মংলা সমুদ্রবন্দর
বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বাগেরহাট প্রতিনিধি
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষ। দিবসটি উপলক্ষ্যে গতকাল সকাল ১০টায় পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন শুরু করা হয়। পরে বন্দর জেটিতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কেক কাটা, সর্বোচ্চ বন্দর ব্যবহারকারীদের ক্রেস্ট প্রদান, কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য নির্বাচিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের ক্রেস্ট প্রদান, বিদায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। মংলাবন্দরের অগ্রগতি কামনায় দোয়া অনুষ্ঠান এবং মধ্যাহ্ন ভোজের মধ্যদিয়ে শেষ হয় বন্দরের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতা। বন্দর কর্তপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশন খুলনার সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. রফিকুল ইসলাম, ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিম চৌধুরী, মো. সুলতান হোসেন খান, মংলা কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশন। এছাড়াও সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা, বন্দরের পদস্থ কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতা, গণমাধ্যম কর্মী, সিবিএ নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদিরা। ৭৩ বছর আগে ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর দেশের সামুদ্রিক বন্দর হিসেবে যাত্রা শুরু করে মংলা। একই বছর ১১ ডিসেম্বর পশুর নদীর জয়মনির ঘোলে ‘দি সিটি অব লিয়নস’ নামক একটি ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙরের মাধ্যমে প্রথম মংলা বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৮৭ সালের পোর্ট অব চালনা অথরিটি অ্যাক্ট অনুসারে প্রথমে চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং পরবর্তীকালে মংলা পোর্ট অথরিটি নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, আগামী দিনে মংলা বন্দর আরো কর্মচঞ্চল ও স্মার্ট বন্দর হিসেবে বিশ্বের বুকে সমুন্নত হবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাণপ্রবাহ এ বন্দরটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বর্তমানে খাদ্যশস্য, সিমেন্ট ক্লিংকার, সার, মোটর গাড়ি, মেশিনারিজ, চাল, গম, কয়লা, তেল, এলপিজি গ্যাস আমদানি এবং সাদা মাছ, চিংড়ি, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, হিমায়িত খাদ্য, কাঁকড়া, ক্লে টাইলস, রেশমি কাপড় ও জেনারেল কার্গো রপ্তানির মাধ্যমে দেশের চলমান অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে। এই বন্দরকে ঘিরে আগামী দিনে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক হামে পরিণত হবে।
সভাপতির বক্তব্য মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী বলেন, মংলা বন্দরের চলমান ড্রেজিংয়ের ফলে সম্প্রতি ৬০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে বন্দরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো লাইবেরিয়ান পতাকাবাহী জাহাজ এম ভি মানা সরাসরি মংলাবন্দরে আগমন করে। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো বন্দর জেটিতে ৮.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়েছে। ২০২২-২৩ ইং অর্থবছরে বন্দরে ৮২৭টি বাণিজ্যিক জাহাজ আগমন করে ও ৯৯.০৫ লাখ মেট্রিক টন কার্গো, ২৬৫৮৩টি ইউজ কনটেইনার হ্যান্ডলিং, ১৩ হাজার ৫৭৬টি গাড়ি আমদানি এবং ৩০,২৪১.৬৮ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে সক্ষম হয়েছে। মংলাবন্দরকে আরো আধুনিক ও বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু প্রকল্প চলামান রয়েছে। বন্দর চ্যানেলের নাব্যতা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ, কার্গো ও কনটেইনার সংরক্ষণের সুবিধাদি বৃদ্ধি এবং আধুনিক সরঞ্জাম সংগ্রহসহ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ করা হবে। এ ছাড়া আধুনিক কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, জয়মনিরঘোলে কার ইয়ার্ড নির্মাণ, জয়মনিরঘোলে মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ, আকরাম পয়েন্টে ভাসমান জেটি নির্মাণ (সমীক্ষায় সুপারিশকৃত হলে), হিরণ পয়েন্ট পাইলট স্টেশনের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এবং জ্যাফর্ড পয়েন্টে লাইট হাউস ও ভবন নির্মাণ, যাবতীয় সুবিধাদিসহ হেলিপ্যাড ও হ্যাঙ্গার নির্মাণ ও হেলিকপ্টার ক্রয়, উদ্ধারকারী জলযান সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া বন্দরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলমান যার মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বন্দরের ১৩ গুণ সক্ষমতা বাড়বে।