চট্টগ্রামে জমে উঠেছে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের নির্বাচনি প্রচারণা। নির্বাচনের দিন অনেক বাকি থাকলেও এখনই দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থীরা। এদিকে প্রার্থীদের মধ্যে স্বতন্ত্রদের নিয়ে চলছে নানা হিসাব নিকাশ। কেউ বলছেন তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার কারো মতে, এলাকায় তাদের তেমন কোনো ভিত্তি নেই। তাই তারা দলীয় কিংবা জোটগত প্রার্থীদের জন্য সমস্যা হতে পারবে না।
এদিকে জোটগত নির্বাচনেও চলছে নানা ধরনের হিসাবনিকাশ। জোটগত নির্বাচনের স্বার্থে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের দুটি আসন ছেড়ে দেয়া হয় জাতীয় পার্টিকে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারি) আসনে আওয়ামী লীগের এমএ সালামের পরিবর্তে জাপার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জোটের প্রার্থী। চট্টগ্রাম-৮ (পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও- বোয়ালখালী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নোমান আল মাহমুদের পরিবর্তে জাপার সোলায়মান আলম শেঠ জোটের প্রার্থী। জোটগত নির্বাচনের অংশ হিসাবে দুই আওয়ামী লীগ প্রার্থী ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। তাই দুই নির্বাচনি আসনে থেকে গেলেন জাপার দুই প্রার্থী। এরপর থেকে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে বলাবলি হচ্ছে জোটের স্বার্থে বলি হলেন দুই আওয়ামী লীগ নেতা। তবে মাঠপর্যায়ের চিত্র ভিন্ন। চট্টগ্রাম-৫ আসনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী কোনো প্রার্থী নেই। তাই অনেকটা নির্ভার জাপা প্রার্থী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। কিন্তু চট্টগ্রাম-৮ আসনের চিত্র একেবারেই উল্টো। এই আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী আবদুচ ছালাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পর থেকে তার সরব উপস্থিতি আছে চোখে পড়ার মতো। গত সোমবার কেটলি প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে তিনি পুরোদমে প্রচারণায় নামেন। গত মঙ্গলবারও তিনি চষে বেরিয়েছেন নিজ নির্বাচনি এলাকায়।
চট্টগ্রাম-৫ আসনে আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলেও দলের শক্ত কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। এই আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী। নির্বাচনি মাঠে প্রতিদিন তার সরব উপস্থিতি আছে। তবে তিনি জাপা প্রার্থী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবেন বলে মনে করছেন না নেতাকর্মীরা। দলীয় চাপে শেষ মুহূর্তে হয়তো তার তৎপরতা আরো সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে জাপার প্রার্থী একেবারে নির্ভার হয়ে যেতে পারবেন বলে দলীয় কর্মীরা মনে করছেন।
তবে উল্টো চিত্র চট্টগ্রাম-৮ আসনে। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। আর শুরু থেকেই তুমুল আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালাম। তিনি নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান। এই আসনে আছেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা প্রকৌশলী বিজয় কিষাণ চৌধুরী। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তবে তিনি নির্বাচনি মাঠে তেমন সক্রিয় নন। শেষ মুহূর্তে আবদুচ ছালামের সমর্র্থনে তিনি মাঠে নামতে পারেন বলেও নেতাকর্মীরা মনে করছেন।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ চট্টগ্রাম-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালাম বলেন, আমি নির্বাচনি মাঠে থাকব। আমি মনে করি আমার এলাকার ভোটারদের সমর্থন আমি পাব। ইনশাল্লাহ আমি বিজয়ী হব।
চট্টগ্রাম-৮ আসনের ভোটারদের বড় একটি অংশ বোয়ালখালী উপজেলায়। এই উপজেলার স্বেচ্চাসেবক লীগের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান সেলিম বলেন, আমরা দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে জাপা প্রার্থীর পক্ষে কাজ করব। কিন্তু মাঠের চিত্র ভিন্ন। আমি যদি বোয়ালখালী এলাকার ভোটারদের কথা বলি তাদের তিন ভাগের দুই ভাগ অংশ আবদুচ ছালাম ভাইয়ের সমর্থক। এছাড়া জাপা প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ আগে কখনো এই এলাকায় প্রার্থী হননি। তেমন পরিচিতি নেই ভোটারদের কাছে। জাপা প্রার্থী এখানে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়বেন।
এদিকে বার বার মনোনয়ন পেয়েও জোটের স্বার্থে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় হতাশ চট্টগ্রাম-৫ আসনের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা বলেছেন, জোটের স্বার্থে চট্টগ্রাম-৫ আসনে প্রার্থী বদলের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কর্মকাণ্ডেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
দলীয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী আসনটি এক সময় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোটের ঘাঁটি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলেন বিএনপির। এরপর ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে টানা তিনবার জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এই আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই তিনবারই আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান এমএ সালাম। তিনবারই তাকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হয়েছে জোটের স্বার্থে। দলীয় সিদ্ধান্তে সবশেষ গেল ১৭ ডিসেম্বর চতুর্থবারের মতো তাকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হয়। নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে হাটহাজারি উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা জোটের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করব। তবে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় প্রার্থী সংসদ সদস্য না হওয়ায় কিংবা দলের স্বার্থে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় আমরা অনেকটা হতাশ। আমরা চাই আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীই এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোক। ভবিষ্যৎ নির্বাচনে দলের হাইকামন্ড এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমরা মনে করছি।