ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ আইন প্রয়োগে বিধিমালা ভেটিংয়ের অপেক্ষায়
কমবে ভূমি অপরাধ, দূর হবে ভোগান্তি : ভূমি সচিব
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ফারুক আলম
সরকারি কিংবা বেসরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করলে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে শাস্তি ও জরিমানার বিধান রেখে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের বিধিমালার খসড়া ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পন্ন করে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগে পাঠানো হবে। ভেটিংয়ে বিধিমালা যাচাই-বাছাইয়ে কোনো আপত্তি থাকলে, সেটি সংশোধনী আনতে ফের ভূমি মন্ত্রণালয়ে আসবে। এরপর ভূমি মন্ত্রণালয় বিধিমালা সংশোধন এনে আবারও ভেটিংয়ে পাঠাবে। ভেটিংয়ে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিধিমালা অনুমোদনের পরই কার্যকর হবে।
গতকাল রোববার ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিধিমালার অনুমোদন দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী। ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিধিমালা সম্পর্কে অবহিতকরণ শীর্ষক সভায় ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমানসহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপ¯ি’ত ছিলেন। ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিধিমালা দ্রুত প্রণয়নে সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদন জানান ভূমিমন্ত্রী।
জানা গেছে, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’র খসড়া বিধিমালা মন্ত্রী অনুমোদনের পর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় উপ¯’াপন করা হবে। মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদনের পর আইনের বিধিমালা কার্যকর হবে। তবে, এর আগে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত তথা পাসকৃত ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’ বিলটিতে রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিয়েছেন। ফলে এই আইনে পরিণত হয়েছে এবং ১৮ সেপ্টেম্বর গেজেটের মাধ্যমে সর্বসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশ করা হয়। কিš‘, একটি আইন আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর করতে সেই আইনের আলোকে বিধিমালা প্রণয়ন করতে হয়। কারণ আইনের বাস্তবায়ন, বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যাদানের জন্য এবং আইন অনুযায়ী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই বিধিমালা অনুসরণ করা প্রয়োজন। আইনে সবকিছুর ব্যাখ্যা ও প্রণয়ন পদ্ধতির বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ থাকে না।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশের ভূমির অপ্রতুলতার কথা মাথায় রেখে সরকার প্রথমবারের মতো ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের পর দ্রুতই বিধিমালার কাজটি বাস্তবায়নের দিকে নজর দিয়েছে। সেজন্য আইনের পর দ্রুতই বিধিমালার খসড়া অনুমোদন দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এর মাধ্যমে আগামীতে ভূমির জালিয়াতি, অবৈধ দখল, প্রতারণা ও অপরাধ দমন, পেশিশক্তি বা অস্ত্রের ব্যবহার রোধে নতুন ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ কার্যকর ভূমিকা রাখবে। জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও অধিগ্রহণকৃত জমির প্রকৃত মালিকদের ভোগান্তি কমাতে আইবাসের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধের ব্যব¯’া গ্রহণ করা হ”েছ। ক্যাশলেস স্মার্ট নামজারি ব্যব¯’ায় প্রতি মাসে ৪ লক্ষাধিক নামজারি মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হ”েছ। ভূমি মন্ত্রণালয়ের পুরো টিম নিয়ে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে চেষ্টা করেছি। আমার উদ্দেশ্য ছিল দক্ষতা, স্ব”ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে কাজ করে দেশের নাগরিকদের যথাযথ ভূমিসেবা দেওয়া।
সূত্র জানিয়েছে, ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইনের মূল নীতি হ”েছ ‘দলিলাদি যার, জমি তার’ এই ভাবনা থেকেই ভূমি অপরাধ আইন তৈরি করা হয়েছে। কেউ যত বছরই জোর করে কোনো জমি দখল করে রাখুক না কেন, যথাযথ দলিলাদি ছাড়া বেআইনি দখলদারের মালিকানা এই আইন কখনই স্বীকৃতি দেবে না। এই আইন প্রণয়নের পর জমি দখল-সংক্রান্ত হয়রানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। তবে আইনে অপরাধের ধরন ও প্রতিকার নিয়ে যথেষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ থাকে না, সেজন্য বিধিমালা প্রণয়নে জোর দেওয়া হয়েছে।
ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ আইন কার্যকর প্রয়োগে বিধিমালার খসড়ার বিষয়ে ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩’র সংশ্লিষ্ট বিধিমালা এমনভাবে প্রণয়ন করা হ”েছ, যাতে সংশ্লিষ্ট আইনটি কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়। মামলা প্রমাণ হওয়া সাপেক্ষে অবৈধভাবে দখলকৃত সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনাসহ ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩-এর বিভিন্ন ধারার কার্যকর প্রয়োগের জন্য বিধিমালায় স্পষ্টতা এবং ব্যাখ্যা থাকবে।
ভূমি সচিব আরো বলেন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর দিকনির্দেশনায় ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিধিমালা দ্রুত প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিবিড়ভাবে কাজ করে যা”েছন। এরই মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিধিমালার খসড়ার কাজ সম্পন্ন করেছে। এখন ভেটিংয়ের জন্য বিধিমালাটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সাধারণ মানুষ ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’-এর সুফল গ্রহণ করে ভূমিবিষয়ক ভোগান্তি থেকে দ্রুত পরিত্রাণ পেতে পারেন।