সুসংবাদ প্রতিদিন

নওগাঁয় জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষ

প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্বাস আলী, নওগাঁ

নওগাঁয় জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন চাষিরা। উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রম কম হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন তারা। আর এতে কৃষিকে অর্থনৈতিকভাবে আরো সমৃদ্ধ করেছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব পানিফল চলে যাচ্ছে ঢাকা, সিলেট ও গাইবান্ধাসহ কয়েকটি জেলায়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ১ হাজার ১০০ মেট্রিক টন ফল উৎপাদনের আশা কৃষি বিভাগের, যার বাজারমূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। নওগাঁ সদর উপজেলার দুর্গাপুর, খাগড়া ও মরাবিলাসহ আশপাশের মাঠে বছরের অধিকাংশ সময় থাকে জলাবদ্ধতা। যেখানে ইরি-বোরো ছাড়া অন্য কোনো ফসল হয় না। জলাবদ্ধতার মধ্যে সেখানে বিকল্প হিসেবে গত কয়েক বছর থেকে কৃষকরা বেছে নিয়েছেন পানিফলের চাষ। বিল এলাকায় এ ফল চাষ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আষাঢ় মাসের বৃষ্টিতে যখন জলাশয়গুলোতে পানি জমতে শুরু করে তখন পানিতে পানিফলের চারা ছেড়ে দেয়া হয়। এর প্রায় তিন মাস পর থেকে গাছে ফল আসা শুরু হয়। পানিতে ভেসে থাকা শাপলার মতো এ গাছটি পানিফল নামে পরিচিত। খাল, বিল, জলাশয় ও রাস্তার ধারে জমে থাকা পানিতে দেখা মিলে এ ফল। পাতার নিচে ধরে আছে থোকা থোকা লাল, কালচে ও সবুজ রঙের পানিফল সংগ্রহ করছেন চাষিরা। তিন মাসের এ ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা। বিঘাপ্রতি এ ফল চাষে খরচ পড়ে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। যেখানে খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। চাষিরা বলছেন, অনেকে শুধু পানিফল চাষের জন্য বিঘাপ্রতি ৩ হাজার টাকায় জমি ইজারা নেয়। বিঘাপ্রতি ফলন হয় প্রায় ৭০ মন। প্রতিমন বিক্রি হয় ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে প্রায় ২০ হাজার টাকা। পানিফল চাষ শেষে জমির মালিক সেখানে ইরি-বোরো আবাদ করে। দুর্গাপুর গ্রামের চাষি আব্দুস সামাদ বলেন, এ মাঠে বছরে প্রায় ৬ মাস জলাবদ্ধতা থাকে। এখানে বোরো ধান ছাড়া অন্য কোনো ফসল হয় না। নিজের জমিতে গত কয়েক বছর ধরে পানি ফল চাষ করা হচ্ছে। তবে অনেকে পানিফল চাষের জন্য বিঘাপ্রতি ৩ হাজার টাকায় ইজারা নিয়ে থাকে। এ ফল চাষে খরচ পড়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। আর খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে প্রায় ২০ হাজার টাকা। আমার কাছে মনে হয়েছে বাড়তি একটা ফসল। পানি শুকিয়ে এ জমিতে বোরো ধান চাষ করা হবে। আরেক চাষি লিটন সরদার বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এ বছর জলাশয়ে পানি কম। তারপরও ফলন ভালো হয়েছে। দাম মোটামুটি ভালো পাওয়া যাচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ী এসে পানিফল সংগ্রহ করে নিয়ে যান। আশা করছি লাভবান হতে পারব। গাইবান্ধা জেলার মহিমাগঞ্জ এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী বলেন, আগে চাষিরা এ ফল আমাদের এলাকায় গিয়ে বিক্রি করত। তাদের কাছ থেকে জানার পর এ বছর থেকে এ এলাকা থেকে পানিফল সংগ্রহ করে নিজ এলাকায় গিয়ে বিক্রি করছি। প্রতি কেজিতে ১৯ টাকার মতো খরচ পড়ে, যা বিক্রি হবে কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি। এ মৌসুমে প্রায় ২০ মণের মতো ফল ক্রয় করব।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ হয়েছে। অনাবাদি জমিতে পানিফল চাষ একটি বাড়তি ফসল। নিচু এলাকায় জলাবদ্ধ জমি এক থেকে দেড় ফুট পানি জমে থাকে সেখানে এ ফলের চাষ হয়। পরিশ্রম ও খরচ কম হয়, যা চাষ করে কৃষকরা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভবান হচ্ছে। এ ফলটি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ।