পৌষকে বলা হয় শীতের মাস। যদিও এখন আর ছয় ঋতুর খুব একটা দেখা মেলে না। তবুও এই পৌষে ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দুতে সূর্যের হাসি প্রকৃতির নিয়মিত ছবি হয়ে থাকে। এই পৌষের প্রথম দিনে মৃদু শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে দেশের উত্তরাঞ্চল। গতকাল বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবাহাওয়া অধিদপ্তরের মতে দেশের ওই অঞ্চল দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ (৮-১০ ডিগ্রি সে. মধ্যে) বইছে। গতকাল সকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, ভোর ৬টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায় ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দেশের সর্ব দক্ষিণের উপজেলা টেকনাফে ৩০.৬ ডিগ্রি সে.। এছাড়া মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ১১.৪ ও কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। ঢাকায় একদিনে তাপমাত্রা কমেছে ২.৩ ডিগ্রি। পঞ্চগড়ে শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে। গতকাল ভোর ৬টায় পঞ্চগড়ে এ তাপমাত্রা রেকর্ডের তথ্য জানান প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ। তিনি জানান, আগের দিনের থেকে তাপমাত্রা অনেক কমেছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অঞ্চলটি হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্ঘের নিকটস্থ হওয়ায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। সামনে তাপমাত্রা আরও কমে আসবে। ভোরে হালকা কুয়াশা ভেদ করে জেগে উঠেছে সূর্য। সূর্যের কিরণ ছড়ালেও রাত থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত অনুভূত হচ্ছে বরফগলা শীত। গ্রামীণ জনপদে নিম্নআয়ের মানুষরা শীত নিবারণ করছে খড়কুটো জ্বালিয়ে। জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই সকাল সাড়ে ৭টা থেকে কাজে বেরিয়ে যায় এ অঞ্চলে পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিক, দিনমজুর থেকে নিম্ন আয়ের বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষদের।
শীতবস্ত্রের অভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন সীমান্ত জেলার মানুষগুলো। এ কারণে নিম্নবিত্তরা শহরের ফুটপাতের দোকান থেকে নিজেদের সাধ্যমতো কাপড় কিনে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। গ্রামীণ নারীরা বলছেন, কুয়াশা না থাকলেও খুব ঠান্ডা পড়ছে। ঘরের মেঝে থেকে শুরু করে আসবাপত্র ও বিছানা বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে ওঠে। সকালে গৃহস্থালির কাজ করতে গিয়ে কনকনে ঠান্ডায় হাত-পা অবশ হয়ে আসে।
চা শ্রমিক ও পাথর শ্রমিকরা জানান, কুয়াশা নেই। তবে কনকনে শীত। ভোরে প্রচণ্ড হিমশীতের মধ্যেই আমরা চা বাগানে পাতা তুলি। এ সময় হাত-পা অবশ হয়ে আসে। কিন্তু কী করব, জীবিকার তাগিদে কাজ করতে হচ্ছে। একই কথা নদীতে পাথর তুলতে যাওয়া শ্রমিকদের। অগ্রহায়ণের শেষে এসে কমতে শুরু করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা। এ ধারাবাহিকতায় ১৪ ডিসেম্বর দেশের কয়েকটি এলাকার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির ঘরে নেমে আসে। সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায় ১০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার যা ছিল রাজশাহীতে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একদিনের ব্যবধানে কমেছে ১.৭ ডিগ্রি।
দিনাজপুর ও চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও ১০ ডিগ্রির ঘরে নেমে এসেছে। দিনাজপুরের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.৬ ডিগ্রি ও চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কুড়িগ্রামের তাপমাত্রা নেমেছে ১১ ডিগ্রিতে। ঢাকা বিভাগের নিকলিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি, ঈশ্বরদীতে ১১.৫ ডিগ্রি, বদলগাছীতে ১১.৬ ডিগ্রি, সৈয়দপুরে ১১ ডিগ্রি, ডিমলায় ১১.৫, রাজারহাটে ১১ ডিগ্রি, ময়মনসিংহে ১১.৭, যশোরে ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়েছে, পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কোথাও কোথাও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তাপমাত্রা ৮-১০ ডিগ্রির ঘরে নামলে বলা হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬-৮ ডিগ্রির ঘরে নামলে বলা হয় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ, ৪-৬ ডিগ্রির ঘরে নামলে বলা হয় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ এবং ৪ ডিগ্রির নিচে নামলে বলা হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।