জাতিসংঘের রিপোর্ট

গাজায় বিপর্যয়কর ক্ষুধার সম্মুখীন ৬ লাখ মানুষ

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

টানা আড়াই মাস ধরে গাজায় আকাশ ও স্থলপথে হামলা করে চলেছে ইসরাইল। এতে করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ওই ভূখণ্ডটিতে তীব্র মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট এতোটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, ভূখণ্ডটির প্রায় ৬ লাখ মানুষ বিপর্যয়কর ক্ষুধার সম্মুখীন হয়েছেন। জাতিসংঘের এক রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ ‘বিপর্যয়কর ক্ষুধার’ সম্মুখীন হয়েছেন বলে গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে। আর গাজার সমগ্র জনসংখ্যাই তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সংকটে রয়েছে বলে ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) রিপোর্টে বলা হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)-সহ জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) তথ্য অন্তর্ভুক্ত করে আইপিসি এই রিপোর্ট প্রস্তুত করেছে। আইপিসি হচ্ছে একটি বহু-অংশীদারভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক মান অনুযায়ী ক্ষুধা সংকটের তীব্রতা এবং মাত্রা নির্ধারণ করতে তথ্য বিশ্লেষণ করে থাকে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার ২৬ শতাংশ মানুষ- প্রায় ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৬০০ জন লোক- তাদের খাদ্য সরবরাহ এবং সংকট মোকাবিলা করার সক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে এবং তারা বিপর্যয়কর ক্ষুধা (আইপিসি ফেজ ৫) এবং অনাহারের সম্মুখীন হয়েছে।’

ডব্লিউএফপির নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাককেইন বলেছেন : ‘ডব্লিউএফপি কয়েক সপ্তাহ ধরে এই আসন্ন বিপর্যয়ের বিষয়ে সতর্ক করে এসেছে। দুঃখজনকভাবে আমরা নিরাপদ ও ধারাবাহিক সহায়তা সরবরাহের বিষয়ে আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছি। সেখানকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ এবং গাজার কেউই অনাহার থেকে নিরাপদ নয়।’ যদি ‘তীব্র সংঘাত এবং সীমিত মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার’ বর্তমান পরিস্থিতির মতো অব্যাহত থাকে, তাহলে আইপিসি ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছে, ‘আগামী ছয় মাসের মধ্যে সেখানে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি রয়েছে।’ ডব্লিউএফপি খাদ্যনিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এরমধ্যেই জানিয়েছেন যে, সংঘাতের মধ্যে বেঁচে থাকতে গাজাবাসীরা ‘তাদের সকল সম্পদই ব্যবহার করেছে, সেখানে জীবিকা ধ্বংস হয়ে গেছে, বেকারি ধ্বংস হয়ে গেছে, দোকানগুলোও খালি হয়ে গেছে এবং মানুষ খাবার খুঁজে পাচ্ছে না,’ বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গাজার ফিলিস্তিনিরা ডব্লিউএফপি কর্মীদের জানিয়েছেন, তারা প্রায়শই পুরো দিন না খেয়ে থাকেন এবং অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নিজেরা ক্ষুধার্ত অবস্থায় থেকে যান যাতে শিশুরা কিছু খেতে পারে। ডব্লিউএফপির প্রধান অর্থনীতিবিদ আরিফ হোসেন জানান, ‘এগুলো শুধু সংখ্যা নয়- এই উদ্বেগজনক পরিসংখ্যানগুলোর পেছনে পৃথকভাবে শিশু, নারী এবং পুরুষরা রয়েছেন। এই সংকট যে জটিলতা, মাত্রা এবং দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে তা নজিরবিহীন।’

প্রতিবেদনে জোর দেওয়া হয়েছে যে, ব্যাপক মৃত্যু রোধে আরো জরুরি খাদ্য এবং বহু-খাতে সহায়তা সরবরাহ অপরিহার্য। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সাম্প্রতিক সাত দিনের সংঘাত বিরতি দেখিয়ে দিয়েছে যে, সংঘাত বন্ধ থাকলে ডব্লিউএফপি এবং অংশীদাররা সহায়তা প্রদান করতে পারে এবং কেরেম শালোম সীমান্ত ক্রসিং পুনরায় খোলার ফলে গাজায় আরো খাদ্য ও অন্যান্য ত্রাণ সরবরাহের সুযোগ তৈরি হয়।’ এই পরিস্থিতিতে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে ম্যাককেইন বলেন : ‘আমরা পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মানুষকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখতে পারি না। গাজায় ও উপত্যকাজুড়ে সরবরাহ প্রবাহের জন্য এবং বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে জীবন রক্ষাকারী সহায়তা পাওয়ার জন্য এখন মানবিক সহায়তার সরবরাহ করা প্রয়োজন।’ অবশ্য গত ১২ ডিসেম্বর ইসরাইল গাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সরাসরি মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য কেরাম শালোমে তার সীমান্ত ক্রসিং খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, উপত্যকাটিতে চলমান ইসরাইলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৮ হাজার শিশু এবং ৬ হাজার ২০০ নারী। এছাড়া নিহতদের মধ্যে ৩১০ জন চিকিৎসক, ৩৫ জন বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মী এবং ৯৭ জন সাংবাদিক রয়েছেন। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।