ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ঢাবি শিক্ষক সমিতি। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে এ মানববন্ধন করে সংগঠনটি। মানববন্ধনে শিক্ষকরা অতি দ্রুত গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্বের মোড়লদের কার্যকরী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। পাশাপাশি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে যাতে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়, তার দাবি জানানো হয়। একইসাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নেয়ার তীব্র নিন্দা জানান তারা।
ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, যারা এক সময় মুসলিম উম্মাহর কথা বলতেন, তারা আজকে গাজাবাসীদের পাশে দাঁড়ালেন না। যারা আজ গাজায় গণহত্যা, অগ্নিসন্ত্রাস করছে, তারাই সেই বহিরাষ্ট্রের একটি বড় শক্তি। আমরা চাই এই গণহত্যা বন্ধ হোক। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এর ব্যবস্থা নিক।
শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম খান বলেন, আরব রাষ্ট্র থেকে সম্পদ চুরি করে আমেরিকা সেই সম্পদ দিয়ে অস্ত্র তৈরি করে তা বিক্রি করে যে ত্রাস পুরো পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছে, আমরা এর ধিক্কার জানাই। আজকে আমেরিকা গোটা বিশ্বের মানবাধিকার হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তান থেকে শুরু ২১টি স্বাধীন রাষ্ট্রকে ধ্বংস করেছে।
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রহিম বলেন, ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর যখন জাতিসংঘে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র ঘোষিত হয়েছিল তখন এর মূল ছিল আমেরিকা। কিন্তু আমরা যদি দেখি, তারাই এখন মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। জাতিসংঘ যখন যুদ্ধ বন্ধের জন্য দাবি তুলছে, তখন আমেরিকা সেখানে ভেটো দিচ্ছে। আমরা তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে এই ধরনের গণহত্যা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, আজকে নিষ্ঠুরভাবে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। যুদ্ধবিরতি ঘোষণা দেয়ার পরও যুদ্ধ বিরতিতে তারা আসে না। গত শুক্রবার যুদ্ধ বিরতির বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে ১৫টি রাষ্ট্রের মধ্যে ১৩টি রাষ্ট্র যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে ভোট দিলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। এখানে কি বোঝা যাচ্ছে, ইসরাইল মাঠে থেকে যুদ্ধ করছে কিন্তু তার সব ধরনের রসদ জোগাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তা না হলে যখন নিরাপত্তা পরিষদের ১৩টি রাষ্ট্রই যুদ্ধ বন্ধ করতে বলছে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে ভেটো দিচ্ছে। জাতিসংঘ এখানে যে রেজুলেশন এনেছে সেখানে হামাসের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়নি; সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলা হয়েছে সেটা হামাস কিংবা ইসরাইলের মাধ্যমে হোক। কিন্তু এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার আসল চরিত্র তুলে ধরল।
উপাচার্য বলেন, এ পর্যন্ত যাদের হত্যা করা হয়েছে তার ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু। আজকে সেখানে (গাজায়) যারা মানবতার পক্ষে লিখছে, কথা বলছে তাদের হত্যা করা হচ্ছে। গাজা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকসহ তার পরিবারের ছয়জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যিনি উপাচার্য ছিলেন; সেখানে প্রেসিডেন্ট বলা হয়, তাকেও সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের আগে যেমন করে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল ঠিক তেমনি এখন সেখানেও এভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হচ্ছে। আগামী দিনের যারা সম্ভাবনা শিশু ও নারী তাদের হত্যা করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনের অতীত তুলে ধরে উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, যখন অস্ত্র চুক্তি হচ্ছিল তখন তার আগে ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত বলেছিলেন, ‘পাখির যেমন নীড় আছে, গরুর আস্তাবল আছে কিন্তু আমাদের কোনো দেশ নেই।’ চুক্তিতে তখন দুটি রাষ্ট্রকেই স্বীকার করা হয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করা হলেও ফিলিস্তিনি জনগণের যে আশা আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রের তা এখনো স্বীকার করা হয়নি। এই চুক্তির মাধ্যমে ধারণা করা হয়েছিল, শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে কিন্তু তা হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী দুটি রাষ্ট্রকেই স্বীকার করে নেয়া হোক অন্যথায় সেখানে কোনোভাবেই শান্তি আসা সম্ভব না। আমরা এই গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানাই পাশাপাশি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র যাতে তার অস্তিত্ব ফিরে তার আহ্বান জানাই।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য দেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার, শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য অধ্যাপক চন্দনাথ পোদ্দার, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার মোর্শেদ, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, সমিতির কার্যকরী পরিষদের সদস্য অধ্যাপক আমজাদ আলী প্রমুখ।