ময়মনসিংহ সদর ৪ আসন
শান্তর নৌকা মনোনয়নে উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ময়মনসিংহ ব্যুরো
ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের বটবৃক্ষ হিসেবে পরিচিত প্রয়াত ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের পুত্র মোহিত উর রহমান শান্ত নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে বিভাগীয় নগরের হেভিওয়েট এই আসনের নৌকার সমর্থক এবং সাধারণ মানুষ একজোট হয়েছেন। উৎফুল্ল নেতাকর্মীদের নিয়ে গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ময়মসনসিংহের জেলা প্রশাসক ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজার রহমানের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মোহিত উর রহমান শান্ত। এ সময় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, শান্তর চাচা ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মমতাজ উদ্দিন মন্তা, জেলা যুবলীগের সভাপতি আজহারুল ইসলামসহ ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
শান্ত মনোনয়ন জমা দিতে আসার খবর পেয়ে দুপুরের পর থেকেই শত শত নেতাকর্মী জড়ো হয় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে। এ সময় তারা টানা ১৫ বছর পর বিভাগীয় নগরের এই হেভিওয়েট আসনে শান্তকে নৌকার মাঝি করায় জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ সময় ‘ডামি প্রার্থী’ বা স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ অবস্থান বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান জেলা যুবলীগের অন্যতম সদস্য এবিএম আকতারুজ্জামান রবিন বলেন, প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের ছেলে মনোনয়ন পেয়েছে, এর চেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত আর কি হতে পারে? আর এ কারণেই দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষও উচ্ছ্বাসিত।
এ সময় পাশে দাঁড়ানো আরো কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এগিয়ে এসে রাজনীতিতে শান্ত পরিবারের অবদান ও অতীত স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ১৯৯০ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বাবার হাত ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন শান্ত। এরপর শহর শাখা ছাত্রলীগের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক, শহর ছাত্রলীগ ও আনন্দ মোহন কলেজ শাখা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আর এসব কারণেই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০২ সালে ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে বোমা হামলার অভিযোগে বাবা অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সঙ্গে ছেলে শান্তও গ্রেপ্তার হয়ে টানা দেড় মাস কারাভোগ করেন। এছাড়াও বিএনপি শাসনামলে আরো একবার গ্রেপ্তার হয়ে ১৭ দিন কারাভোগ করেন শান্ত।
একই আসনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলমসহ আরো অনেকেই। তবে শেষতক জননেত্রী শেখ হাসিনা শান্তকে নৌকার মাঝি করায় নেত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে এহতেশামুল আলমসহ অন্যরাও।
জানতে চাইলে এহতেশামুল আলম বলেন, আমরা মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও জননেত্রীর সিদ্ধান্তে আমরা সবাই এক। ঐক্যবদ্ধভাবেই সবাই নৌকার পক্ষে কাজ করছে। এতে এই আসনে নৌকার বিজয় ইনশাআল্লাহ নিশ্চিত বলেই আশা করছি। তবে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও নৌকার মাঝি মোহিত উর রহমান শান্তর কোনো বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এদিকে মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিনে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রার্থীদের মনোনয়ন দাখিল শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়মসনসিংহের জেলা প্রশাসক ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ অনেকেই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত সঠিক পরে জানানো হবে।
অপরদিকে এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে শেষতক মনোনয়ন জমা না দেওয়ায় শান্তর বিপরীতে মাঠে আর কোনো শক্তিমান প্রার্থী নেই বলে মনে করছে নৌকার সমর্থকরা।
এই অবস্থায় স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেওয়ায় নির্বাচনি আলোচনায় নতুন করে গুঞ্জন সৃষ্টি করেছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান দুলু। তবে সংস্কারপন্থি হিসেবে দল থেকে ছিটকে পড়ায় প্রায় এক যুগের অধিক সময় ধরে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে তার কোনো যোগসূত্র নেই। যদিও সাধারণ মানুষের মাঝে তাকে নিয়ে রয়েছে নানা গুঞ্জন। ফলে ভোটের মাঠে তিনি কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারবেন তা নিয়ে জনমনেও রয়েছে নানা সংশয়।
সূত্রমতে, ময়মনসিংহ-৪ সদর আসনে মোহিত উর রহমান শান্ত ছাড়াও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টি থেকে আবু মূসা সরকার, জাসদের অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু, স্বতন্ত্রপ্রার্থী বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি দেলোয়ার হোসেন খান দুলুসহ ন্যাপ ও আরো কয়েকজন প্রার্থী।