চট্টগ্রামে নিয়মিত শনাক্ত হচ্ছে এইডস রোগী। সচেতনতার অভাবে মূলত ধীরে ছড়াচ্ছে এইডস। চিকিৎসকরা বলছেন, এখনই পরীক্ষার উদ্যোগ না নিলে দ্রুত ছড়াতে পারে। সেই সাথে চট্টগ্রামে বাড়তে পারে আক্রান্তের সংখ্যাও। তাই কেউ সন্দেহ করলেই নিশ্চিত হতে দ্রুত পরীক্ষা করা জরুরি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) সূত্রে জানা গেছে, এইডস একটি জটিল রোগ। মূলত এইচআইভি নামের এক ধরনের ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট একটি রোগ। চট্টগ্রামে প্রতি বছরই বেড়ে চলছে এইডস রোগী ও পরীক্ষার সংখ্যা।
জানা গেছে, সমুদ্রবন্দর কেন্দ্রীক শহরে এই রোগের প্রকোপ বেশি তাকে। চট্টগ্রামে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্র বন্দর। দেশি বিদেশি নাবিকরা নিয়মিত আসা যাওয়া করেন। তাই এই অঞ্চলকে অনেকে এইডসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। তাই পরীক্ষার সুযোগও চট্টগ্রামে বেশি থাকা দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চমেক হাসপাতালের এনসিলারি ভবনের নিচতলায় অবস্থিত এন্টি রেট্রো ভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টার। হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের অধীন এই সেন্টারটিতে এইডস আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে রোগ নির্ণয় এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলের যেসব সংস্থা এইডস রোগীদের নিয়ে কাজ করে সেসব রোগীকেও এ সেন্টারের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রামে ২০২০ সালে এআরটি সেন্টারের মাধ্যমে ৫৮৬ জনের এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়। ওই বছর নতুন করে ৩০ জন রোগী শনাক্ত হয়। ২০২১ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ২৬ জনের এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়। ২০২৩ সালে ২ হাজার ৭২৬ জনের দেহে এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়। তারমধ্যে ১ হাজার ৯৯৩ জন পুরুষ এবং ৭২৪ জন মহিলা ছিলেন। এদের মধ্যে আবার ৪২ জন পজিটিভ রোগী পাওয়া যায়। এদের ভেতর ১৩ জন নারী ও ২৯ জন পুরুষ রয়েছে। নেগেটিভের মধ্যে ৭১১ জন নারী এবং ১ হাজার ৯৬৪ জন পুরুষ রয়েছে। চমেক হাসপাতালের এআরটি সেন্টারের একজন চিকিৎসক জানান, চট্টগ্রাম বন্দর নগরী। তাই এই শহর এইডসের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। দেশের অন্য এলাকার মতো চট্টগ্রামেও প্রতিবছরই বাড়ছে এইডস রোগ পরীক্ষা করতে আসা রোগীর সংখ্যা। আক্রান্ত রোগীও মিলছে প্রচুর। পরীক্ষায় যা পাওয়া যাচ্ছে তাতে আক্রান্তের সংখ্যা কম বলা যাবে না। আক্রান্তদের মধ্যে বিদেশ ফেরত থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও রয়েছেন। এআরটি সেন্টারের মাধ্যমে এসব রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। বিনামূল্যে পরীক্ষার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত কিট রয়েছে। সামাজিকভাবে এইডস রোগীদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করলে মানুষ নিজ উদ্যোগে পরীক্ষা করতে আসবে। এতে অনেকেই ঝুঁকিমুক্ত থাকবে চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, এইডস নিয়ে সব শ্রেণির মানুষকে সচেতন থাকতে হবে। এটি একটি জটিল রোগ। অসতর্ক অবস্থায় এক জনের দেহ থেকে অন্য জনের কাছে ছড়াতে পারে। এই রোগের চিকিৎসা সরকারিভাবে দেওয়া হচ্ছে। তবে এটি প্রতিরোধ করতে সচেতনতা দরকার। এইডস রোগের লক্ষণ দেখার সাথে সাথে পরীক্ষা করতে হবে দ্রুত। পজেটিভ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।
গেল ১ ডিসেম্বর ছিল বিশ্ব এইডস দিবস। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য-‘কমিউনিটির আমন্ত্রণ, এইডস হবে নিয়ন্ত্রণ’। ১৯৮৮ সাল থেকে এইডসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারা বিশ্বে এই দিনে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও প্রতি বছর দিবসটি পালন করা হয়। চট্টগ্রামে দিবসটি উপলক্ষ্যে চমেক হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা ও র্যালির আয়োজন করা হয়। আলোচনায় এইডসের বিরুদ্ধে সচেতন থাকার উপর বেশি জোর দেয়া হয়।
চমেক সূত্র জানায়, চমেকে গুরুতর এইডস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। তাদের চিকিৎসায় নির্দিষ্ট একটি ওয়ার্ডও আছে। গুরুতর অসুস্থ্য রোগীদের বিভিন্ন সময় সেখানে দেয়া হয়েছে। চিকিৎসা দেয়া হয় অনেকটা বিনা মূল্যে। তবে আক্রান্তদের অনেকে সচেতনতার অভাবে রোগের বিষয় প্রকাশ করতে চান না। এজন্য ধীরে হলেও ছড়াচ্ছে এই মরণব্যাধী।