পারাপারে হরতাল-অবরোধের প্রভাব

আয়ের ভাটা মাঝিপাড়ায় যাত্রী কমায় মাঝি ঘুমায়

প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাজেদুর রহমান, জবি

ঢাকার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে খ্যাত ঐতিহাসিক বুড়িগঙ্গা নদী। পুরান ঢাকার গোড়াপত্তন ঘটে এ নদীকে লক্ষ্য করে। ঢাকার অর্থনীতিজুড়ে আছে নদীটির লম্বা ইতিহাস।

সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় বুড়িগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে দেশের প্রথম রাজধানী ঢাকা প্রতিষ্ঠিত হয়। নদীটি হয়ে ওঠে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের জীবিকার উৎস। এখনো তার প্রভাব কমে যায়নি। ফলে ঢাকার অর্থনীতিতে এ নদীর গুরুত্ব এখনো দৃশ্যমান। এসব পেশাজীবীদের মধ্যে বড় একটি অংশ নৌকা চালিয়ে জীবনযাপন করে। তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র এ পেশায় ভাটা পড়েছে। চলমান সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর ডাকা অবরোধে যাত্রী কমেছে সড়ক, রেলপথ ও নৌপথে। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর খেয়া পারাপারেও। যাত্রী কম থাকায় আয় কমেছে তাদের। ফলে পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। গত বুধবার বুড়িগঙ্গা নদীর ওয়াইজঘাট, শ্যামবাজার, ফরাশগঞ্জ, বাদামতলী, মিটফোর্ড ঘাট, রহমান ঘাট ও তেলঘাট ঘুরে সরেজমিন দেখা যায়, যাত্রীর অপেক্ষায় বসে আছেন মাঝিরা। ডাকাডাকি করেও যাত্রী পাচ্ছেন না তারা। দুইজন যাত্রী পেলেও নৌকা ছাড়ছেন অনেকে। আগে যেখানে ঘাটে নৌকা পৌঁছালে যাত্রীরা ওঠার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠত। এখন সেখানে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট গড়িয়ে গেলেও যাত্রী আসছে না। কখনো ঘণ্টাও পেরিয়ে যাচ্ছে। মাঝিরা জানিয়েছেন, ২৮ অক্টোবর থেকে যাত্রী সংকট শুরু হয়েছে। সকাল ও বিকালের দিকে যাত্রী বেশি থাকে। এর মধ্যে সকালের যাত্রীর সংখ্যাই বেশি, এ সময় ব্যবসায়ী চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীরা বেশি পারাপার হয়। বেলা বাড়ার সাথে যাত্রীসংখ্যা কমতে থাকে। যাত্রী কমায় আয় কমেছে তাই পরিবার নিয়ে কষ্টে আছি।

শ্যামবাজার থেকে মাঝি ফজল মিয়া বলেন, বিএনপির যেকোনো সভা-সমাবেশ হলেই ঘাটে যাত্রী কমে যায়। আমাদের তো আর মাস গেলে বেতন না। যেদিন যা আয় করি তা দিয়ে চলতে হয়। একদিকে দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি আবার অবরোধের কারণে যাত্রী কম। এমনি সময় দিনে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করি। অবরোধে এখন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা আয় হচ্ছে। এ আয় নিয়ে সংসার চালানো কঠিন। ওয়াইজঘাট থেকে মাঝি মানিক হোসেন বলেন, অবরোধের কারণে আমাদের আয় কমেছে। যে টাকা আয় করি তা দিয়েই সংসার চালাতে হয়। বাড়ি ভাড়া, খাবার, কিস্তি, সন্তানদের খরচ সব এর মধ্যেই। নৌকা মালিকদের প্রতিদিন ১০০ টাকা করে দিতে হয়। বাজারে শাকসবজি, মাছসহ যাবতীয় সব জিনিসের দাম বেশি। এত খরচ করে টিকে থাকা কঠিন। মিটফোর্ড ঘাট থেকে মাঝি মনজ দে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে এ ঘাট দিয়ে অনেক যাত্রী নৌকা পারাপার হয়। আমাদের মাঝিদের আয়ও ভালো হয়। মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাত্রীরা এ ঘাট বেশি ব্যবহার করে। কিন্তু এ অবরোধের কারণে রোগীরা হাসপাতালে কম আসছে। এজন্য আয় কম হচ্ছে। যেদিন অবরোধ থাকে না সেদিন আবার এ ঘাটে যাত্রী বেশি থাকে। এ বিষয়ে বাদামতলী ঘাট থেকে মাঝি আজগর আলী জানান, ফল ব্যবসায়ীরা এ ঘাটটি বেশি ব্যবহার করে। অবরোধের কারণে ব্যবসায়ীরা দোকানে কম আসছে। কারণ এখন ব্যবসা খারাপ। ফল কেনার জন্য অনেক ক্রেতাও এই ঘাট ব্যবহার করে। হরতাল অবরোধের কারণে ক্রেতারাও কম আসছে। তারা কম আসছে বিধায় আমার যাত্রী কম হচ্ছে এবং আয়ও কম হচ্ছে। আমাদের মাঝিদের আয় অর্ধেকে নেমে গেছে। বাজারের যে অবস্থা এভাবে প্রতিদিন আয় কম হতে থাকলে সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে।