ছাত্রীকে যৌন হয়রানি
ঢাবি অধ্যাপক নুরুলের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাবি প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওই ইনস্টিটিউটটের এক নারী শিক্ষার্থীর আনা যৌন হয়রানির অভিযোগে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তার স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন। কর্মসূচিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম সব বর্ষেই এক-দুইজন নারী শিক্ষার্থীকে টার্গেট করেন। পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয়ে কেউ অভিযোগ করার সাহস পান না। আজকেও তাদের কর্মসূচিতে আসতে দেওয়া হয়নি। দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য। তাই এ শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানাই।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পক্ষে একই ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তানজিদা খানম হাফসা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমি এ শিক্ষককে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি। আমার আগে যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তারাও যেন সুষ্ঠু বিচার পান। ভবিষ্যতে যেন কেউ এমন ঘটনার শিকার না হন, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা ইসলাম বলেন, যে মেয়েটিকে হয়রানি করা হয়েছে, সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অথচ সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউট থেকে যারা আজকে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আসতে চেয়েছেন, ওই শিক্ষক তাদের আটকে রেখেছেন। তাদের পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়ার ভয় দেখানো হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় ভীতিকর সংস্কৃতি তৈরি করতে কে এ শিক্ষককে দুঃসাহস দিয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীবান্ধব নয়। এ শিক্ষক এর আগেও অনেককে হ্যারাসমেন্ট করেছেন কিন্তু কেউ সাহস করে মুখ খুলেননি। আজকে একজন মুখ খুলেছেন বিষয়টি ইতিবাচক, নীতিহীন এ শিক্ষকের বিচার করতেই হবে।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক বলেন, শিক্ষকরূপী হায়েনা ও ধর্ষকদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাই না। নুরুল ইসলামের মতো শিক্ষকরা বিষফোঁড়াতে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য মাত্র পাঁচটি হল রয়েছে। এ সংকটে হলের জন্য পরামর্শ নিতে গেলে রুমে ডেকে যৌন হয়রানি করবে, তা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না। এ কুলাঙ্গার শিক্ষকে জেলে দিতে হবে।
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী অদিতি বলেন, এ ঘটনার আগেও তার নামে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো বিচার করা হয়নি। কিছু শিক্ষকদের জন্য নারী শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুম, অফিস, ডিপার্টমেন্ট- কোথাও নিরাপদ না, তাদের আমরা ধিক্কার জানাই। নারী শিক্ষার্থীকে ক্লাসে বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি করা হয়। এ হচ্ছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের চিত্র। নামেমাত্র একটি কমিটি গঠন করা হয় কিন্তু কোনো বিচার করা হয় না। এভাবে তো চলতে পারে না।
এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর নিজ কক্ষে ইনস্টিটিউটের এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে অধ্যাপক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। পরে ভুক্তভোগী ছাত্রী গত মঙ্গলবার ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বরাবর একটি অভিযোগপত্র দেন। তারপর ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন এবং উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এ ঘটনায় গত ৩০ নভেম্বর সিন্ডিকেট সভায় তিন সদস্যের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়।