মো. ছলিমউল্লাহ (৩০)। কক্সবাজারের রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের জামবাগান এলাকার বাসিন্দা। তার ঘরে এক স্ত্রী, তিন ছেলে। সংসার জীবন কোনোমতে চলে আসছে। জীবনের বেশিরভাগ সময়ই বনজ সম্পদ রক্ষা করে কাটিয়েছে তিনি। দীর্ঘ একযুগ বনজ সম্পদ রক্ষায় (সবুজ বেষ্টনী) প্রকল্পের সুফল পেয়েছেন সেই মো. ছলিমউল্লাহ। সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের অধীনে তাকে দেয়া হয়েছে একটি ব্যাটারিচালিত (অটো-রিকশা)। সেই অটো-রিকশার উপর ভর করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ‘ছলিমউল্লাহর’। এই প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের আরো ৪০ জন নারীকে সেলাই মেশিন ও ১২ জন পুরুষকে অটোরিকশা দেয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সারওয়ার আলম। তিনি বলেন, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের অধীনে ১৫৩৮.০০ হেক্টর জমিতে সবুজ বেষ্টনী সৃজন, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার এবং ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ওইসব বাগান রক্ষায় কাজ করে আসছে স্থানীয় উপকারভোগী লোকজন। বর্তমান সরকার ওইসব উপকারভোগীদের স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নিয়েছে। তার ধারাহিকতায় কক্সবাজারের বিভিন্ন রেঞ্জের অধীনস্থ সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় লোকজনকে সেলাই মেশিন, অটোরিকশা দেয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের পানেরছড়া রেঞ্জের সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের উপকারভোগী মো. ছলিমউল্লাহ বলেন, গত একযুগের বেশি বন রক্ষায় কাজ করে আসছি। বন বিভাগ এই কাজের মূল্যায়ন করে আমাকে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দিয়েছে। এই অটোরিকশার উপর ভর করে আমি ঘুরে দাঁড়াব। তার সংসারে সচ্ছলতা ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
ছলিমউল্লাহ বর্তমান সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আরো বলেন, আমার স্ত্রীসহ তিনজন ছেলে সন্তান রয়েছে। দুই ছেলে স্থানীয় নুরানি মাদ্রাসায় পড়েন। তাদের পড়ালেখার খরচ, সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। এই মুহুর্তে এসে পরিবারের সচ্ছলতা ফিরাতে পাশে দাঁড়িয়েছে বন বিভাগ। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। চেষ্টা করব মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বনরক্ষার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা বলেন, বর্তমান সরকার বনরক্ষায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তার ধারাবাহিকতায় এরইমধ্যে সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় উপকারভোগীদের মাঝে অটোরিকশা ও সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়।
রামুর খুনিয়াপালং এলাকার বাসিন্দা যুবনেতা পারভেজ হোসেন নোশাদ বনরক্ষায় সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপকে স্বাগতম জানিয়ে বলেন, গ্রামীণ জনপদের বেশির মানুষ বনের উপর নির্ভরশীল। বনরক্ষার পাশাপাশি, তাদের স্বাবলম্বির উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। যার ফলে বনকর্মীদের পাশাপাশি উপকারভোগীরাও বনরক্ষায় কাজ করতে আরো মনযোগী হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অটো-রিকশা, সেলাই মেশিন ও ঋণ বিতরণ : সবুজ বেষ্টনী সৃজন, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার এবং ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প ও সুফল প্রকল্পের আওতায় অটো-রিকশা, সেলাই মেশিন ও ঋণ বিতরণ কার্যক্রম দিনব্যাপী কক্সবাজারের রামু পানেরছড়া রেঞ্জ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রামুর মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোদেস্তা বেগম রিনা বন বিভাগের এমন মহৎ উদ্যোগের প্রশংসা করে জনগণকে বনবাগান পাহাড় ও পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। পাশাপাশি জনগণকে তাদের জীবন জীবিকার মান উন্নয়নে দেয়া ঋণ কাজে লাগিয়ে বন ও বনভূমি রক্ষায় এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পানেরছড়া রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা রতন লাল মহত বলেন, সবুজ বেষ্টনী সৃজন, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার এবং ইকো- ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সৃজিত বাগানের সামাজিক বন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার মাধ্যমে বননির্ভর জনগোষ্ঠীর জন্য এআইজি কার্যক্রম বাস্তবায়নের নিমিত্তে অটোরিকশা, সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে বাগানের সুবিধাভোগী জুবাইদা আক্তার তার বক্তব্যে আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। পানেরছড়া বিটের বিট কর্মকর্তা মো. জলিলুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ে জনগণের জন্য কাজ করছি এসব কার্যক্রম থেকে স্থানীয় জনগণ সুফল পাবেন এবং বন রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করি।
এছাড়াও সুফল প্রকল্পের আওতায় পানেরছড়া রেঞ্জের পাঁচটি সিএফএমসি’র ২২০ জন সদস্যদের মাঝে ঋণ বিতরণ করা হয়। এসব কার্যক্রমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে জনগণের জীবন-জীবিকার মানোন্নয়ন বনবাগান, বন্যপ্রাণী ও বনভূমি রক্ষায় সবাইকে আরো অধিক দায়িত্বশীল হওয়ার অনুরোধ জানান সংশ্লিষ্টরা।