শুনতে অবাক লাগলেও আমাদের অচেনা মহাকাশে মিলল ভ্যাম্পায়ার নক্ষত্রের খোঁজ। এমনকি এর সহকারীও রয়েছে। এই নক্ষত্রগুলো পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত, খাদ্য-খাদকের সম্পর্কে লিপ্ত দুই নক্ষত্রকে বোঝানো হয়, যেখানে বেঁচে থাকতে এক নক্ষত্র অন্যের ওপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে খাদ্য-খাদকের সম্পর্কে লিপ্ত নক্ষত্র আসলে কী বোঝা দরকার। পৃথিবী এবং অন্য গ্রহগুলোকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দিয়ে নিজের দিকে টেনে রেখেছে সূর্য। এক্ষেত্রে সূর্য যেহেতু ঢের বেশি শক্তিশালী, গ্রহগুলো তাকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। একইভাবে সূর্যের সংস্পর্শে যদি কোনো সমান বা কিছুটা কম ভরযুক্ত অন্য একটি নক্ষত্র এসে পড়ত, সেক্ষেত্রে দুইয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বাধত বলে ভাবা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে দুই নক্ষত্রের মাধ্যাকর্ষণ শক্তিই পরস্পরকে পরস্পরের থেকে দূরে রাখত। সমান্তরাল ভাবে পরস্পরকে প্রদক্ষিণ করত তারা। এক্ষেত্রে যে নক্ষত্র বেশি শক্তিশালী, যার ভর অনেক বেশি, সে হয়ে উঠত খাদক এবং তুলনামূলক কম শক্তিশালী নক্ষত্রটি হয়ে উঠত খাদ্য। কম শক্তিশালী নক্ষত্র থেকে গ্যাস শুষে নিয়ে নিজের শক্তিবৃদ্ধি করত অন্য বৃহদাকার নক্ষত্রটি। মহাশূন্যে এমন খাদ্য-খাদকের সম্পর্কযুক্ত নক্ষত্রের সংখ্যা কম নয়। বৃহদাকার নক্ষত্রটিকে এক্ষেত্রে বলা হয় ভ্যাম্পায়ার নক্ষত্র।
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির গেইয়া মহাকাশযান থেকে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তা হল, পৃথিবী থেকে ৩ হাজার আলোকবর্ষ দূরত্বের মধ্যেই কমপক্ষে ১৩ লাখ এমন দ্বৈত নক্ষত্রমণ্ডল রয়েছে। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার কেপলার মহাকাশযান সম্প্রতি এমন দ্বৈত নক্ষত্রের খোঁজ পায়। একটি সাদা রঙের বামন নক্ষত্র এবং তার চেয়ে আয়তনে প্রায় ১০ ভাগ ছোট একটি বাদামি রঙের বামন নক্ষত্রের দেখা মেলে। জানা যায়, সাদা রঙের বামন নক্ষত্রটি একসময় সূর্যের মতোই শক্তিশালী ছিল। বার্ধক্যে এসে শক্তি হারায় সেটি। বাদামি রঙের নক্ষত্রটি থেকে গ্যাস এবং পার্থিব বস্তু শুষে বেঁচে রয়েছে। তবে শুধুমাত্র দুই নক্ষত্রের মধ্যেই খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক থাকে না, অনেক ক্ষেত্রে তৃতীয় একটি নক্ষত্র অনুঘটকের কাজ করে বলে সম্প্রতি গবেষণায় উঠে এসেছে। রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি জার্নালে প্রকাশিত নতুন একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সমান্তরালভাবে, পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত তিনটি নক্ষত্রের হদিসও মিলেছে। এক্ষেত্রে বৃহদাকার নক্ষত্রটির পেট ভরাতে, দ্বিতীয় নক্ষত্রটিকে তার দিকে ঠেলে দেয় তৃতীয়টি। সাধারণত এমন ত্রয়ী নক্ষত্র চোখে পড়ে না, তবে ব্রহ্মাণ্ডের ইতিউতি খুঁজলে এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে বলে মত গবেষকদের।