দীঘিপাড়া কয়লাখনি
কয়লা উত্তোলন করলে কমবে জ্বালানি সংকট
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মোঃ সিদ্দিক হোসেন বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) থেকে
দেশের উত্তর অঞ্চলের আবিষ্কৃত পাঁচটি কয়লাখনির মধ্যে দীঘিপাড়ার কয়লাখনির কয়লা উত্তোলন করে জ্বালানি খাতে ব্যবহার করলে বিদেশ থেকে কয়লা আমদানিনির্ভর ও অর্থ ব্যয় করে কয়লা আমদানি করা বন্ধ করা সম্ভব। দিঘীপাড়ার কয়লাখনি কয়লা দিয়ে জ্বালানি খাতের উন্নয়ন করা এখনই সঠিক সময়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কয়লার চড়া মূল্য হওয়ায় দেশে স্থাপিত কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো যেহেতু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সেজন্য সরকারকে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ৫টি কয়লাখনির মজুদ ৩,১৯৭ মিলিয়ন টন কয়লা রয়েছে। বাংলাদেশের জ্বালানির উৎস গ্যাস। বিশ্ব বাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে এবং গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে জ্বালানি খাতের অবস্থা নাজুক। এছাড়া দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়েকটি পাওয়ার প্লান গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। দেশের গ্যাস মজুদ যেহেতু অফুরন্ত নয়, তাই আগামী দিনে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কয়লার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে উত্তর অঞ্চলের ৫টি কয়লা খনি। দেশে আবিষ্কৃত কয়লা ৫৩ টিসিএফ গ্যাসের মজুদ, যা দেশে এ পর্যন্ত আহরিত গ্রাসের প্রায় ৪ গুন বেশি। দিনাজপুরের তিনটি আবিষ্কৃত খনি বড়পুকুরিয়া, ফুলবাড়ী ও দিঘীপাড়া অপরদিকে আরো তিনটি খনি হচ্ছে রংপুরের খালাশপীর ও জয়পুর হাটের জামালগঞ্জ। শুধু দিনাজপুরের আবিষ্কৃত কয়লাখনিতে মজুদ রয়েছে ১ হাজার ৪৬২ মিলিয়ন টন কয়লা। ১৯৮৫ সালে বিওএইচপি নামক একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর, বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে আর একটি কয়লা খনি আবিষ্কার করেন। ১৯৯৭ সালে লন্ডনভিত্তিক একটি বহুজাতিক কোম্পানি এই এলাকায় ১০৭টি কূপ খননের মাধ্যমে উন্নতমানের কয়লা আবিষ্কার করেন। এই কয়লাখনিতে ৬.৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৫৭২ মিলিয়ন টন কয়লার মজুদ নির্ধারণ করেন। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার দিঘীপাড়া কয়লাখনিটি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ ভূতাত্তিক জরিপ অধিদপ্তর এই খনিটি আবিষ্কার করেন। দীর্ঘ একযুগ ধরে বেশ কয়েকটি কূপ খনন করে ৫০০ মিলিয়ন টন কয়লা মজুদের পরিমাণ যাচাই করেন। বর্তমান বাংলাদেশ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিসিএমসিএল’র মাধ্যমে তিন বছর মেয়াদি জরিপকাজ চালানো হয়। জরিপকাজ শেষে চীনা কোম্পানি দীঘিপাড়া কয়লাখনিটি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেন। এই খনিটির তদারকের দায়িত্বে ছিলেন প্রকল্প পরিচালক হিসেবে মোঃ জাফর সাদিক। প্রকল্প পরিচালক সমীক্ষা শেষ করে খনিটির বাস্তব চিত্র তুলে ধরে খনিটি বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ে পাঠান। মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি। বর্তমান সরকার দেশের ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলন করে জ্বালানি খাতে ব্যবহার করবেন না বলে জানিয়ে দিলেও বর্তমান জ্বালানি খাতের সংকটের কারণে এই খনিটি বাস্তবায়ন হবে বলে জানা গেলেও এখন পর্যন্ত সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এই খনিটি বাস্তবায়ন করা হলে মজুদ কয়লা জ্বালানি খাতে সহায়ক হবে। দেশের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ অঞ্চলে যেসব কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশীয় অর্থে ও বিদেশি বিনিয়োগে তৈরি করা হয়েছে সেসব কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ না থাকলে এক সময় বন্ধ হয়ে যাবে। যার কারণে এখনি উত্তম সময় দীঘিপাড়ার কয়লাখনিটি বাস্তবায়ন করে কয়লা উত্তোলন করা প্রয়োজন। তেল, গ্যাসের উপর নির্ভর করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার। বিদেশ থেকে আমদানি করা কয়লা আমাদের দেশের মতো এত উন্নত নয়। তারা তাদের দেশের অউন্নত কয়লা বিদেশে রপ্তানি করছে। এতে একদিকে যেমন সরকার অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে অন্যদিকে বিদেশ থেকে কয়লা আমদানিনির্ভর কমে যাবে। বর্তমান বড়পুুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লা দিয়ে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু রাখ হয়েছে। ৬.৬৮ বর্গকিলোমিটার কয়লার ক্ষেত্রে ১১৮ থেকে ৫০৬ মিটার গভীরতায় ৬টি স্থরে কয়লার মজুদ ৩৯০ মিলিয়ন টন। ২০০১ সাল থেকে শুরু করে ১৯ শে জুলাই ২০২২ পর্যন্ত প্রায় আড়াই কোটি মেট্রিকটন কয়লা উৎপাদন হয়েছে। বর্তমান বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ভূগর্ভ থেকে সুড়ঙ্গ পথে কয়লা উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। সুড়ঙ্গ পথে চীনা প্রযুক্তিতে কয়লা তোলায় খনিটির অফুরন্ত ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে খনিতে ব্যয় বাড়ছে। থেকে যাচ্ছে প্রায় ৮০ ভাগ কয়লা। উঠে আসছে ২০ ভাগ কয়লা। বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি জ্বালানির অভাবে ধুঁকে ধুঁকে চলছে। বর্তমান ২নং ও ৩নং ইউনিট চালানো হচ্ছে। যেভাবে চালানো হচ্ছে তা বেশি দিন ধরে রাখতে পারবে না বলে জানা গেছে। এদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ভূগর্ভ থেকে স্বল্প মাত্রায় কয়লা উত্তোলন চলছে। ভূগর্ভ থেকে আগের মতো এখন আর কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০২৭ইং সালের মধ্যে কয়লাখনিটির উৎপাদন অনেক অংশে কমে আসবে। সে ক্ষেত্রে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র জ্বলানির অভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পদ্ধতি পরিবর্তন করে দীঘিপাড়া কয়লাখনিটি ওপেন মাইনিং পদ্ধতিতে করলে সরকার লাভবান হবেন। এই এলাকার মানুষের নতুন নতুন কর্ম সংস্থান সৃষ্টি হবে। দীঘিপাড়ার কয়লাখনির মজুদ কয়লা উত্তোলনে সরকারের এখনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।