বেগুন নিয়ে কবি সুবীর কাস্মীর লিখেছেন, বেগুন বেগুন কাব্য আমার গায়ে দিচ্ছো তুমি আগুন? ঝলসে যাওয়া খোসা ছিলে তেল, নুন, ঝাল লংকা নিয়ে পেঁয়াজ কেটে ঝাঁঝিয়ে দিয়ে অবশেষে চটকে দিলে! আহা! আপনার কি গুণ! বলেন তো দাদা, আমি কি বেগুন?
এক সময় বিস্ময় আর চমকভরা দৃষ্টি নিয়ে সব মানুষই একবার তাকাতো বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী গফরগাঁওয়ের লাফা বেগুনের দিকে। এখন নানা সমস্যার কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এ লাফা বেগুন। লাফা বেগুন কেবল গফরগাঁও উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের চরমছলন্দ গ্রামের কাচারী পাড়া এলাকায়ই হতো। লাফা বেগুন বিলুপ্ত হয়ে গেলেও গফরগাঁওয়ের দিগন্তজুড়ে এখন চাষ হচ্ছে গোল ও লম্বা বেগুন। তার মধ্যে তাল বেগুন, ভোলানাথ, সিংনাথ, ইসলামপুরী, বারী বেগুন, খটখটিয়া, তারা ও ঝুড়ি বেগুন অন্যতম। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ৭৫০ একর জমিতে বিভিন্ন জাতের বেগুনের চাষ হয়েছে। গফরগাঁওয়ের গোল বেগুন এখনো দেশ বিখ্যাত। আর এই বেগুন চাষ করে স্বাবলম্বী ও সচ্ছল জীবনযাপন করছেন উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নসহ উপজেলার চারটি ইউনিয়নের অন্তত ৪ শতাধিক বেগুন চাষি। এবার গোল ও লম্বা বেগুনের ফলনও হয়েছে বাম্পার। এ বেগুন গফরগাঁওয়ের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে সারাদেশে। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চরআলগী, দত্তের বাজার, টাঙ্গাব, পাঁচবাগ ও রসুলপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে দিগন্তজুড়ে বেগুন খেতের সবুজের সমারোহ। এবার বেগুনের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভালো দামে অত্যান্ত খুশি চাষিরা। শুধু ধান চাষের উপর নির্ভরশীল কৃষিজমিতে বেগুন চাষ এনে দিয়েছে নতুন গতি। কৃষকদের জীবন-জীবিকার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে কৃষির এই সফল বিবর্তন। এই চার ইউনিয়নের উৎপাদিত বেগুন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি হচ্ছে।
উর্বর দো-আঁশ মাটির প্রাচুর্যের কারণে উপজেলার চরআলগী, দত্তের বাজার, টাঙ্গাব ও পাঁচবাগ এই চার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ধানের চেয়ে রবিশস্য ও সবজি আবাদ বেশি হয়। বর্তমানে উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের নয়াপাড়া, চরমছলন্দ, জিরাতিপাড়া, কাচারীপাড়া, কুড়ুতলীপাড়া, বোরাখালী, নিধিয়ারচর ভাটিপাড়া, চরকামারিয়া, চরমছলন্দ উত্তর নয়াপাড়া ও চরআলগী গ্রামে, টাঙ্গাব ইউনিয়নের ব্রাহ্মনখালী, দুবাশিয়া, বারইহাটি ও টাঙ্গাব গ্রামে, পাঁচবাগ ইউনিয়নের চরশাঁখচূড়া, খুরশিদ মহল, গাভীশিমুল গ্রামে এবং দত্তের বাজার ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বেগুন উৎপাদিত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের উপজেলার বেগুন ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, এতদাঞ্চলের রবি শস্যের অন্যতম গোল ও লম্বা বেগুন।
চরআলগী ইউনিয়নের নয়াপাড়া ও চরআলগী গ্রামের বেগুন চাষি হাফিজ উদ্দিন, গোলাম হোসেন, জীবন মিয়া, মাসুদ রানা ও ছামিদ মিয়া জানান, বংশানুক্রমিক ঐতিহ্য অনুযায়ী তারা বেগুন চাষ করে আসছেন। তারা জানান এবার বেগুনের বেশ ভালো ফলন হওয়ায় তারা ভালো দামও পেয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রকিব আল রানা জানান, উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের সব গ্রামেই কম বেশি গোল ও লম্বা বেগুন চাষ হয়ে থাকে। এছাড়াও টাঙ্গাব, রসুলপুর, পাঁচবাগ ও দত্তের বাজার ইউনিয়নেও বেগুন চাষ হয়। এবার এসব ইউনিয়নে বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চরআলগী, টাঙ্গাব, পাঁচবাগ ও দত্তেরবাজার ইউনিয়নের অন্তত ৪ শতাধিক কৃষক বেগুন চাষ করে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা আয় করছে। এছাড়াও আরও অন্তত দেড় হাজার কৃষক পরিবার বেগুন চাষ করে সুফল ভোগ করছে।