চট্টগ্রামে চলছে বিরামহীন নির্বাচনি প্রচারণা। সব দলের সব প্রার্র্থীই চষে বেড়াচ্ছেন মাঠ। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ‘আলোচনায় নেই’ এমন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনে। কোথাও দলীয় কিংবা জোটের প্রার্থীকে ছাপিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন প্রচারণায়। বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য চিন্তার ভাজ ফেলছেন এসব কম আলোচনার স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আবার কয়েকটি আসনে স্বতন্ত্ররা তৎপর নেই। এসব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা আছেন নির্ভার। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, আলোচনায় না থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কেবল কৌতূহল বাড়িয়েছেন ভোটারদের মধ্যে। নির্বাচনে তারা খুব বেশি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারবে না।
এদিকে নির্বাচনে ঘনিয়ে আসার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে চলছে দ্বন্দ্ব-সংঘাত। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পাল্টাপাল্টি সংঘাত বেড়েই চলেছে। এতে ভোটের পরিবেশ নিয়ে অনেকে নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। তবে পুলিশ বলেছে, যেকোনোভাবে তারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখবে। কোনভাবে পরিবেশ ক্ষুণ্ণ হতে দেবে না।
এদিকে ছোট দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে জোরদার প্রচারণা শুরু করেছেন। তাদের প্রচারণার দাপটে অনেক স্থানে হেভিওয়েট প্রার্থীরাও পিছিয়ে গেছেন। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জোটের প্রার্থী জাপা নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এই আসনেও ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী। তার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি মো. নাজিম উদ্দিন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সদলবলে নেমেছেন প্রচারণায়। দুজনকেই এলাকার ভোটার এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন আলোচনায় না থাকা প্রার্থী। কিন্তু জোরদার প্রচারণা চালানোর কারণে এসব প্রার্থীদের নিয়ে ভোটারের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল। এই আসনে মোট ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চট্টগ্রাম-৮ আসনে আলোচনায় ছিলেন না স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় কিষান চৌধুরী। প্রতীক বরাদ্দের পরও নির্বাচনি এলাকায় দেখা মেলেনি তার। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যস্ততা। তার পোস্টার ছেয়ে গেছে নির্বাচনি এলাকাজুড়ে। তবে এই আসনে বরাবরের মতো প্রচারণায় এগিয়ে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম। গত শুক্রবার নিজ নির্বাচনি এলাকা বোয়ালখালী ও মোহরা এলাকায় ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। এই আসনে জোট প্রার্থী জাপার সোলায়মান আলম শেঠের তৎপরতা থাকলে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের তেমন দেখা মিলছেনা তার প্রচারণায়। এই আসনে মোট ১০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন হঠাৎ করেই বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রচার প্রচারণা। প্রতীক বরাদ্দের পর তৎপরতা তেমন চোখে না পরায় অনেকের ধারণা ছিল তিনি সক্রিয় হবেন না। কিন্তু‘ গেল কয়েক দিন ধরে নিজ নির্বাচনি এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন তিনি। প্রচারণার লিফলেটে ছেয়ে গেছে নির্বাচনি এলাকাজুড়ে। তবে এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম আবদুল লতিফকে ভোটাররা শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবেই মনে করছেন। এই আসন থেকে তিনি চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দলের বড় অংশের নেতাকর্মীদের দেখা গেছে তার প্রচারণায় অংশ নিতে। তাই তাকে ভোটে পরাজিত করা কঠিন বলে মনে করছেন দলের সংশ্লিষ্টরা। এমনকি কোন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও তার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারবেন বলে মনে করেন না তারা।
চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী-পাহাড়তলী-হালিশহর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বা”চুর সাথে প্রচারণার শুরুতে তীব্র লড়াইয়ের আভাস মিলছে। তার আসনে সরগরম প্রচারণা চালা”েছন সাবেক সিটি মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ মোহাম্মদ মনজুর আলমের। আবার একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ ব্যাপক প্রচারণা চালা”েছন। তিনিও আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে তেমন আলোচনায় নেই। তবে প্রচারণার ক্ষেত্রে নির্ঘুম সময় পার করছেন তিনি। এ ব্যাপারে কথা বলতে শুক্রবার বিকালে তার মোবাইল ফোনে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলে অন্য আরেকজন রিসিভ করে নিজেকে তার সহকর্মী পরিচয় দেন। তিনি বলেন, ফরিদ ভাই এখন প্রচারণায় ব্যস্ত আছেন। রাতে কথা বলা যাবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী জোরদার প্রচারণায় নামলেও অনেক আসনে আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থীর এখনো নির্ভার আছেন। সেখানে স্বতন্ত্রদের খুব বেশি দৌড়ঝাঁপ নেই। হেভিওয়েট প্রার্থীর সঙ্গে পাল্লা দিতে চান না এসব আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এসব সংসদীয় আসনের মধ্যে অন্তত চারটি আসনে নির্ভার রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। আসনগুলো হ”েছ- চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান), চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া-বোয়ালখালী-আংশিক) চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া), চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা)।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে হেভিওয়েট আওয়ামী লীগ প্রার্থী তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি প্রতীক বরাদ্দের পর জোরদার প্রচারণায় ব্যস্ত আছেন। এই এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তেমন সক্রিয় নন। চট্টগ্রাম-৯ আসনেও আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এই আসনে স্বতন্ত্রদের তেমন তৎপরতা নেই। তার আসনে সাতজন প্রার্থী থাকলেও তিনি ছাড়া কেউ সক্রিয় নন প্রচারণায়। একই অব¯’া চট্টগ্রাম-১৩ আসনে। এই আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদের আসনে আরো প্রার্থী থাকলেও তৎপর নন স্বতন্ত্ররা। তিনিসহ এই আসনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা সাতজন।
নগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, বিভিন্ন আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করছেন। তাদের অনেকের দলে ভালো অব¯’ান আছে। তবে দলে এবং ভোটারদের মধ্যে আলোচনায় নেই- এমন প্রার্থীদের প্রচারণায় ভোটারদের মধ্যে কেবল কৌতূহল বাড়িয়েছে। তারা খুব বেশি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারবেন, বলে মনে হয় না।