কুষ্টিয়ার চার আসনেই এবার নৌকা বনাম আওয়ামী লীগের লড়াই হবে। কেউ কাউকে ছাড় দেবে না। ‘নৌকা হারলে আওয়ামী লীগ জিতবে, আওয়ামী লীগ হারলে নৌকা জিতবে।’ আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ায় ভোটের লড়াইয়ের সমীকরণ এভাবেই দাঁড় করিয়েছেন কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের ভোটার ওয়াজেদ আলী। এদিকে কুষ্টিয়ার ভোটারদের মধ্যে এলাকার উন্নয়ন নিয়েও রয়েছে অনেক প্রত্যাশা ও ক্ষোভ। তাদের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের আসন ছাড়া জেলার অন্য কোনো আসনে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়নি। এ কারণে সাধারণ ভোটারের অনেকে দ্বিধায় রয়েছেন, এবার কাকে বেছে নেবেন। কুষ্টিয়ায় জাতীয় সংসদের চারটি আসন। এর মধ্যে কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা ও মিরপুর) আসন মহাজোটের সঙ্গে সমঝোতায় ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই আসনে জাসদের হাসানুল হক ইনু নৌকা মার্কায় ভোট করছেন। তার পথের বাধা স্বতন্ত্র প্রার্থী মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন। তিনি ট্রাক প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন।
ইনুর পাশে নেই আওয়ামী লীগ। নৌকা নিয়ে ভোটের মাঠে থাকলেও জাসদের হাসানুল হক ইনুর পাশে নেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক কর্মী-সমর্থক। স্থানীয় কয়েকজন নেতাকর্মী বলেন, তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনকেই বেছে নিতে চান। চিথুলিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. রাজ্জাক বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক। তবে ভোট দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে আছেন। এই বিষয়ে হাসানুল হক ইনুর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাকে খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন বলেন, তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী। তাই ভোটারের দ্বিধার কোনো কারণ নেই।
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। ঈগল মার্কা নিয়ে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলীর ছেলে যুবলীগ নেতা পারভেজ আনোয়ার তনু। আনোয়ার আলী কুষ্টিয়া পৌরসভার পাঁচবারের নির্বাচিত মেয়র।
হানিফের আসনে লড়াইয়ের আভাস গতকাল সারা দিন কুষ্টিয়ার সব আসন ঘুরে ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কয়েকজন সাধারণ ভোটার জানালেন, নৌকার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উভয়ই আওয়ামী লীগের হওয়ায় কাকে ভোট দেবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না অনেকেই। কুষ্টিয়া সদরের ডাচ-বাংলা মোড়ে পান বিক্রেতা মো. মোমিন বলেন, পারভেজ তনু তার এলাকার। সেই হিসেবে তিনি তাকেই ভোট দিতে চান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একই এলাকার বিএনপি সমর্থক এক ব্যবসায়ী বলেন, তিনি ভোটের দিন দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। যদি ভোট সুষ্ঠু মনে হয়, তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে তার কোনো মন্তব্য নেই।
কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী ও খোকসা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ। তার বিপরীতে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সংসদ আব্দুর রউফ।
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে নৌকা প্রতীকে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আ ক ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ। ঈগল মার্কা নিয়ে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের আজীবন সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সংসদ মরহুম আফাজ উদ্দিন আহমেদ-এর বড় ছেলে প্রফেসর নাজমুল হুদা (পটল)। ট্রাক প্রতীক নিয়ে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী। তিনিও দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী ও খোকসা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জের আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রউফের জনপ্রিয়তা রয়েছে। এরই মধ্যে দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কয়েকবার সংঘাতে জড়ানোর তথ্য পাওয়া গেছে। হয়েছে পাল্টাপাল্টি মামলাও। খোকসার স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, এই আসনে নৌকা প্রতীক পেলেও ট্রাকের জনপ্রিয়তা সমানে সমান। তবে সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, যিনি স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছেন, তাকে আওয়ামী লীগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
কুষ্টিয়া-১ আসনেও নৌকার বিপক্ষে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন ঈগল মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের আজীবন সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সংসদ মরহুম আফাজ উদ্দিন আহমেদ-এর বড় ছেলে প্রফেসর নাজমুল হুদা (পটল)। তবে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা বলেন, প্রশাসন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যে কোনো মূল্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। সার্বিক বিষয়ে কুষ্টিয়ার সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান লাকী বলেন, দলীয় প্রার্থীর বাইরে যারা স্বতন্ত্র রয়েছেন, তারা অধিকাংশ আওয়ামী লীগ। একই দলের দুই প্রতিপক্ষ হওয়ায় কুষ্টিয়ায় নির্বাচনের আগে সংঘাত হতে পারে।