ময়মনসিংহ পরিবহন সেক্টরে গুরু-শিষ্য হিসেবে পরিচিত আমিনুল হক শামীম (সিআইপি) ও সোমনাথ সাহা। তারা দুজনেই প্রভাবশালী পরিবহন নেতা এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুজনেই। এরই ধারাবাহিকতায় গুরু শিষ্যের এই মেলবন্ধনে প্রতীক বরাদ্দেও রয়েছে চমক। তারা দুজনেই নির্বাচনি প্রতীক হিসেবে বেছে নিয়েছেন ট্রাক প্রতীক, যা তাদের পরিবহন সেক্টর ও কর্মী সমর্থকদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। গতকাল সকালে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দে এই ঘোষণা করেন। এর মধ্যে ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন থেকে নৌকা বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমিনুল হক শামীম। তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির অতিরিক্ত মহাসচিব। তার সাথে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রয়াত ধর্মমন্ত্রীর ছেলে ও ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের বতর্মান সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত। এছাড়া একই আসনে নাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মূসা সরকার এবং কাঁচি (কেঁচি) প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে লড়ছেন বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান দুলু। ফলে ময়মনসিংহ বিভাগীয় নগরের এবং জাতীয় সংসদের বতর্মান বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ এমপির এই হেভিওয়েট আসনে চতুর্মুখী ভোটযুদ্ধ হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষকরা। একইভাবে আমিনুল হক শামীমের স্নেহধন্য শিষ্য ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোমনাথ সাহা। তিনি জিলা মোটর মালিক সমিতির বতর্মান সম্পাদক।
এই আসনে তার সাথে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রয়াত বিশেষ সহকারী মাহাবুবুল হক শাকিলের স্ত্রী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি নিলুফার আঞ্জুম পপি। এছাড়া নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে একই আসনে স্বতন্ত্রভাবে ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কেটলি প্রতীক নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের বতর্মান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ হাসান অনু, ঈগল প্রতীক নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য নাজনীন আলম ও নাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ডা. মোস্তাফিজুর রহমান আকাশসহ মোট ৯ প্রার্থী। সূত্র জানায়, এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহের ১১টি সংসদীয় আসনে ১০৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দিলেও যাচাই বাছাইয়ে ২৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। এর মধ্যে প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে আপিল করলে পাঁচ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়। তবে ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের নৌকার বৈধ প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী বতর্মান এমপি আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন নির্বাচন কমিশনে আপিল করলে সালামের প্রার্থিতা বাতিল হয়। তবে প্রার্থিতা ফিরে পেতে মেজর সালাম উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হলে গতকাল (সোমবার) তাকে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন আদালত। ফলে ময়মনসিংহের ১১টি আসনে সর্বমোট ৮৭ প্রার্থী শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকলেও গতকাল (রোববার) জেলার ১৯ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত ৬৮ প্রার্থী এই নির্বাচনে মাঠে টিকে থেকে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।