চট্টগ্রাম নগরীর ১৬ আসন
জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে নানা গুঞ্জন
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
তামীম রহমান, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম নগরীর ১৬ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঘিরে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিশেষ করে চট্টগ্রাম-৮ আসনের (পাঁচলাইশ-চান্দগাঁও-বোয়লখালী) ও চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-পাহাড়তলী-খুলশী) আসনে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীকে ঘিরে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। দুজনই আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের একজন চট্টগ্রাম-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম এবং চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রার্থী সাবেক সিটি মেয়র এম মনজুর আলম। নিজ নির্বাচনি এলাকার ভোটারদের মধ্যে দুজনেরই আলাদা ইমেজ আছে। আছে ভোট ব্যাংক জনপ্রিয়তাও। তাই দুজনই আওয়ামী লীগের দুই মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে এবার সাফল্য পাবেন বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা। এজন্য দলীয় মনোনীত দুই প্রার্থীর জন্য চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করেছেন বলে মনে করছেন তারা।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এর দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান ছিলেন চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া আবদুচ ছালাম। পাশাপাশি তিনি নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব আছেন। তিনি দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গ্রুপ ওয়েল গ্রুপের চেয়ারম্যান। তাকে নগর আওয়ামী লীগের অভিমানি রাজনীতিবিদ হিসেবে অ্যাখ্যা দেয়া হয়। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ২০০০ সালের পর চট্টগ্রামের দুই প্রয়াত নেতা এম এ মান্নান ও এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নজরে আসেন তিনি। দুজনের হাত ধরে নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ হন আবদুচ ছালাম। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান আবদুচ ছালাম। পরে জোটগত নির্বাচনের অংশ হিসেবে সেই আসন ছেড়ে দেয়া হয় জাসদ নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদলকে। সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ প্রথমবারের মতো এসে হাতছাড়া হয়ে যায়। দশম সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন পান মঈন উদ্দিন খান বাদল।
একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনিই ছিলেন জোটগত প্রার্থী। ফলে এই আসনে তার আর প্রার্থী কিংবা নির্বাচন করার কোনো সুযোগ ছিল না। ২০১৯ সালের নভেম্বরে সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুর পর ফের আশায় বুক বাঁধেন এবার হয়তো দলীয় মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু এবারও মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন পান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ। চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। নির্বাচন কমিশন এই আসন শূন্য ঘোষণা করে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলে আবদুচ ছালাম আবার তৎপর হয়ে উঠেন। আবার দলীয় মনোনয়ন পেতে আশাবাদ জোরাল হয়। ওই আসনে আট মাসের এমপি হতে তিনি বেশ দৌড়ঝাঁপ করেন। কিন্তু সেই উপনির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন পাননি। এই আসনে গেল ২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় উপনির্বাচন। এতে দলের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ জয়ী হন।
২০২০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নের দৌড়েও ছিলেন আবদুচ ছালাম। কিন্তু মনোনয়ন পাননি। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় অধীর আগ্রহে ছিলেন। তবে এবারও তিনি মনোনয়ন পাননি। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও ৩০ নভেম্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।
নগরীর সাথে লাগোয়া চট্টগ্রাম-৮ আসনে মোট ভোটারের তিন ভাগের দুভাগের বসবাস মোহরা অংশে। সেখানেই আবদুচ ছালামের পৈতৃক বাড়ি। এলাকার লোকজনের সাথে তার এবং পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘদিনের যোগাযোগ। মোহরা এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি বেশ জনপ্রিয়। এলাকার লোকজন চান অন্তত একবার তিনি এমপি হিসেবে নির্বাচিত হোন।
এই আসনে আরেক আওয়ামী লীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নগরজুড়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে বিপুল পরিমাণ কর্মী বাহিনী রয়েছে বাচ্চুর। দুই নেতা শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে থাকলে দলের মনোনীত প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ চ্যালেঞ্জে পড়বেন বলে মনে করছেন অনেকেই। দলের নেতারা শেষ পর্যন্ত দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর কে মাঠে থাকেন, তা নিয়ে অধীর অপেক্ষায় আছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী এই প্রশ্নে আবদুচ ছালাম বলেন, আমার এলাকার জনগণ আমাকে প্রার্থী হতে উৎসাহিত করেছে। আমার সংসদীয় এলাকার জনগণের ওপর আমার শতভাগ আস্থা আছে। আমি বিশ্বাস করি আমি নির্বাচনে জয়লাভ করব।
এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রাজনীতির মাঠে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম। ৩০ নভেম্বর তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-পাহাড়তলী-খুলশী) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আগেই নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন একই আসনে। কিন্তু পাননি। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন না চেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আরো একবার ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। তবে প্রয়াত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আফছারুল আমীনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও পাননি।
ওই আসনের সংসদ সদস্য সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আফছারুল আমীন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছর মারা যান। তার শূন্য আসনে চলতি বছরের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে মনোনয়ন পান নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুু। এবারও তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে এম মনজুর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় তার জন্য নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়া চ্যালেঞ্জে পড়েছে মনে করছেন অনেকেই।
এম মনজুরুল আলমের বিরুদ্ধে আছে দল বদলের অভিযোগ। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন মোহাম্মদ মনজুর আলম। সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করে আলোচনায় আসেন তিনি। মেয়র হওয়ার পর বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাও হয়েছিলেন। ২০১৫ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পান তিনি। তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মনজুর আলম। এরপর থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে অনেকটা বিছিন্ন আছেন।
এ ব্যাপারে সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম বলেন, আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে লড়ে যাব। আমার এলাকার ভোটারদের প্রতি আমার আস্থা আছে। আমি জয়লাভ করব ইনশাআল্লাহ।