গাজায় ইসরাইলের হামলা

একদিনে ১০৯ ফিলিস্তিনির মৃত্যু

প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সময় শেষ হওয়ার পরপরই গতকাল অবরুদ্ধ গাজায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে একদিনে নতুন করে ১০৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। এছাড়া বিমান হামলায় আহত হয়েছেন আরও কয়েকশ মানুষ। গত ২৪ নভেম্বর হামাসের সঙ্গে প্রথমে চারদিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল ইসরায়েল। এরপর দুই দফায় এটির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। তবে গতকাল যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি হামাস-ইসরায়েল। এরপর শুক্রবার সকাল থেকেই নির্বিচারে ছোট্ট এ উপত্যকায় হামলা চালানো শুরু করে দখলদার ইসরায়েলি সেনারা। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার সকালে ওই হামলা চালানো হয়। অপরদিকে গাজার উত্তরাঞ্চলে হামলার ঘটনায় দুই শিশু নিহত হয়েছে। আল আহলি হাসপাতালের চিকিৎসক ড. ফাদেল নাইমের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় ওই দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গাজা উপত্যকায় হামাসের সঙ্গে পুনরায় লড়াই শুরু হয়েছে বলে জানায় ইসরাইল। সেখানে যুদ্ধবিরতি শেষ হতে না হতেই দুপক্ষের মধ্যে আবারো লড়াই শুরু হয়েছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। সামাজিকমাধ্যমে এক পোস্টে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, হামাস ইসরাইলে হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলের পক্ষ থেকে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। যুদ্ধবিরতি চলাকালীন গাজায় জিম্মি হিসেবে আটকে রাখা ১১০ জনকে মুক্তি দিয়েছে স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। অপরদিকে কারাগার থেকে ২৪০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরাইল।

গাজায় ৬০ শতাংশ বাড়ি ধ্বংস : ইসরাইলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ৬০ শতাংশের বেশি বাড়িঘর ও আবাসিক ইউনিট ধ্বংস করেছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলছে, ‘ইসরাইলি দখলদার সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায়, বিশেষ করে গাজা ও উত্তর গাজা গভর্নরেটের ৬০ শতাংশেরও বেশি বাড়িঘর ও আবাসিক ইউনিট ধ্বংস করার কারণে আমাদের জনগণ সত্যিকারের এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে।’ এতে বলা হয়েছে, ‘৫০ হাজারেরও বেশি পরিবার তাদের বাড়িঘর সম্পূর্ণভাবে হারিয়েছে। অন্যদিকে আড়াই লাখ আবাসন ইউনিট ইসরাইলি হামলার কারণে আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।’ গাজার স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা সম্পর্কে মিডিয়া অফিস বলেছে, ‘অঞ্চলটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখনও গুরুতর বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। বোমা হামলা, দখল, ধ্বংস ও হাসপাতাল উড়িয়ে দেওয়ার কারণে ২৬টিরও বেশি হাসপাতাল ও ৫৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।’ অফিসটি উল্লেখ করেছে, ‘হাজার হাজার নিহতের মরদেহ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে এবং সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি ও জ্বালানি সংকটের কারণে বেসামরিক প্রতিরক্ষা দলগুলো এখনও তাদের উদ্ধার করতে পারেনি।’ গাজার পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় এবং কার্যকর সহায়তা বহনকারী দৈনিক ১ হাজার ট্রাক এবং দৈনিক ১০ লাখ লিটার জ্বালানি প্রয়োজন বলেও জোর দিয়ে জানিয়েছে মিডিয়া অফিস। এছাড়া গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সংঘটিত অপরাধের জন্য ইসরাইল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সম্পূর্ণরূপে দায়ী বলেও জানিয়েছে তারা। এই পরিস্থিতিতে ‘জরুরিভিত্তিতে মানবিক সাহায্যের প্রবেশ এবং আরও বৃহৎ সংখ্যক ট্রাকের প্রবেশে বিলম্ব বা বাধা না দেওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছে গাজার মিডিয়া অফিস।

হামাসের হাতে বন্দি থাকা ৮ জিম্মির মুক্তি : গাজা যুদ্ধবিরতি সপ্তম দিনে হামাস কর্তৃপক্ষ আট জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। মুক্তি প্রাপ্ত এসব জিম্মির মধ্যে উরুগুয়ে, মেক্সিকো এবং রাশিয়ার দ্বৈত নাগরিকও রয়েছে। মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার গতকাল একথা জানিয়েছে।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে আজ আটজন ইসরাইলি নাগরিককে মুক্তি দেওয়া হয়। এদের মধ্যে দুইজন নাবালক এবং ছয় জন নারী রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, গাজায় বন্দি থাকা মোট ১০ জিম্মির বিনিময়ে ফিলিস্তিনের ৩০ নাগরিককে ইসরাইইল কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।