সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ঘনকুয়াশায় জেঁকে বসেছে শীত। এ শীত নিবারণে এবারো সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার শিমুল দাইড় বাজার ও গ্রামাঞ্চলে গার্মেন্টের ঝুট কাপড়ে কম্বল তৈরির হিড়িক পড়েছে। এ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে কম্বল তৈরির কারিগররা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরের মতো এবারো এই শীতের আগমনে এ কম্বল তৈরির কাজ শুরু করেছেন তারা। ওই এলাকার প্রায় ৩২টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এই কম্বল তৈরি কাজে জড়িত রয়েছেন এবং এর মধ্যেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৯৪ সালের শেষ দিকে যমুনা নদীর তীরে কাজিপুর উপজেলার ওই এলাকায় এ কম্বল তৈরি শুরু হয় এবং লাভজনক এ কম্বল তৈরির কারখানা দিন দিন বাড়তে থাকে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, শিমুল দাইড় বাজারেই ছোট-বড় মিলে দেড়শতাধিক ব্যবসায়ী রয়েছেন। গার্মেন্টের ঝুট কাপড় দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে এই কম্বল তৈরি করছেন কারিগররা। তবে বিশেষ করে শিমুল দাইড় বাজার, কুনকুনিয়া, নয়াপাড়া, মাইজবাড়ি মেঘাই, চালিতাডাঙ্গা সালাভরাসহ বিভিন্ন গ্রামঞ্চলে ঝুট কাপড় মেশিন ও ফ্লাডলক মেশিন দিয়ে সেলাই করে এ কম্বল তৈরি করছেন তারা। এসব ঝুট কাপড়ে তৈরি কম্বল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, যশোর, চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া এ ঝুট কাপড়ের কম্বল গ্রামঞ্চলে ঘুরেও বিক্রি করছেন লোকজন। শীত বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বল্পমূল্য এ কম্বলের চাহিদাও বাড়ছে। গরিবের কম্বল এখন ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায়, বাংলা ১৫০ থেকে ৪০০ টাকায় এবং বিশ্বাস, চায়না, এ্যামব্রাশ, ৩ডি, ৫ডি ৬ডি নামের কম্বল এখন ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং ভিআইপি নামে কম্বল ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। প্রতি পিস কম্বল তৈরিতে মজুরী ৫০ থেকে ৭৫ টাকা করে দেয়া হয়। নারী শ্রমিকদের কম্বল তৈরিতে মজুরী কম হলেও এ কাজের চাহিদা তাদের বেশি। শীত মৌসুমে পরিবারের ছেলেমেয়েরাও এই কম্বল সেলাইয়ে কাজে অংশ নিয়ে ভালো মজুরিও পেয়ে থাকে। শিমুলদাইড় বাজার সমিতির কর্মকর্তারা জানান, কয়েক যুগ ধরে ঝুট কাপড় দিয়ে কম্বল তৈরি শুরু করে স্থানীয় হাট-বাজারে বেচাকেনা শুরু হয়। এ কম্বল এখন ৫০ থেকে ৫২ আইটেমে তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে এ কম্বল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে এবং যমুনা তীরবর্তী সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা এখন ঝুট কাপড়ে তৈরি কম্বল খ্যাত হিসেবে পরিচিতও হয়েছে। কাজিপুর উপজেলা প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, কাজিপুরের ঝুট কাপড়ের তৈরি কম্বল এখন প্রায় সারাদেশে যাচ্ছে। দাম কম থাকায় বিশেষ করে শীত মৌসুমে এ কম্বলের কদরও বাড়ছে। এতে অনেক বেকার নারী-পুরুষ এরমধ্যেই সাবলম্বী হয়েছে। এ কম্বল তৈরির কারখানা মালিকদের ঋণ প্রদানের সহযোগিতার প্রয়োজন বলে তারা উল্লেখ করেন।