ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশে একদিনের ব্যবধানে ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমেছে। গতকাল সোমবার (১১ ডিসেম্বর) এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নওগাঁর বদলগাছিতে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আজ থেকে তাপমাত্রা আরো কিছুটা কমতে থাকবে। এরপর ১৪ ডিসেম্বর থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বেশকিছু এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইতে শুরু করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বিচ্ছিন্নভাবে আজকেই (সেমামবার) কোনো কোনো জায়গায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসতে পারে। আজ থেকে পরের তিন দিনের মধ্যে বদলগাছিতে তাপমাত্রা থাকবে সবচেয়ে কম। একইভাবে রাজশাহী, রংপুর, খুলনা বিভাগের যশোর, কুষ্টিয়া, সিলেটের শ্রীমঙ্গল, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়- এসব এলাকার কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যেতে পারে, তখন শুরু হবে শৈত্যপ্রবাহ। শীতের তীব্রতা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে। তখন উত্তরাঞ্চলে শীতের হিমেল কনকনে বাতাস বইতে শুরু করবে।’
গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীতে সূর্যের দেখা পাওয়া গেলেও দুপুরের পর হুট করে বইতে শুরু করে উত্তর থেকে আসা শীতের হাওয়া। তাপমাত্রাও নেমে যেতে শুরু করে। ঘরের বাইরে থাকা অনেকেই হঠাৎ ঠান্ডায় বিপদে পড়ে যান। বিশেষ করে রাস্তার শ্রমজীবী মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যায়। রাজধানীর বাংলামোটরে রিকশাচালক রমিজ মিয়া বলেন, ‘গতরাতে ঠান্ডা বাড়ছিল। রিকশা না চালিয়ে বাসায় চলে গেছিলাম। সকালে উঠে রোদ দেখে বের হইছিলাম। দুপুর পর্যন্ত ভালোই ছিলাম। দুপুরের পর হঠাৎ শীতটা বেশি লাগতেছে। গরমের কাপড়ও কিনি নাই। কষ্ট হইতেছে রিকশা চালাইতে।’ একই অবস্থা রাস্তার পাশে বসা হকারদেরও। পল্টনের এক হকার আশিক বলেন, ‘সকালে রোদ ওঠায় আরামে ছিলাম। দুপুরের পর শীতের বাতাসটা বাড়ছে। এখন খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। নাক-মুখ ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।’ এদিকে অফিসে ফেরত মানুষের মাঝেও অনেকে আজ সকালে রোদের দেখা পেয়ে তেমন একটা ভারি কাপড় নিয়ে বের হোননি। কিন্তু বিকালে অফিস থেকে বের হয়ে বিপদে পড়ে যান। হঠাৎ ঠান্ডা বাতাসে জবুথবু অবস্থা হয়ে যায়। অনেক নিম্নবিত্ত মানুষকে একটু তাপের আশায় রাস্তার পাশে থাকা হকারদের পিঠা বা রুটির ভাজার চুলার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ঢাকায় আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিও চলতি মৌসুমে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯ দশমিক ৫, অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে গেছে। একইভাবে রাজশাহীতে গত শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ৮, যা গতকাল সোমবার ৬ ডিগ্রি কমে ১২ দশমিক ৩, রংপুরে গতকাল ৩ ডিগ্রি কমে ১৫ দশমিক ৫, ময়মনসিংহে ছিল শনিবার ছিল ১৯ দশমিক ৩, গতকাল তা ৪ ডিগ্রি কমে ১৫ দশমিক ৩, তবে সিলেটে তাপমাত্রা কমেছে কম। সেখানে শনিবার ছিল ১৯ দশমিক ৮, গতকাল ১ ডিগ্রি কমে দাঁড়িয়েছে ১৮, চট্টগ্রামে শনিবার ছিল ২৩ দশমিক ৩, গতকাল তা ৫ ডিগ্রি কমে ১৮ দশমিক ২, খুলনায় শনিবার ছিল ২০, ৫ ডিগ্রি কমে আজ ১৫ এবং বরিশালে শনিবার ছিল ১৯ দশমিক ৮, গতকাল তাপমাত্রা প্রায় ৫ ডিগ্রি কমে ১৪ দশমিক ৭ ডিগ্রিতে নেমে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চলে ও নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। মঙ্গলবারের পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চলে ও নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্য এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামীকাল বুধবারের পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চলে ও নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এদিকে অধিদপ্তরের দীর্ঘ মেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ডিসেম্বর মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা সামান্য বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে পারে। তবে এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি থাকতে পারে। এ মাসের শেষার্ধে দেশের কোথাও কোথাও ১ থেকে ২টি মৃদু (৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে দেশের নদী অববাহিকায় ভোর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।