বরগুনায় পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের নয়ভাই জোড়াআগা ঠাকুরপাড়া গ্রামের রাখাইন সম্প্রদায়ের সুইতেন। ছয় মাসে তার শখের পেঁপে বাগান থেকে আয় হয়েছে কমপক্ষে ১ লাখ টাকার উপরে। তার সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই তার পরামর্শ নিয়ে পেঁপে বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। উদ্যোক্তা সুইতেন বলেন, আমি পুরোপুরি একা ও অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে পেঁপে বাগান করে ২০২২ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পেঁপে বিক্রি করে লাখ টাকা লাভ করেছি। আমার পেঁপে বাগানে এখনও যেই পরিমাণ পেঁপে আছে তা বিক্রি করেও কমপক্ষে আরও পঞ্চাশ হাজার টাকা আয় হবে বলে আশা করছি। এছাড়াও পেঁপে বাগানের পাশাপাশি অন্যান্য শাক, সবজি, বড়ইসহ মাছের ঘের রয়েছে তা দিয়েও আমার বছরে প্রায় ৩ থেকে চার লাখ টাকা আয় হয়। আমি এখন আমার পরিবার নিয়ে অনেক ভালো আছি। তিনি জানান, যারা বেকার আছেন তাদের প্রতি আহ্বান, অন্যের মুখাপেক্ষি না হয়ে বাড়ির পতিত জমিতে পেঁপে চারা রোপণ করে নিজের ভাগ্য ফেরান। জানা যায়, তিনি একটি প্রোজেক্টে চাকরি করতেন। তার পরিবারে বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোই চলছিল সংসার। তবে ২০২১ সালে ‘করোনা ভাইরাস’ এর কারণে প্রোজেক্টটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সুইতেনের চাকরিটা থাকে না। তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। বাড়িতে আসার কিছুদিন পর হঠাৎ বাবা মারা যায়! এরপর পুরোপুরি একা ও অর্থনৈতিক সংকটে পড়েন তিনি। এরপর ২০২২ সালে তার পতিত জমিতে পেঁপে বাগান করার সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তীতে ২০২৩ এর শুরুতে বগুড়া হতে উন্নত জাতের ২০০ গাছ লাগিয়ে দেখাশোনাসহ যত্ন নিতে থাকেন। এরপর পরিপূর্ণ হলে পেঁপেগুলো বাজারজাত করে বেশ ভালো মূল্য পেয়ে সুইতেনের মুখে সফলতার হাসি ফোটে! সফল এই পেঁপে চাষি বলেন, আমি বেকার ও শিক্ষার্থীদের পেঁপে চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। একজন শিক্ষার্থী যদি লেখাপড়ার পাশাপাশি মাত্র ২৫-৩০টি পেঁপে গাছ লাগায় এবং যত্ন করে। এই পেঁপে গাছ থেকেই প্রায় ১ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। স্থানীয় এতেন নামের একজন বলেন, আমি তার কাছ থেকে পেঁপে নিয়ে খাই এবং আমার আত্মীয় স্বজনদের বাসাতেও পাঠাই। তবে আমি এ বছর চিন্তা করেছি আমার পতিত জমিতে উন্নত জাতের চারা নিয়ে বাগান করব। তাহলে হয়তো নিজের জমিতে শখের বাগান থেকে ফ্রেশ পেঁপেটা খেতে পারব। বরগুনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (শস্য) এস এম বদরুল আলম বলেন, আমরা সুইতেনের বাগান পরিদর্শন করেছি। তার আগ্রহ, চেষ্টা ও ধারাবাহিকতায় আজ তিনি পেঁপে চাষে সফলতা অর্জন করেছেন। তাকে অনুকরণ করে অনেকেই পেঁপে চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। আমরা কৃষি বিভাগ সবসময়ই তার পাশে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। নতুন যারা আগ্রহ পোষণ করবে তাদের সাধুবাদ জানিয়ে অবশ্যই তাদের পাশে থেকেও কৃষি বিভাগ সবসময় সহযোগিতা করবে।