ঢাকা ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অন্যরকম

ডাইনোসরের ডিমকে দেবতা ভেবে পূজা

ডাইনোসরের ডিমকে দেবতা ভেবে পূজা

ভারতের মধ্য প্রদেশের ধার জেলা ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত। ওই জেলারই অন্তর্গত পাড়ল্যা গ্রামের বাসিন্দাদের কুলদেবতা ‘কাকর ভৈরব’। তারা বংশপরম্পরায় কাকর ভৈরবের পূজা করে আসছেন দীর্ঘকাল ধরে। তাদের বিশ্বাস শিলাকৃতির কাকর (যার অর্থ জমির সীমানা) ভৈরব (ঈশ্বর) জমি ও গবাদি পশুর রক্ষা করেন এবং দুর্দশা নির্মূল করেন। কিন্তু ওই ভীল সম্প্রদায়ের অনেকের ধারণাই ছিল না, যে গোলাকৃতি শিলাটি তারা নিজেদের চাষাবাদের জমির সীমানায় রেখে পূজা করছেন, সেটা আসলে ডাইনোসরের ডিমের জীবাশ্ম! পাড়ল্যার বাসিন্দা ভেস্তা মান্দোলাই বলন, ‘কিছুদিন আগে পর্যন্ত আমরা জানতামই না, ওই শিলা আসলে ডাইনোসরের ডিমের জীবাশ্ম। কত বছর ধরে আমারা কাকর ভৈরবের পূজা করে আসছি তার ইয়ত্তা নেই।’ তিনি বলেন, ‘আশপাশের অঞ্চলের কোথাও কোথাও কাকর ভৈরবকে ভিলেট বাবা বলেও পূজা করা হয়। আমাদের গ্রামের ছেলেরা কোথাও থেকে গোলাকৃতি শিলা যেগুলো অন্যান্য পাথরের থেকে আলাদা সেরম কিছু খুঁজে পেলে নিয়ে এসে পূজা করত। কেউ কী আর জানত, ওগুলো আসলে ডাইনোসরের ডিমের জীবাশ্ম!’ যেভাবে জানা গেল : নর্মদা ভ্যালি অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে খননকার্য হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ডাইনোসরের ‘নেস্টিং সাইট’, ‘নেস্ট’, তাদের ডিমের জীবাশ্ম, হাঙরের দাঁতের জীবাশ্ম আরো অনেক কিছু উদ্ধার করেছেন জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞরা। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিশাল ভার্মা যিনি পেশায় পদার্থবিদ্যার শিক্ষক। এ পর্যন্ত তিনি ২৫৬টি ডাইনোসরের ডিম উদ্ধার করেছেন। বিশাল ভার্মা ও তার মতো অন্যান্য জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞদের নিরলস প্রয়াসের ফলে ওই অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক ও ভূতত্ত্বগত গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষ জেনেছে। পাড়ল্যা ও সংলগ্ন অঞ্চল থেকে উদ্ধার করা জীবাশ্ম হতবাক করেছে ভেস্তাসহ ভীল সম্প্রদায়ের অনেককেই। তারা জেনেছেন, গোলাকার শিলা যাকে বংশপরম্পরায় পূজা করা হয়, সেটা আসলে টাইট্যানো-স্টর্ক প্রজাতির ডাইনোসরের ডিম! দিন কয়েক আগে বীরবল সাহনি ইনস্টিটিউট অব প্যালিওসায়েন্সস-এর (বি?এসআইপি) বিশেষজ্ঞদের একটি দল ধার জেলা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল ওই অঞ্চল থেকে উদ্ধার হওয়া ফসিল ও অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর সংরক্ষণ। একই সঙ্গে ইউনেস্কোর কাছে ধার জেলাকে ‘গ্লোবাল জিও পার্ক’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রস্তাব পেশ করাও ছিল তাদের লক্ষ্য। সে সময় বি?এসআইপির ওই দলে ছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর ড. মহেশ জি ঠক্কর, ড. শিল্পা পাণ্ডে, মধ্য প্রদেশ ইকো ট্যুরিজম বোর্ড-এর সিইও শমিতা রজৌরা, বন দপ্তরের কর্মকর্তা, অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা এবং বিশাল ভার্মা। বিশাল ভার্মা, যিনি ২০০৭ সাল থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক কাজ চালিয়ে গেছেন, তার অভিজ্ঞতা বলে স্থানীয় মানুষরাও কিন্তু সমান আগ্রহী ছিলেন কাকর ভৈরবের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বোঝার জন্য। গ্রামের মানুষদের বোঝানোটা তেমন শক্ত ছিল না। বছর পাঁচেক আগে আমরা প্রথম বুঝতে পারি স্থানীয় মানুষ যাকে কাকর ভৈরব বলে পূজা করেন সেটা ডাইনোসরের ডিম। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে যারা কাজ করছিলেন, সে সময় তাদের অনেকেই পাড়ল্যার। তাদের কিন্তু বুঝিয়ে বলতে কোনো অসুবিধা হয়নি এবং কোনোভাবেই তাদের বিশ্বাসে আঘাত লাগেনি। বরং তারা কৌতূহলী ছিলেন। বিভিন্ন জিনিস জানতে চেয়েছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত