শুরু হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। ১৮ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর থেকেই প্রচারণা শুরু হয়। আগামী ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত ভোটের প্রচার চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। এ হিসেবে এবার প্রচার-প্রচারণার জন্য ১৮ দিন সময় পাচ্ছেন তারা। নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম-কানুন মানতে হবে। যেসব নিয়ম মানতে হবে তা রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালায় স্পষ্ট করা হয়েছে।
সভা-সমিতি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ : (ক) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি প্রচারণার ক্ষেত্রে সমান অধিকার পাবেন। তবে তারা কেউ প্রতিপক্ষের সভা, শোভাযাত্রা ও অন্যান্য প্রচারাভিযান পণ্ড বা তাতে বাধা দিতে পারবেন না; খ. সভার দিন, সময় ও স্থান সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নেবেন। তবে অনুমতি লিখিত আবেদন পাওয়ার সময়ের ক্রমানুসারে দিতে হবে। গ. সভা করতে চাইলে প্রস্তাবিত সভার কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে তার স্থান এবং সময় সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে, যাতে ওই স্থানে চলাচল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। ঘ. জনগণের চলাচলের বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো সড়কে জনসভা কিংবা পথসভা করতে পারবে না এবং তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তিও একই ধরনের জনসভা বা পথসভা ইত্যাদি করতে পারবে না। ঙ. কোনো সভা অনুষ্ঠানে বাধাদানকারী বা অন্য কোনোভাবে গোলযোগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সভার আয়োজকরা পুলিশের শরণাপন্ন হবেন, এই ধরনের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তারা নিজেরা ব্যবস্থা নিতে পারবেন না।
পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ব্যবহার-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ : কোনো প্রার্থী কিংবা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নিম্নে উল্লিখিত স্থান বা যানবাহনে কোনো প্রকার পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল লাগাতে পারবেন না। এর মধ্যে রয়েছে সিটি করপোরেশন এবং পৌর এলাকায় অবস্থিত দালান, দেয়াল, গাছ, বেড়া, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি বা অন্য কোনো দণ্ডায়মান বস্তুতে; সারা দেশে অবস্থিত সরকারি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের স্থাপনাসমূহে এবং বাস, ট্রাক, ট্রেন, স্টিমার, লঞ্চ, রিকশা কিংবা অন্য কোনো প্রকার যানবাহনে। তবে দেশের যেকোনো স্থানে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ঝোলাতে বা টানাতে পারবে। এছাড়া কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদির ওপর অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি লাগানো যাবে না এবং ওই পোস্টার, লিফলেট ও হ্যান্ডবিল ইত্যাদির কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন তথা বিকৃতি বা বিনষ্ট করা যাবে না। পোস্টার ২৩ ইঞ্চি বাই ১৮ ইঞ্চির বেশি হতে পারবে না এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পোস্টারে তাহার প্রতীক ও নিজের ছবি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির ছবি বা প্রতীক ছাপাতে পারবে না। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনীত হলে সেক্ষেত্রে তিনি কেবল তার বর্তমান দলীয় প্রধানের ছবি পোস্টারে ছাপাতে পারবেন। উল্লিখিত ছবি সাধারণ ছবি হতে হবে এবং কোনো অনুষ্ঠান, মিছিলে নেতৃত্বদান, প্রার্থনারত অবস্থা ইত্যাদি ভঙ্গিমায় ছবি কোনো অবস্থাতেই ছাপানো যাবে না। ছবির আয়তন ২৩ ইঞ্চি বাই ১৮ ইঞ্চির অধিক হতে পারবে না। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনি প্রতীকের সাইজ, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ বা উচ্চতা ৩ মিটারের বেশি হতে পারবে না।
যানবাহন ব্যবহার-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ : ক. কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি কোনো ট্রাক, বাস, মোটরসাইকেল, নৌযান, ট্রেন কিংবা অন্য কোনো যান্ত্রিক যানবাহন সহকারে মিছিল কিংবা মশাল মিছিল রের করতে পারবে না, কিংবা কোনো ধরনের শোডাউন করতে পারবে না। খ. নির্বাচনি প্রচারকাজে হেলিকপ্টার বা অন্য কোনো আকাশযান ব্যবহার করা যাবে না। তবে দলীয় প্রধানের যাতায়াতের জন্য তা ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু যাতায়াতের সময় হেলিকপ্টার থেকে লিফলেট, ব্যানার বা অন্য কোনো প্রচার সামগ্রী প্রদর্শন বা বিতরণ করতে পারবে না।
দেয়াল লিখন-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ : ক. কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তা মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি দেওয়ালে লিখে কোনো প্রকার নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে পারবেন না। খ. কালি বা রং দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে দেওয়াল ছাড়াও কোনো দালান, থাম, বাড়ি বা ঘরের ছাদ, সেতু, সড়ক দ্বীপ, রোড ডিভাইডার, যানবাহন বা অন্য কোনো স্থাপনায় প্রচারণামূলক কোনো লিখন বা অংকন করতে পারবেন না।
গেট বা তোরণ নির্মাণ, প্যান্ডেল বা ক্যাম্প স্থাপন ও আলোকসজ্জাকরণ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ : ক. কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচনি প্রচারণায় কোনো গেট বা তোরণ নির্মাণ করতে পারবেন না কিংবা চলাচলের পথে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবেন না। খ. নির্বাচনি প্রচারণার জন্য ৪০০ (চারশত) বর্গফুটের বেশি স্থান নিয়ে কোনো প্যান্ডেল তৈরি করতে পারবেন না। গ. নির্বাচনি প্রচারণার অংশ হিসেবে বিদ্যুতের সাহায্যে কোনো প্রকার আলোকসজ্জা করতে পারবেন না। ঘ. কোনো সড়ক কিংবা জনগণের চলাচল ও সাধারণ ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানে নির্বাচনি ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবেন না; একজন প্রার্থী দলীয় ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় নির্বিশেষে প্রতিটি ইউনিয়নে সর্বোচ্চ একটি এবং প্রতিটি পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন এলাকার প্রতি ওয়ার্ডে একটির বেশি নির্বাচনি ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবেন না। ঙ. নির্বাচনি প্রচারণার জন্য প্রার্থীর ছবি বা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণামূলক কোনো বক্তব্য বা কোনো শার্ট, জ্যাকেট, ফতুয়া ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারবেন না। চ. নির্বাচনি ক্যাম্পে ভোটারদের কোমল পানীয় বা খাদ্য পরিবেশন বা উপহার দিতে পারবেন না।
উসকানিমূলক বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ এবং বিস্ফোরক বহন-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ : ক. কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচনি প্রচারণাকালে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বক্তব্য বা কোনো ধরনের তিক্ত বা উসকানিমূলক কিংবা লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না। খ. মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে কোনো প্রকার নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে পারবেন না। গ. নির্বাচন উপলক্ষ্যে কোনো নাগরিকের জমি, ভবন বা অন্য কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির কোনো ধরনের ক্ষতিসাধন করা যাবে না। অনভিপ্রেত গোলযোগ ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ দ্বারা কারও শান্তি ভঙ্গ করতে পারবেন না।
মাইক ব্যবহার-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ : কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি কোনো নির্বাচনি এলাকায় মাইক বা শব্দের মাত্রা বৃদ্ধিকারী বা যন্ত্রের ব্যবহার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবেন।
সরকারি সুবিধা নিয়ে প্রচারণা-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ : নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর নির্বাচনি এলাকায়, সংশ্লিষ্ট জেলায় বা অন্য কোথাও কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তা মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচনি কাজে সরকারি প্রচার যন্ত্রের ব্যবহার, সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের ব্যবহার বা সরকারি যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন না এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ বা ব্যবহার করতে পারবেন না। অর্থ, অস্ত্র, পেশি শক্তি, স্থানীয় প্রভাব বা সরকারি ক্ষমতার দ্বারা নির্বাচন প্রভাবিত করা যাবে না। নির্বাচনি জনসভা বা মিছিলের দিন, সময় ও স্থান সম্পর্কে আগেই স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।