সুসংবাদ প্রতিদিন
ডালি পদ্ধতিতে সবজি চাষে সফলতা
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
নাটোরের বড়াইগ্রামে জলাবদ্ধ অনাবাদি জমিতে ডালি পদ্ধতিতে সবজি চাষে দারুণ সফলতা পেয়েছেন চাষিরা। এ পদ্ধতিতে জলাবদ্ধ জমির উপর বাঁশের মাচায় ঝুলছে লাউ, করলা, শিম, কুমড়া, শসা ও ঝিঙাসহ নানা জাতের সবজি। একই সঙ্গে নিচে জমে থাকা পানিতে চলছে মাছ চাষ।
কৃষি বিভাগের সহায়তায় জলাবদ্ধ পতিত জমিতে সমন্বিত কৃষির আওতায় ডালি পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করে সাড়া জাগিয়েছেন এ এলাকার কৃষকরা। সার ও কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়া অর্গানিক সবজি উৎপাদন ও মাছ চাষে ভালো লাভ পাওয়ায় নতুন উদ্ভাবিত এ পদ্ধতিতে ঝুঁকছেন চাষিরা। এমনকি এখানকার কৃষকদের নিয়ে গিয়ে গোপালগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৈতৃক জলাবদ্ধ জমিতেও শুরু হয়েছে ডালি পদ্ধতির ফসল চাষ। বাটরা গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আমরা ডালি পদ্ধতিতে চাষাবাদ শিখেছি। এ পদ্ধতিতে রাসায়সিক সার ও কীটনাশক লাগে না, ফলনও আশানুরূপ। একবার তৈরি করা মাচায় ২ বছর পর্যন্ত চাষ করা যায়। প্রথমবার খরচ হলেও পরবর্তী ২ থেকে ৩ বছর উৎপাদন খরচ লাগে না। আমার দেখাদেখি আশপাশের অনেকেই ডালি পদ্ধতিতে নিজেদের জলাবদ্ধ জমিতে চাষ করছেন। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো, আমাদের সফলতা দেখে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমাকেসহ ৮ থেকে ১০ জন কৃষককে টুঙ্গিপাড়ার বালাডাঙ্গা গ্রামে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পৈতৃক জমিতে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, পানির উপর বাঁশের খুঁটির ওপরে নাইলন সুতা দিয়ে মাচা তৈরি করে নিচে ছোট বাঁশের খুঁটির ওপর নেট দিয়ে তৈরি ডালি বসানো হয়েছে। এসব ডালিতে টোপাপানা দিয়ে তৈরি কম্পোস্ট সার ও অল্প পরিমাণে মাটি দিয়ে তাতে বীজ রোপণ করা হয়েছে। সেখান থেকে জন্মানো গাছগুলো নাইলনের মাচার উপরে উঠে গেছে। সেসব গাছে থরে থরে ঝুলছে লাউ, কুমড়া, ঝিঙ্গেসহ নানান সবজি। নতুন এ পদ্ধতিতে চাষ দেখতে প্রতিনিয়ত আসছেন এলাকার কৃষকরা। জানা যায়, চিনাডাঙ্গা বিলের বাটরা অংশের বেশিরভাগ জমি প্রায় সারা বছর জলাবদ্ধ এ বিলে কোনো ফসল উৎপাদন হতো না। উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে ২০২১ সালে এ এলাকার চাষিদের ডালি পদ্ধতিতে ফসল চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর বাটরা গ্রামের আব্দুল মজিদ প্রথম ৯ শতাংশ জমিতে এ পদ্ধতিতে সব্জি চাষ করে দারুণ সফলতা পান। বর্তমানে তিনি ৬০ শতাংশ জমিতে ডালি পদ্ধতিতে লাউ, শিম, করলা ও শসা চাষ করেছেন। একইসঙ্গে বাঁশের তৈরি বানা দিয়ে জমিটুকু ঘিরে তাতে মাছ চাষ করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, পতিত ও জলাবদ্ধ এসব জমিতে প্রথমে ডালি পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করে কৃষকরা ব্যাপক সাফল্য পান। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত সবজি বেশ সুস্বাদু। বর্তমানে বাটরা গ্রামের ২০ জন কৃষক এ পদ্ধতিতে চাষ করছেন। অন্যান্য এলাকার কৃষকরাও বর্তমানে জলাবদ্ধ জমিতে এ চাষাবাদে ঝুঁকছেন। ডালি পদ্ধতির উদ্ভাবক এবং প্রকল্প পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ডালি পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক লাগে না। কচুরিপানা পচা মাটিতে সবজি লাগানোর ফলে অর্গানিক সার পাওয়া যায়। আর এটা ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণ স্বাস্থ্যসম্মত সবজি উৎপাদন করা হয়।