অবস্থায় করা হবে। তাই পূর্ব পাশে বিদ্যমান খালি জায়গা কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে কাঠামোর ওপর, নিচ ও দুই পাশে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের লোগো প্রদর্শন করা হবে। উদ্যানে ১ হাজার ৩০০ বর্গফুটের দুটি স্টিলের কাঠামোর ভেতর গেমিং জোন করা হবে। ২৫টি ডিজিটাল স্ক্রিন, বিলবোর্ড বা মেগা সাইন স্থাপন করার সুযোগ আছে চুক্তি অনুযায়ী। এমনকি ডিজিটাল স্ক্রিন, মেগাসাইন, এটিএম বুথ, কিয়স্ক, প্রদর্শনী কেন্দ্র, কিডস এক্সপেরিয়েন্স বা গেমিং জোন স্থাপন করারও সুযোগ আছে চুক্তিতে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নগরীর যে কোনো স্থানে কোনো অবকাঠামো করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বা সিডিএ’র অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। অভিযোগ রয়েছে, সেটাও মানছে না চসিক। সিডিএ’র প্রকৌশলীরাই বিভিন্ন সময় বলেছেন, একটি শহরে ন্যূনতম ৪০ শতাংশ উন্মুক্ত জায়গা থাকা প্রয়োজন। আমাদের ১০ থেকে ২০ শতাংশও নেই। চট্টগ্রাম শহরে আগে থেকে যেসব উন্মুক্ত জায়গা ছিল সেগুলোও আমরা হারিয়ে ফেলেছি। বিশ্বের দশটি ক্রমবর্ধমান নগরের মধ্যে চট্টগ্রাম একটি। কিন্তুদুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এর বিকাশটি পরিকল্পনা মাফিক হয়নি। এখনো হচ্ছে না, কবে হবে তাও কেউ জানে না। নগরীর ২ নম্বর গেট এলাকার বাসিন্দা আবদুস সাত্তার বলেন, বিপ্লব উদ্যান স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক স্মৃতি বহন করে। লোকজনের অবসর সময়ের বিনোদন বা ঘুরার একটি প্রিয় জায়গা ছিল। এটির বর্তমান অবয়র ভেঙ্গে ফেললে একটি পার্ক ধ্বংস হবে তাতে সন্দেহ নেই। আমরা বর্তমান অবয়র ধরে রাখার অনুরোধ করব চসিকের কাছে। তবে চসিকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বিপ্লব উদ্যান সংস্কার করা হবে। আরো উন্নত আদলে অবকাঠামো তৈরি করা হবে। নগরবাসী বিশেষ করে ২ নম্বর গেট এলাকার লোকজনকে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো দরকার নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত