তদন্ত কমিটি গঠন
রাতে ঢাবির হলে মারধরের শিকার তিন শিক্ষার্থী
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাবি প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের তিনজন শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ঢাবি ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। গত বুধবার রাত ১টার দিকে হলের অতিথি কক্ষের পাশের মোটরসাইকেল স্ট্যান্ডের পাশে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে হল প্রশাসন।
ভুক্তভোগী তিন শিক্ষার্থী হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ পাভেল, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ সাইফুল্লাহ এবং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী অনমি রহমান। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ সেশনের তৃতীয় বর্ষ এবং জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন নূর উদ্দিন আহমেদ এবং আব্দুল্লাহ আল মুনতাসীর শুভ। নূর উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সম্পাদক এবং হল ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতা। মুনতাসীর শুভ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং হলের বর্তমান পদপ্রত্যাশী নেতা। রাজনীতিতে তারা উভয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে হলে নিয়মিত প্রোগ্রাম গেস্টরুম করে এলেও তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন নূর উদ্দিন ও মুনতাসীর শুভ। টানা ২ বছরের অধিক সময় তাদের সাথে নিয়মিত বাধ্যতামূলক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করলেও তাদের অবজ্ঞা করে আসছেন তারা। এ নিয়ে নিয়মিত গেস্টরুমে তাদের গালাগালি করেন এবং রুম থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। এছাড়া মাঝেমধ্যে তাদের ভিন্ন মতাদর্শের বলে গালিগালাজ করে হল থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।
সর্বশেষ গত সোমবার রাত ১২টার পরে তাদের গেস্টরুম থেকে বের করে দিয়ে জুনিয়রদের সাথে কথা বলেন নূর উদ্দিন ও মুনতাসীর শুভ। পরবর্তীতে গত বুধবার রাত ১টার দিকে নুর উদ্দিন পাভেল ও খালেদ সাইফুল্লাহ, অনমি রহমানকে হল রিসিপশন থেকে বাইক স্ট্যান্ডের দিকে ডেকে নিয়ে পাভেলকে অকারণে গালিগালাজ করে চড়-থাপ্পড় দেওয়া শুরু করে। এ সময় খালেদ সাইফুল্লাহ ও অনমী তাদেরকে আটকাতে গেলে তারাও আক্রোশের শিকার হন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, গত কয়েক দিন যাবত ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসী নূর উদ্দিন ও মুনতাসীর শুভ কর্তৃক তারা অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন।
তাদের অপকর্মের ধারাবাহিকতায় গত বুধবার রাত ১টার দিকে বাইক স্ট্যান্ডে আমাদের আলোচনার জন্য ডেকে নিয়ে যায়, কিন্তু কোনো রকম কথাবার্তা ছাড়া বেপরোয়াভাবে আমাদের উপর্যুপরি কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে আমরা শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নুর উদ্দিন বলেন, এটা মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। আমরা তাদের কাউকে মারিনি বা গায়ে হাত তুলিনি। তারা তাদের ইমিডিয়েট এক সিনিয়রকে মারতে উদ্যত হয়েছিল। বিষয়টি জানার পর তাদের জাস্ট একটু ধমক দেওয়া হয়েছে এবং সিনিয়রদের সরি বলতে বলা হয়েছে। এখন তারা নিজেদের অপরাধ ঢাকার জন্য বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করছে। অপর অভিযুক্ত মুনতাসীর শুভর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে- জানতে চাইলে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমার নজরে আসছে। তারা (অভিযুক্তরা) আমার কাছে আসবে। তারা সময় চেয়েছে। আমরা আগে শুনব। এরপর সবকিছু জেনে তারপর দেখব কী করতে হবে।’
সার্বিক বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুর রহিম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, এ ঘটনা জানার পরই আমি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছি। খুব দ্রুত তারা তদন্ত করে এর কারণ উদ্ঘাটন করবেন। তদন্ত রিপোর্ট পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।