সুসংবাদ প্রতিদিন

সুইজারল্যান্ডের অ্যালবিনো প্রজাতির ইঁদুর চাষে সাফল্য

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

রাজশাহীতে বাণিজ্যিকভাবে সুইজারল্যান্ডের অ্যালবিনো প্রজাতির ইঁদুর চাষে সফলতা পেয়েছেন অনেকেই। এই জেলায় ইঁদুর চাষের শুরুটা সালাউদ্দিন মামুনের হাত ধরে হলেও এখন রাজশাহীতে আট থেকে ৯ জনের রয়েছে অ্যালবিনো ইঁদুরের খামার। শুরুর গল্পটা শখের বশে হলেও ইঁদুর চাষ রূপ নিয়েছে বাণিজ্যে। মুনাফা ভালো হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছে ইঁদুর চাষে। আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এই প্রজাতির ইঁদুরের চাষ। সংশ্লিষ্টদের দাবি- দেশের তুলনায় বিদেশে ইঁদুরের চাহিদা ভালো। একই সঙ্গে ইঁদুরের কঙ্কালেও। সেই জায়গা থেকে ইঁদুর রপ্তানির একটা সুযোগ হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের গেজেটে ইঁদুর রপ্তানির অপশন নেই। ফলে ইচ্ছে থাকলেও রপ্তানির সুযোগ নেই। মূলত সমস্যা হচ্ছে ব্যবসার জন্য লাইসেন্স বা খামারি হিসেবে নিবন্ধন করতে চাইলে সম্ভব হচ্ছে না। নিবন্ধনে ইঁদুর কোনো অপশন নেই। সারা দেশে ৪০ থেকে ৫০ জন ইঁদুরচাষি আছেন। এর মধ্যে রাজশাহীতে আছে ১০ জন। আর মামুনের তত্ত্বাবধানে রয়েছে ৬টি ইঁদুরের খামার। তারা বলছেন, মানুষের সঙ্গে ইঁদুরের বৈশিষ্ট্যের লক্ষণীয় মিল পাওয়া যায় বলে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় ইঁদুর ব্যবহার করা হয়। ইঁদুরের ৯০ শতাংশ জিন আশ্চর্যজনকভাবেই মানুষের সঙ্গে মিলে যায়। এ কারণেই মানুষের বিভিন্ন প্রকার জিনের মিথস্ক্রিয়ার প্রকৃতির পরীক্ষার জন্য মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে ইঁদুর। এছাড়া মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সঙ্গেও ইঁদুরের অঙ্গের বা তন্ত্রের মিল পাওয়া যায়। এজন্যই মানুষের শরীরে বিভিন্ন প্রকার ওষুধের প্রভাব নির্ণয় করা যায়। পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের আশরাফের মোড় এলাকায় চারটি ইঁদুর দিয়ে শখের বশে লালনপালন শুরু করেন সেন্টু আলী। নগরীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অফিস সহকারী হিসেবে কাজের সুবাদে পরিচয় হয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুইজন শিক্ষার্থী সেন্টুকে নারী-পুরুষ মিলে চারটি ইঁদুর দেন লালনপালনের জন্য। তার খামারে বর্তমানে ৪৫০টি ইঁদুর রয়েছে। সেন্টু জানান, ইঁদুরগুলো সাদা হওয়ায় দেখতে ভালো লাগে তার। তাই তিনি বাড়িতে নিয়ে এসে লালনপালন করেন। কয়েক দিনের মাথায় আহত হয়ে একটি পুরুষ ইঁদুর মারা যায়। থাকে তিনটি ইঁদুর। ২০ দিনের মাথায় দুইটা ইঁদুর ১৮ থেকে ২০টি বাচ্চা দেয়। ইঁদুরের এমন দ্রুত বৃদ্ধিতে অবাক হন তিনি। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইঁদুর নিতে চেয়েছে। এছাড়া শিক্ষকরা বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলেনে। যেহেতু সালাউদ্দিন মামুন সর্বপ্রথম ইঁদুরের খামার করেছেন রাজশাহীতে, সেই জায়গা থেকে ইঁদুর বিক্রির অভিজ্ঞতা আছে তার। ইঁদুর বিক্রির বিষয়ে তার সাথে যোগাযোগ করা যাবে। এছাড়া ২০১৭ সালের শেষের দিকে রাজশাহীর পবা উপজেলার সমসাদিপুর এলাকার নিজ বাড়িতে সালাউদ্দিন মামুন শখের বশে সুইজারল্যান্ডের অ্যালবিনো ইঁদুর পালন শুরু করেন। পরবর্তীতে শখের বশে করা লালনপালন করা ইঁদুর রূপ নেয় বাণিজ্যিকভাবে। প্রতি বছর মামুন প্রায় সাত থেকে ৮ লাখ টাকার ইঁদুর বিক্রি করেন। সালাহউদ্দিন মামুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ল্যাব সহকারী পদে কাজ করেন। সালাউদ্দিন মামুন বলেন, বছরের শেষের দিকে একটু চাহিদা কম থাকলেও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে এই ইঁদুরের চাহিদা বেশি থাকে। সর্বশেষ গত ১৮ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ পিস ইঁদুর বিক্রি করেছি। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ২০০ পিস বিক্রি করেছি। সারা বছর প্রায় ৮ লাখ টাকার ইঁদুর বিক্রি করেছি। মামুন জানান, বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা ইঁদুরগুলো দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্রি করছেন তিনি। শুধু তাই নয়, অ্যালবিনো প্রজাতির সাদা ইঁদুর, ইঁদুরের কঙ্কাল ও মমির চাহিদা বিদেশে থাকলেও রপ্তানি করতে পারছেন না বলে জানান মামুন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ভারতের গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যালবিনো প্রজাতির সাদা ইঁদুর পাঠানোর অর্ডার পান মামুন। কিন্তু দেশের রপ্তানি গেজেটে ইঁদুরের কোনো অপশন না থাকায় পাঠাতে পারেননি তিনি। তার দাবি, রপ্তানির সুযোগ পেলে এটি সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। আগামী ২০২৪ সালের শুরুর দিতে রপ্তানির বিষয়ে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে যোগাযোগ করবেন বলেন জানান সালাহউদ্দিন মামুন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. জালাল উদ্দিন সরদার বলেন, এটা অনেক ভালো উদ্যোগ। যেহেতু আমরা অ্যানিমেল নিয়ে কাজ করি। রপ্তানির বিষয়ে কোনো ধরনের সহযোগিতা লাগলে আমরা দেয়ার চেষ্টা করব। রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে কয়েকজন চাষ করছে। তবে সেটি বাণিজ্যিকভাবে ধরা যায় না।